অবশেষে পুলিশের জালে বস্টন হামলার দ্বিতীয় চক্রী জোহার জারনাহেভ। গোটা দিন ধরে শহর স্তব্ধ করে রেখে, বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি চালানোর পর শেষ পর্যন্ত একটি বাড়ির পিছনে রাখা নৌকোর মধ্যে খোঁজ মিলল উনিশ বছরের জোহারের।
গত পাঁচ দিন ধরে কার্যত ঘুম ছুটে গিয়েছিল বস্টনবাসীর। সোমবার ম্যারাথন বিস্ফোরণের আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠার আগেই বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয় গুলির লড়াই। সোমবারের হামলায় মূল অভিযুক্ত জোহার ও তার দাদা ট্যামারলন গাড়ি ছিনতাই করে পালাচ্ছে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের ধাওয়া করে বিশাল পুলিশ বাহিনী।
দু’পক্ষের প্রবল গুলির লড়াইয়ে মারা যায় বছর ছাব্বিশের ট্যামারলন। দাদাকে ওই অবস্থায় ফেলে রেখেই পালিয়ে যায় জোহার। শুক্রবার ভোরবেলা বস্টনের পুলিশ কমিশনার সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, আশপাশেই কোথাও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে লুকিয়ে রয়েছে এক মারাত্মক জঙ্গি।
কমিশনারের এই ঘোষণার পর থেকেই ওয়াটারটাউন, নিউটাউন, ওয়ালথাম, কেমব্রিজের চেহারা বদলে যায় রাতারাতি। সন্ত্রাস হানা ঠেকাতে বস্টনবাসীকে রাস্তায় না নামতে অনুরোধ করেছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারা। বাতিল হয়ে যায় এমআইটি, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, শহরের সবক’টি বড় অনুষ্ঠানও। চলেনি বাস, ট্রেন, সাবওয়ে কোনও কিছুই। সুনসান রাস্তাঘাট দেখে মনে হতেই পারে, কাছে কোথাও যুদ্ধ চলছে। অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছে সেনা। আকাশে ক্রমাগত চক্কর কাটছে সেনাবাহিনীর বিমান। প্রত্যেকটা বাড়িতে ঢুকে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। |
শুক্রবার রাতে নৌকোয় ঢোকার মুখে ক্যামেরাবন্দি হয়েছিল
জোহার। শনিবার প্রকাশ্যে আসে ছবিটি। ছবি: এএফপি |
তবে দিনভর এত কাণ্ড করেও কোথাও কোনও হদিস পাওয়া যায়নি জোহারের। শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বাসিন্দাদের বাইরে বেরোনোর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন গর্ভনর ডিভাল পেট্রিক।
সারা দিনটা বাড়িবন্দি হয়ে কাটানোর পর বিকেলে বাইরে বেরিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কলিন স্ট্রিটের বাসিন্দা ডেভিড হ্যানবেরি। বেরোতেই নজরে পড়ে বাড়ির পিছন দিকে রাখা নৌকোটা। ঢাকনাটা যেন ছেঁড়া মনে হচ্ছে, কী করে এমন হল দেখতে এগিয়ে যান ডেভিড। ঢাকনা সরাতেই চোখ কপালে ওঠে তাঁর। রক্তের স্রোতের মধ্যে কেউ যেন কুঁকড়ে শুয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে বাইরে এসে পুলিশে খবর দেন ডেভিড। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়িটা ঘিরে ধরে পুলিশের বিশাল বাহিনী। খোঁজ মেলার পরও অবশ্য জোহারকে ধরা যায়নি এত সহজে। এফবিআইয়ের এক অফিসার জানান, প্রায় ৩০ রাউন্ড গুলি চলে দু’পক্ষের মধ্যে। শেষে রোবটের সাহায্যে নৌকোর পুরো ঢাকনা সরিয়ে ধরা হয় জোহারকে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে সারা শরীর। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তার।
জোহারের ধরা পড়ার প্রথম খবর আসে টুইটারে। বস্টন পুলিশ টুইট করে জানায়,“পেয়েছি। খোঁজা শেষ হল। অভিযুক্ত আমাদের হেফাজতে।” খবর ছড়িয়ে পড়তে শুধু কয়েক মুহূর্তের অপেক্ষা। নিমেষে উৎসবের মেজাজে রাস্তায় নেমে পড়েন বস্টনের মানুষজন। হাততালি দিতে দিতে কেউ কেউ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন, আমেরিকা, আমেরিকা বলে। কেউ বা আবার আনন্দে মেতেছেন দেশের পতাকা নিয়েই। বস্টন ম্যারাথনের হামলাকারী পাকড়াও হয়েছে খবর পেয়ে বিবৃতি দেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গোয়েন্দা বাহিনীর প্রশংসা করে প্রেসিডেন্ট বলেন, “জঙ্গিদের চক্রান্ত ব্যর্থ করা গিয়েছে। তবে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর অমিল। যে দেশে তারা বড় হল, সেখানেই কী ভাবে তারা হামলা চালাল, তাদের পিছনে কারোর মদত আছে কি না তদন্ত করে দেখা হবে সব কিছুই।”
গোয়েন্দা সূত্রে খবর গত বছরের গোড়ার দিকে জোহারের দাদা ট্যামারলন রাশিয়ায় গিয়েছিল। সেখানেই থাকে তাদের বাবা-মা। ছ’মাস সেখানে কাটিয়ে দেশে ফেরে সে। তখনই কোনও জঙ্গি সংগঠনের প্রভাব ট্যামারলনের উপর পড়েছিল কি না, পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে তা-ও। ছোট ভাই জোহারের মতো বন্ধুমহলে জনপ্রিয়, মেধাবী তরুণ কী ভাবে এই পথ বেছে নিতে পারে, উঠছে সেই প্রশ্নও। খালি উত্তর জানা নেই।
|