বদলার ম্যাচ জিতলেন। তবু তাঁর গলায় গরগরে রাগ।
চিপকের যন্ত্রণামুক্তি ঘটল ইডেনে। উঠল আইপিএল ফাইনালে হারের শোধ। কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই। বরং খোঁজ মিলল নতুন যন্ত্রণার। যার নাম দেশ!
পোস্ট-ম্যাচ অনুষ্ঠান সবে শেষ হয়েছে। টিভি বিশেষজ্ঞরা শুরু করে দিয়েছেন গম্ভীরদের হারের পোস্টমর্টেম। সিএবি কর্তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ধোনি। কেউ আন্দাজও পাননি, জেতার পরেও এমন বিষোদ্গারের প্রেক্ষাপট তৈরি হতে পারে। ইডেন উইকেট নিয়ে অভিযোগ নেই। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি মনে করেন, ঘরের মাঠে র্যাঙ্ক টার্নার বানিয়ে ভুল কিছু করেনি কেকেআর। তাঁর আপত্তি অন্য জায়গায়। সিএবি কর্তাদের সামনে তাঁর প্রকাশ্য আক্ষেপ, “বোর্ডের কাছে আমি যখন এই উইকেট চাই, পাই না। তা হলে কি ধরে নেব? দেশের আগে এখন ক্লাব?”
ভারত অধিনায়কের নতুন জেহাদ সুদূরপ্রসারী হবে কি না, সময় বলবে। কিন্তু শনিবারের ইডেনে এমন একটা অশনিসঙ্কেতের সন্ধান পাওয়া গেল, যার অর্থ বুঝতে বিশেষ সময় খরচের দরকার নেই। |
সে দিনের বিজয়ী আজ বিজিত। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
সোজা কথা সহজ ভাবে বলাই ভাল। নাইটদের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের এপিসোডের যদি ম্যাচের পর ম্যাচে এ ভাবেই রিপিট টেলিকাস্ট চলতে থাকে, পেপসি আইপিএলে প্লে-অফের আশা বোধহয় ছেড়ে দেওয়াই ভাল। বাকি পড়ে দশ ম্যাচ। বাইরে সাতটা। ঘরে তিনটে। তবে ঘরে-বাইরে আর কী-ই বা তফাত! ইডেনের অর্ডারি পিচেও এখন গম্ভীরের মুখ গম্ভীর হচ্ছে। ট্রেভর বেলিস কম্পিত কণ্ঠে বলে ফেলছেন, “প্লে-অফের রাস্তা বেশ কঠিন হয়ে গেল।” রাতে কোনও কোনও নাইট কোচের তত্ত্ব সমর্থনও করলেন। বাকি দশের মধ্যে অন্তত সাতটা ম্যাচ না জিতলে প্লে-অফ অনিশ্চিত।
এবং বর্তমান পারফরম্যান্সের প্রেক্ষাপটে নাইটদের আকাশ কলকাতার চেয়ে কম মেঘলা নয়! যে টিমের ৪৬-০ অবস্থা থেকে ৯০-৮ হয়ে যায়, যে টিমের সাড়ে ন’কোটির ক্রিকেটার এমন ভাবে রান আউট হন যা কোনও দিন গলি ক্রিকেটেও অমার্জনীয়, যে টিমের ব্যাটিংয়ের ‘ডার্টি পিকচার’ ঘ্যানঘ্যানে মেগাসিরিয়ালের মতো ম্যাচের পর ম্যাচ চলতেই থাকে, যে টিমকে একশো তুলতে একশো একাশি বার হেঁচকি ওঠে, তাদের নিয়ে আর কত স্বপ্ন দেখবেন? ইডেনে আজ অর্ধেক কলকাতাই বলতে গেলে উঠে এসেছিল। পঁয়ষট্টি হাজারের শব্দব্রহ্ম অসীম নীরবতায় পাল্টে যেতে লাগল ঠিক সাড়ে তিন ঘণ্টা। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো এক-একটা ক্লিপিং।
ইউসুফ পাঠান আচমকা ব্রেক কষে মাঝপিচে দাঁড়িয়ে পড়ছেন! রান কমপ্লিট করতে হবে, ব্যাপারটাই যেন মগজ থেকে উধাও। দেখছেন, বলটা ফিল্ডার ধরল কি না! দেখেশুনে ছুটলেন যখন, ব্রাভোর ডিরেক্ট থ্রো-এ উইকেট ভেঙে চুরমার। |
গম্ভীরকে কাট করতে দেখেই থার্ড ম্যান থেকে দৌড় শুরু করলেন মাইক হাসি। কয়েক সেকেন্ড পরে দুর্ধর্ষ ক্যাচ।
অধিনায়কের সঙ্গে ক্লাস করে অনেক কষ্টেসৃষ্টে মনোজ তিওয়ারি এ বার ১৮ বলে ১৩! ‘ধৈর্য’ শব্দটাকেই নিজের ক্রিকেট-অভিধান থেকে মুছে দিয়ে।
সুনীল নারিনকে সাইটস্ক্রিনের ও পারে ফেলছেন কে? মহেন্দ্র সিংহ ধোনি? নাহ্। মাইক হাসি? নাহ্। ‘স্যর’ জাডেজা, আবার কে!
শেষোক্ত ভদ্রলোক আবার শনিবার কেকেআরের এক নম্বর ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’-ও বটে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তাঁকে নিয়ে যতই ইয়ার্কি চলুক, টি-টোয়েন্টির বাইশ গজে জাডেজা যে হাস্যরসের বস্তু নন, ভাল রকম বুঝিয়ে দিলেন। দশের আস্কিং রেট আরামসে পার করলেন, তিনটে উইকেটও তুললেন, ইডেনের জায়ান্ট স্ক্রিনে বার কয়েক ভেসেও উঠল, ‘ফ্রম স্যর উইথ লাভ!’ গম্ভীর বরং ধন্যবাদ দিতে পারেন বোলারদের। একশো কুড়ি রান পকেটে নিয়ে উনিশ ওভার পর্যন্ত ম্যাচটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আর কুড়িটা রান স্কোরবোর্ডে থাকলে কে জানে, অন্য রকম কিছু হতেও পারত।
যা হয়নি, তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। যা হয়েছে, তা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার। ছয় ম্যাচ, চার হার। আজ রাজস্থানে রক্তপাত। কাল মোহালিতে অপমৃত্যু। পরশু কলকাতায় কচুকাটা। দ্রাবিড়, গেইল, গোনি, ধোনি...।
নাইটদের হারাবে কে কে আর? |
গম্ভীরের ফাটকা
বিস্তারিত স্কোর... |
১) ইউসুফ পাঠানকে ওপেন করতে পাঠানো।
ফল: ফাটকা ঠিকই ছিল। শুরুতে ৬ ওভারে ৪৬ রানও উঠে যায়। কিন্তু পাঠান ২২ বলে ২৫ করে রান আউট হওয়ার পর মিডল অর্ডার ধসে যায়।
২) দেবব্রত দাসকে কিপারের দায়িত্ব দেওয়া।
ফল: দেবব্রত উইকেটের পিছনে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। ব্যাটেও ব্যর্থ।
৩) ইডেনে স্লো-পিচ চাওয়া।
ফল: চেন্নাইয়ের মারকাটারি ব্যাটসম্যানদের আটকাতে স্লো-পিচ চাইলেও আদতে সেটা বুমেরাং হয়ে দাঁড়াল প্রথমে ব্যাট করা নাইটদের কাছে। নাইট ব্যাটসম্যানরা এই পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ। |
|