সুপুরুষ চেহারার জোহার দারুণ জনপ্রিয় ছিল বন্ধুমহলে। এতটাই বন্ধুবৎসল ছিল সে, বিপদে-আপদে অনেকেই ছুটত তার কাছে।
আর বড় ভাই ট্যামারলন ছিল বক্সার। তিন বছর আগে ভালবেসে বিয়ে করেছিল এক মার্কিন তরুণীকে। ছোট্ট একটা মেয়েও আছে তাদের।
এ হেন দুই ভাইকে বস্টন বিস্ফোরণের দুই সন্ত্রাসবাদী বলে কল্পনাও করতে পারছেন না বন্ধুবান্ধব-প্রতিবেশীরা। তবে তাঁদের বাবা-মা এখনও বলছেন, “সবটাই মার্কিন গোয়েন্দাদের সাজানো।”
রোড আইল্যান্ডে বাড়ি বছর চব্বিশের তরুণী ক্যাথরিন রাসেলের। আজ সকালে উঠে প্রতিবেশীরা দেখেন বাড়িটাকে ঘিরে রেখেছে এফবিআই। কানাঘুষো শুনতেও পান বস্টন-কাণ্ডের দুই অভিযুক্তকে চিনত ক্যাথরিন। কিন্তু তখনও কেউ জানতেন না, সত্যিটা কী। তবে কিছু ক্ষণ পরে প্রকাশ্যে এল বাস্তব। জানা গেল, ক্যাথরিন ট্যামারলনের স্ত্রী।
ট্যামারলনকে বিয়ে করার জন্য ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন ক্যাথরিন। জাহারা, তাদের তিন বছরের মেয়ে। রোড আইল্যান্ডের এই বাড়িটা ক্যাথরিনের মা-বাবার। প্রায় রোজই এখানে দেখা যেত ট্যামারলনকে। মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতে ক্যাথরিনের মা জুডিথ আপন মনে ঘাড় নাড়লেন। তার পর নিচু স্বরে বললেন, “কিচ্ছু বলার নেই। ও যে এত ভয়ানক কিছু করতে পারে, এটাই ভেবেই আমাদের মন ভেঙে গিয়েছে। আমরা আসলে ওকে চিনতেই পারিনি।”
স্কুলে থাকতে প্রচুর পুরস্কারও পেয়েছিল। জোহারের স্কুলের কোচ পিটারের কথায়, “দারুণ ছেলে ছিল।” পিটারের থেকেই জানা গেল, ২০১১ সালে স্কুল পাশ করার সময় কেমব্রিজ থেকে ২৫০০ ডলার স্কলারশিপও পেয়েছিল জোহার।
প্রায় এক দশক ধরে আমেরিকায় রয়েছে দুই ভাই। জোহার সে দেশের পূর্ণ নাগরিক। ২০০৯ সালে এক বার বান্ধবীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার জন্য পুলিশি ঝামেলায় সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ট্যামারলন। তাই গ্রিন কার্ড হাতে থাকলেও পূর্ণ মার্কিন নাগরিকত্ব পাননি তিনি। দুই চেচেন ভাইয়ের বাবা-মা অ্যাঞ্জোর ও জুবেইদাত এখনও বলছেন, তাঁদের ছেলেরা নিষ্পাপ।
আজ রাশিয়া থেকে ফোনে রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন অ্যাঞ্জোর। বলেন, “ওরা কখনও এ কাজ করতে পারে না। কখনও না, কখনওই না।” তিনি আরও বলেন, “ওরা যদি আমার ছোট ছেলেটাকেও মেরে ফেলে, তা হলে পরিষ্কার হয়ে যাবে, এটা পুরোপুরি অন্তর্ঘাত। সব পুলিশের কাজ।” অ্যাঞ্জোর জানিয়েছেন, ম্যারাথনের পরের দিনও ফোন করেছিল ছেলেরা। বলেছিল, ‘ভাল আছি বাবা।’ জানিয়েছেন, বিচার চাইতে আমেরিকায় আসবেন তিনি। আবেগ ধরা পড়ল মায়ের গলাতেও, “আমি ওদের বড় করেছি, আমি জানি, ওরা নির্দোষ।” |