বস্টন ম্যারাথনে হামলার কারণ নিয়ে গোয়েন্দারা যখন অথৈ জলে, এক মাত্র জীবিত অভিযুক্ত জোহার জারনাহেভ তখন কথা বলার শক্তি হারিয়েছে। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। শুক্রবার রাতে ফ্রাঙ্কলিন স্ট্রিটের একটি বাড়ির পিছনে নৌকোর মধ্যে থেকে খোঁজ মেলে জোহারের। পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ গুলিযুদ্ধের পর যখন সে আত্মসমর্পণ করে, জামাকাপড় রক্তে ভিজে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় বেথ ইজরায়েল ডিয়াকোনেস মেডিক্যাল সেন্টারে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জোহারের দেহে দু’জায়গায় গুলির ক্ষত রয়েছে। একটা গুলি বার করা হয়েছে তার ঘাড়ের কাছ থেকে। আঘাতের ধরন দেখে তাঁদের অনুমান, ধরা পড়ার আগে জোহার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিশদ কেউই কিছু বলেননি। নাম গোপন রেখে এক গোয়েন্দাকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, “নাকে নল দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে জোহারকে। দেওয়া হয়েছে কড়া ঘুমের ওষুধও। গলার ক্ষতটা মারাত্মক হওয়ায় ও হয়তো কথা বলতে পারবে না।” ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর ডেভাল প্যাট্রিকের কথায়, অভিযুক্তের আঘাত গুরুতর ঠিকই, কিন্তু অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল।
এ দিকে ধৃত জোহার ও তার দাদা ট্যামারলনের কোনও জঙ্গি-যোগ ছিল কি না, সব দিক খতিয়ে দেখছে এফবিআই। গত কয়েক বছরে একাধিক বার রাশিয়া গিয়েছিল ট্যামারলেন। ২০১২-র শুরুর দিকে দাগেস্তানে গিয়ে সে ছ’মাস ছিলও। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত চেচনিয়ার প্রতিবেশী এই দাগেস্তান। ২০১১ সালে এক বিদেশি রাষ্ট্র (সম্ভবত রাশিয়া) মার্কিন তদন্তকারী সংস্থাকে অনুরোধ করে, ট্যামারলনের সঙ্গে উগ্রপন্থী আল-কায়দার যোগ আছে কি না, তা যেন পরীক্ষা করে দেখা হয়। ট্যামারলন ও তার পরিবারের অন্যদের জেরা করেও সে সময় এ রকম কোনও যোগসাজশের প্রমাণ পাননি গোয়েন্দারা।
দাগেস্তান থেকে ফিরে এসে ইউটিউবে একটা পেজ খুলেছিল ট্যামারলন। গত ছ’মাস ধরে সেখানে একের পর এক উগ্রপন্থীর ভিডিও আপলোড করে সে। তার মধ্যে একটায় দেখা যায় চেচনিয়ার আল কায়দা নেতা আব্দুল অল হামিদ অল জুহানিকে। এক বার সন্দেহ হওয়ার পরেও কেন ট্যামারলনের উপর নজর রাখা হয়নি, এখন উঠছে সেই প্রশ্ন। অনেকেরই আফশোস, এফবিআই আর একটু তৎপর হলে হয়তো এড়ানো যেত ম্যারাথন বিস্ফোরণের মতো ঘটনা।
জোহার ধরা পড়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও অবশ্য ঘোর কাটেনি তার বন্ধু-বান্ধবদের। যে ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সে পড়াশোনা করত, বিস্ফোরণের পরের দিন হালকা মেজাজেই সেখানে দেখা গিয়েছিল জোহারকে। বুধবার জিমে সময় কাটানোর পর বন্ধুদের সঙ্গে পার্টিও করেছিল সে। টিভিতে সন্দেহভাজনদের ছবি দেখানোর সময় এক বন্ধু ঠাট্টা করে বলেছিল, “জোহারের সঙ্গে মুখের কী রকম মিল আছে না!” জোহার ধরা পড়ার পর চ্যানেলে চ্যানেলে যখন ব্রেকিং নিউজ, এই মুখগুলোই মাথা নেড়ে চলেছে নাগাড়ে। “না না, এ কিছুতেই জোহার হতে পারে না।”
|