পদ্মশ্রী নিতে দিল্লিতে প্রথম বাংলাদেশি
নৃশংস ভাবে শিশু-ধর্ষণের প্রতিবাদে দিল্লি যখন উত্তাল, রাজধানীতে উপস্থিত গাঁধীবাদী সমাজসেবী ঝর্ণাধারা চৌধুরী। ছেচল্লিশের নোয়াখালির সেই বীভৎস হিংসার ফ্রেমগুলো এখনও যাঁর স্মৃতিতে একেবারে টাটকা। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নাগরিক হিসাবে পদ্মশ্রী খেতাব নিতে তিনি এখন দিল্লিতে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে কিছুটা বিষন্নই। দিল্লির ধর্ষণকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলতে বললেন, “আমি দিল্লিতে এবং কলকাতায় প্রায়ই আসি। সবতেই যে পরিবর্তন হচ্ছে টের পাই। গাঁধীর আদর্শ কোথায় রয়েছে, আদৌ রয়েছে কি না, ঘুমাচ্ছে না জেগে রয়েছে কিছুই বুঝতে পারি না।”
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট লড়াকু ঝর্ণাধারাদেবী। সামনেই নির্বাচন। যত দিন যাচ্ছে, বাড়ছে মৌলবাদী হিংসার প্রকোপ। জানাচ্ছেন, “শান্তির জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের অনেককেই জীবন দিতে হয়েছে। আমার জীবনটা এখনও রয়েছে বলে আজ এসে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি। তবে এমন সময় আসবে যখন জীবন চলে যাবে। তখন আমার কথা মনে রাখবেন।” তাঁর কণ্ঠেও যেন শাহবাগেরই সুর।
রাজধানীর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঝর্ণাধারা চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র
বললেন, যাঁরা দুর্যোগের মধ্যে থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে চাইছেন, ভয় পাবেন না। দুর্বল হয়ে পড়বেন না। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে গাঁধীকে খুবই প্রয়োজন আমাদের।”
আসলে গোটা জীবন জুড়ে সমাজসেবার সঙ্গে জড়িয়ে থাকার পিছনে ঝর্নাধারাকে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ্র গাঁধী। নোয়াখালির বীভৎসতার পর গাঁধী যখন সেখানে গিয়েছিলেন, তখন প্রাণ বাঁচাতে ঝর্ণা তাঁর পরিবারের সঙ্গে অসমে লুকিয়ে। “আমাদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, অনেক আত্মীয়স্বজনই খুন হন। অসমে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে পথের দু’ধারে শুধু নিহত মানুষজনকে পড়ে থাকতে দেখেছি,” বললেন তিনি। এখনও সেই নোয়াখালির জমিই আঁকড়ে রয়েছেন। তাঁর কথায়, “যখন অসম থেকে গ্রামে ফিরে আসি, হিংসা থেমে গিয়েছে। কিন্তু নোয়াখালি যেন শ্মশান।”
গাঁধীর প্রয়াসে এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, অল্পবয়সেই স্থির করেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য কাজ করবেন। সতেরো বছর বয়সে বোনকে নিয়ে গ্রামের মধ্যেই সমাজের বঞ্চিত শিশুদের জন্য স্কুল তৈরি করেন। কিন্তু স্কুল-কলেজের শিক্ষা ছিল না বলে কয়েক বছরের মধ্যেই সেই স্কুল বন্ধ করে দেয় সরকার। ঝর্ণা ঘুরতে থাকেন ঢাকা, কুমিল্লা-সহ গোটা বাংলাদেশ। প্রচার করতে থাকেন গাঁধীর দর্শন। অনেক সমাজসেবী সংস্থায় কাজ করার পর শেষে যোগ দেন নোয়াখালির গাঁধী আশ্রম ট্রাস্টে।
দীর্ঘ টালমাটাল জীবন পেরিয়ে এসে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই সম্মান পাওয়ার অনুভূতি কেমন? বিশেষ করে, যখন এই প্রথম কোনও বাংলাদেশিকে পদ্মশ্রী দেওয়া হল। আজ সকালে চিত্তরঞ্জন পার্কে আন্তর্জাতিক বাংলাভাষা সংস্কৃতি সমিতির পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা দেওয়া হল তাঁকে। সেখানে দৃশ্যতই অভিভূত তিনি। বললেন, “বাংলাদেশকে বিভিন্ন ভাবে ভারত সহযোগিতা করেছে। কিন্তু সম্মান জানালো এই প্রথম!” ঝর্ণাধারার কথায়, “আমি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে থাকি। সেখান থেকে ওরা খুঁজে বের করেছেন আমাকে। এই সম্মান নারী সমাজেরই সম্মান।” নোয়াখালির সোনাইমুরিতে গাঁধী আশ্রমকে আরও প্রসারিত করতে এখনও অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন ৭৭ বছর বয়সী ঝর্ণাধারাদেবী। তাঁর কথায়, “এখানে পরিস্থিতি অনেক শান্ত, সৌভ্রাতৃত্বপূর্ণ। গাঁধীজি ঘুরে যাওয়ার পর থেকে কোনও বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ কিন্তু হয়নি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.