ঘটনা এক: রাত ৮টা নাগাদ সুকনা যাবেন বলে কোর্ট মোড় থেকে সিটি অটোয় উঠেছিলেন সোনম লামা। দার্জিলিং মোড়ে গিয়ে অটোর চালক সব যাত্রীকে নামিয়ে দিলেন। কেউ বোঝার আগেই চালক অটো ঘুরিয়ে চম্পাসারির দিকে চলে গেলেন। ট্রাফিক পুলিশকে বলেও কোনও লাভ হল না। শেষ পর্যন্ত রাত ৯টা পর্যন্ত বসে থেকে পুলিশের সাহায্যে আর একটি অটো ধরে সোনম দেবী সুকনায় ফেরেন।
ঘটনা দুই: নৌকাঘাট থেকে কোর্ট মোড়ে রোজই যাতায়াত করেন বাতাসি বর্মন। মাঝেমধ্যেই এয়ারভিউ মোড়ে তাঁকে নামিয়ে অটোচালক ফিরে যান।
ঘটনা তিন: সুকনার উপকণ্ঠে এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়াদের মাঝেমধ্যেই হয়রানি করেন একশ্রণির অটো চালক। বহুবার পুলিশে জানিয়েও লাভ হয়নি বলে অনেকের দাবি।
সংক্ষেপে এটাই হল সিটি অটোর নিত্য যাত্রীদের অভিজ্ঞতা। সিটি অটো চালকদের একাংশের মর্জিমাফিক এই আচরণের ফলে শহরে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। বাম আমলেও সিটি অটোর দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পারেনি পুলিশ-প্রশাসন। তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেও পুলিশ-প্রশাসন কিছু করতে পারছেন না কেন তা নিয়ে জল্পনা সব মহলেই। যাত্রীর একাংশের অভিযোগ, তৃণমূলের এক নেতা অটো চালক সংগঠনের একাংশের কর্তৃত্ব কায়েম করে পুলিশ-প্রশাসনকে বাধা দিচ্ছেন। ফলে, কমছে না সিটি অটোর দৌরাত্ম্য। পুলিশ-প্রশাসনও বিধিভঙ্গ দেখেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। |
চালকদের একাংশের ঔদ্ধত্য এতই বেড়েছে যে সম্প্রতি এয়ারভিউ মোড়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের কাছে এসডিওর গাড়িতে ধাক্কা মারে একটি সিটি অটো। বর্তমান এসডিও রচনা ভকত গাড়িতে ছিলেন না। তাঁর চালক প্রতিবাদ করলে অটো চালক তাঁকে ধমকে কথা বলেন। এমনকী, সিটি অটোর চালককে বলতে শোনা যায়, “কী করবেন! ওই রকম লালবাতির গাড়ি অনেক দেখেছি। কিছু করতে পারবেন না আপনি।”
বর্তমানে শিলিগুড়ি শহরে ১৩টি অটো চলাচলের রুট রয়েছে। এ ছাড়া শাখা রুট রয়েছে ৫২টি। শহরে প্রায় ১১৫০ টি অটো রয়েছে। আশেপাশের অঞ্চল মিলিয়ে শিলিগুড়িতে হাজার দুয়েক সিটি অটো চলাচল করে। একাধিক অটোর ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই বলে অভিযোগ। কিন্তু, পরিবহণ দফতরের একাংশের যোগসাজশের ফলে ভাঙাচোরা অটোগুলি বিপজ্জনক ভাবে চলছে বলে অভিযোগ।
শিলিগুড়ি সিটি অটো অপারেটর্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক নির্মল সরকার বলেন,“যাত্রীদের নানা সমস্যা আছে জানি। আমাদের কথাও ভাবতে হবে। সুনির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ পেলে আমরাও ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।” কিন্তু, এখনও পর্যন্ত ক’জন সিটি অটো চালকের বিরুদ্ধে তাঁরা এই ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন, সেই তথ্য চাইলে নির্মলবাবু অবশ্য তা দিতে পারেননি।
শিলিগুড়ির ডিসি (ট্রাফিক) জয়ন্ত পাল শহরে সিটি অটোর সমস্যার কথা জানেন। কিন্তু, সমস্যার সমাধান কেন হচ্ছে না তার কোনও স্পষ্ট উত্তর তাঁর কাছ থেকে মেলেনি। ডিসি-র মন্তব্য, “বিধি ভেঙে চালানো হলে জরিমানা করি। ঠিকঠাক রুটে সেগুলি চলছে কি না দেখার কথা পরিবহণ বিভাগের।” শিলিগুড়ির পরিবহণ দফতরের বেশ কিছু ইন্সপেক্টরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের একাংশ। এসডিও অফিসের কর্মীদের একাংশও সিটি অটোর দৌরাত্ম্য রুখতে পরিবহণ দফতর কেন উদাসীন তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ক্ষুব্ধ কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, কোনও গোপন বোঝাপড়া রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার। শিলিগুড়ির এআরটিও রাজেন সুনদাস বলেন, “সিটি অটোর সমস্যা সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। তাই বোঝাপড়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। শীঘ্রই বেপরোয়া সিটি অটোর বিরুদ্ধে আমরা অভিযানে নামব।” এরই পাশাপাশি, রুট নির্দিষ্ট করতে রুট নম্বর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
|