এখনও এক পয়েন্ট দরকার। চার্চিল শিবির যেন তার অপেক্ষায় নেই। মোহনবাগানকে হারিয়ে রবিবারই হেনরি, ডেঞ্জিল, সুনীল ছেত্রীরা সাম্বার তালে পা মেলালেন। গেয়ে উঠলেন, ‘ওলা...ওলা...’!
গোয়ার চার্চিল ব্রাদার্স আর সুদূর ব্রাজিল তখন বাংলার কল্যাণী স্টেডিয়ামে মিলেমিশে একাকার!
ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে মাঠের মধ্যেই আই লিগ খেতাব জয়ের আগাম উৎসবে মাতলেন সুভাষ ভৌমিকের ছেলেরা। ড্রেসিংরুমে ফিরেও চলল হৈ-হুল্লোড়। শ্যাম্পেন নেই তো কী! বোতলের জলেই একে অপরকে ভিজিয়ে দিলেন উচ্ছ্বাসে। সবার সামনে নির্লিপ্ত থাকা সুভাষও সুনীলদের চাপে পড়ে ড্রেসিংরুমে আনন্দে মেতে উঠলেন।
তবে ওই এক বারই। বাকি সময়টা সব আবেগ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন চার্চিল টিডি। সাফল্যের পুরো কৃতিত্বটাই দিলেন ফুটবলারদের। যেন সন্ন্যাসীর মতো ভাবলেশহীন। “এই সাফল্য তো আমার নয়। ফুটবলারদের। ওরা খেলেছে। রেজাল্ট পেয়েছে। আমার কোনও কৃতিত্ব নেই।” ম্যাচের পর বলছিলেন ময়দানের ভোম্বল। তবে সন্দীপ নন্দীরা মাঠ ছাড়ার আগে বলে গেলেন, “এই সাফল্য এসেছে ভৌমিক স্যরের জন্য। উনি আমাদের পাশে না থাকলে আই লিগে সেরা হওয়া সম্ভব ছিল না।”
চার্চিল প্রধান আলেমাও চার্চিলও গোয়ার পারিবারিক ক্লাবের বাঙালি টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পরের মরসুমে সুভাষকে চার্চিল দায়িত্বে রাখতে চায় না বলে যে খবর উড়ছে, সেটাও অস্বীকার করলেন আলেমাও। “পরের মরসুমে আমরা সুভাষ ভৌমিকেই আস্থা রাখছি। ওঁর সঙ্গে ফুটবলারদের সম্পর্ক দারুণ। ওকে সরানোর ভাবনাই নেই আমাদের। তবে উনি নিজে সরে গেলে আমাদের কিছু করার নেই।”
এর আগে দু’বার ইস্টবেঙ্গলকে জাতীয় লিগ দিয়েছেন সুভাষ। তবে এ বার চার্চিলকে (কার্যত) চ্যাম্পিয়ন করাই কঠিনতম বলে মনে করছেন। “বেলাল, আক্রমরা চলে যাওয়ায় যে ভাবে দলটা মরসুমের মধ্যে বারবার ভেঙেছে, আবার সেটা তৈরি করতে হয়েছে, সেই কাজটা সহজ ছিল না। বেটো দু’বার চোট পাওয়ায় ভুগতে হয়েছে,” বলে দিলেন দু’টো ভিন্ন দলের কোচ হিসেবে জাতীয় লিগ জেতার রেকর্ড গড়তে চলা সুভাষ।
রবিবারের জয়ের নায়ক, চার্চিলের ৩৮ বছর বয়সি বাঙালি গোলকিপারের গলায় আবার প্রতিজ্ঞার পাশে প্রতিজ্ঞা। সন্দীপ নন্দী বললেন, “ইস্টবেঙ্গল আমাকে বাতিল করে দিয়েছিল, সেই জবাবটা গোটা বছর ধরেই দিয়েছি। এ দিন মোহনবাগানও জবাব পেল।” আর ডেঞ্জিল যেন ফাঁস করলেন চার্চিলের সাফল্যের রসায়ন। “টিম স্পিরিট, জেতার মরিয়া ভাব আর ভৌমিক স্যরের ‘নো টেনশন থিওরি’। এটাই আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি।” |