রবিবার ছুটির দিনটা গোতিরা কীভাবে কাটাল, জানি না। তবে বিকেলে মুম্বই-দিল্লি ম্যাচটা দেখে থাকলে ওরা নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছে যে, বুধবার মুম্বইকে হারানো এভারেস্টে চড়ার মতো কোনও কঠিন কাজ নয়।
বীরেন্দ্র সহবাগ (৫৭ বলে ৯৫, ১৩টা চার, দুটো ছয়) রবিবাসরীয় কোটলায় যে ইনিংসটা খেলল, সেটা শুধু মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে ধ্বংসই করল না, নাইটদের সামনেও বেশ কয়েকটা দরজা খুলে দিল। পরের ম্যাচ ইডেনে নাইটদের বিরুদ্ধে নামার আগে সচিনদের আত্মবিশ্বাসে বিরাট ধাক্কা লাগল। প্লাস মুম্বই বোলিংয়ের হালটাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
এখন প্রশ্ন, কেকেআর কি এই সুযোগটা নিতে পারবে? শুরু থেকে মুম্বই বোলারদের পাল্টা মার দিয়ে চাপে রাখার কাজটাই বা কে করবে?
আমার তো দু’টো নাম মাথায় আসছে। এক, ইউসুফ পাঠান। আগের ম্যাচে ওপেন করতে নেমে ইউসুফ যে ভাবে ছন্দে ফেরা শুরু করেছিল, তার পর আমার মনে হয় বুধবারও ওকে দিয়েই ওপেন করানো উচিত। ওর ব্যাটে বল লাগলে শুরুতে রান রেটটা অনেক বেড়ে যাবে। দুই, ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ওকে নামানোর সুযোগই পাচ্ছে না গম্ভীররা। কিন্তু আমার মনে হয় ইডেনে ম্যাকালামকে নামানোর ফাটকাটাও গম্ভীরকে খেলতে হবে। কালিসকে যদি একান্ত বসানো না যায়, তা হলে মর্গ্যানকেই বসাও। কিন্তু তিন নম্বরে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ এক জন লাগবেই। যেটা কালিস বা মর্গ্যান বা মনোজ কোনও ভাবেই হবে না। |
টিভি-তে দেখছিলাম, ম্যাচ শুরুর আগে ভিভিয়ান রিচার্ডস পেপ টক দিচ্ছে দিল্লির টিমকে। সেই পেপ টক-এর জন্যই কিনা জানি না, তবে বীরু এ দিন যে ইনিংসটা খেলল সেটা ভিভকেই মনে পড়ায়। মুম্বই আরও সুবিধা করে দিয়েছিল মিচেল জনসনকে বাইরে রেখে। ১৪০ কিলোমিটার গতিতে জনসন বলটা ভিতরে আনতে পারে। যেটা শুরুতে সহবাগকে সমস্যায় ফেললেও ফেলতে পারত। বাকিরা মানে মুনাফ, বুমরাহ, হরভজন এমনকী মালিঙ্গাও তো স্রেফ দুধে ভাতে হয়ে গেল বীরুর খুনে ব্যাটিংয়ের সামনে। সঙ্গে জয়বর্ধনেও ভাল খেলায় দু’জনে ওপেনিং জুটিতে ১৬ ওভারে ১৫১ তুলে দিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেয়।
মুম্বইয়ের সমস্যাটা হল ওরা দশ জনে খেলছে। পন্টিং ওপেন করেও কিছু করতে পারেনি আর এ দিন তো ব্যাট করতেই নামল না। একটা বিদেশি স্লট আটকে রাখছে ও। ইডেনে পন্টিং খেলা মানে কেকেআরের বিরাট সুবিধা। ক্যাপ্টেন ফর্মে না থাকা মানে দল এমনই চাপে থাকে, তার উপর এখানে তো বিদেশি কোটার ব্যাপারটাও আছে।
সচিন এ দিন ৪৭ বলে ৫৪ করল ঠিকই, কিন্তু প্রথম ছ’ওভারে রান রেট একদমই বাড়াতে পারেনি। উঠল মাত্র ২৪ রান। তাও দু’উইকেট হারিয়ে। অথচ দিল্লি বোলিংয়ে ছিল বলতে ইরফান-উমেশের পেস, আর নাদিম-ফান ডার মারওয়ের বাঁ হাতি স্পিন। মর্নি মর্কেলও খেলেনি এ দিন। |
মুম্বইয়ের দুর্বলতা |
১) ওপেনিং জুটি বলে কিছু নেই। শুরুতে রান উঠছে না। সচিনও রান রেট বাড়াতে পারছে না।
ফায়দা তোলার উপায়: শুরুতে নারিন-সচিত্রকে এনে চাপ বাড়াও। রান আটকাবে। উইকেটও পড়তে পারে।
২) অধিনায়কের অফ ফর্ম। টিম মারাত্মক চাপে।
ফায়দা তোলার উপায়: পন্টিংদের অস্ট্রেলিয়ারই মন্ত্র ছিল, অধিনায়ককে চাপে রাখো, টিম দুমড়ে যাবে। এ বার পন্টিংকে এই ওষুধটা ফেরত দাও।
৩) মিডল অর্ডারে ধারাবাহিকতার অভাব
ফায়দা তোলার উপায়: দীনেশ কার্তিক আর রোহিত শর্মার জন্য সেরা দুটো বোলার রাখো। এই উইকেট দুটো চট করে পেয়ে গেলে রান ওঠা আটকে যাবে।
৪) মালিঙ্গা-হরভজনরা ফর্মে নেই
ফায়দা তোলার উপায়: শুরু থেকেই আক্রমণ করতে হবে। এক বার ওদের চাপে ফেললে মুম্বইয়ের বাকি বোলারদের পক্ষে রান আটকানো কঠিন হবে। |
|
যা দেখে মনে হচ্ছে, মুম্বইকে চেপে ধরার জন্য কেকেআরের ‘অপারেশন সিক্স’-এ যাওয়া উচিত। অর্থাৎ ফিল্ডিংয়ের সময় প্রথম ছ’ওভারে মুম্বই ব্যাটিংকে আক্রমণ করে ওদের ভিত নড়িয়ে দাও। আর ব্যাটিংয়ের সময় প্রথম ছ’ওভারে পাঠান-ম্যাকালামকে লেলিয়ে দিয়ে যতটা পারো রান রেট বাড়িয়ে রাখো।
ইডেনে মনে হয় গম্ভীর স্লো উইকেটের স্ট্র্যাটেজিতেই খেলবে। সেখানে শুরুর দিকে নারিন-সচিত্রের স্পিনে ঝামেলায় পড়ে যাবে মুম্বই। মনে আছে, রাজস্থানের অখ্যাত অফ স্পিনার চান্ডিলা কী ভাবে সচিন-পন্টিং দু’জনকেই আউট করে দিয়েছিল ক’দিন আগে? এ দিন মুম্বই ইনিংসকে ১৬১ রানে পৌঁছে দিয়েছিল যে ছেলেটা, সেই রোহিত শর্মাকেও (৪৩ বলে ৭৩) কিন্তু ভাল স্পিনাররা ঝামেলায় ফেলে দিতে পারে।
সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, সহবাগের ফর্মে ফেরাটা দিল্লির যতটা না উপকার করল, তার চেয়ে বেশি উপকার করে গেল নাইট রাইডার্সের। |