|
|
|
|
সংসদ চালাতে আনসারির প্রস্তাবে নারাজ বিরোধীরা |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
লোকসভা নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সংসদের অধিবেশনে রাজনৈতিক হাঙ্গামা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারির। এই পরিস্থিতিতে সংসদের অধিবেশন নির্বিঘ্নে সারতে মীরা যখন সাংসদদের শুভবুদ্ধি উদয়ের দিকে তাকিয়ে, তখন হামিদ আনসারির দাওয়াই, সংসদের অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যাপারে কড়া হতে হবে।
ক’দিন আগেই সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে মীরা কুমার সব দলকে এ বারের অধিবেশনে বয়কটের রাজনীতি ত্যাগ করে আলোচনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করেছেন। আর রাজ্যসভার চেয়ারম্যান আজ সর্বদলীয় বৈঠকে একগুচ্ছ অভিনব প্রস্তাব দিয়েছেন। যার একেবারে প্রথমে রয়েছে, রাজ্যসভায় অসংসদীয় আচরণ থামানোর জন্য অধিবেশনের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া। কমপক্ষে ১০ বা ১৫ মিনিট পরে সংসদের কার্যকলাপ টিভির পর্দায় দেখানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। সাংসদরা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারকে মূলধন করে সংসদের বাইরে নিজের বিপ্লবী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে বেশি আগ্রহী হন বলেই মনে
করেন হামিদ আনসারি। কারণ এই সাংসদদের ধারণা, এই ধরনের রাজনীতি ‘খায় বেশি’!
রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় প্রস্তাব হল, এ ধরনের অসংসদীয় আচরণ করলে চেয়ারম্যানের অধিকার থাকবে অবিলম্বে সেই সাংসদকে সাসপেন্ড করে দেওয়া। হামিদ আনসারির তৃতীয় প্রস্তাব, যাঁরা রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে আসবেন, অসংসদীয় আচরণ করার জন্য তাঁদের নাম পরের দিন বুলেটিনে ছেপে দেওয়া হবে। প্রায় ন’বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ‘ক্লান্ত’ মনমোহন সিংহ আজ হামিদ আনসারির প্রস্তাবগুলি মেনে নিলেও তৃণমূলের মুখ্য সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন, বিজেপির রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি এর তীব্র বিরোধিতা করেন। প্রধানমন্ত্রী রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে জানান, কোন অবস্থা থেকে হামিদ আনসারি এই ধরনের প্রস্তাব দিচ্ছেন, তা তিনি ভালই অনুভব করেন। তিনিও সমদরদী। সিপিএমের সংসদীয় দলনেতা সীতারাম ইয়েচুরি সরাসরি সম্প্রচার দশ মিনিট পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তিনিও রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে সাংসদদের সাসপেন্ড করার অধিকার দিতে রাজি নন। ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “সংসদে যে হাঙ্গামা বা গোলমাল হয়, সে বিষয়ে এক তরফা সাংসদদের দোষারোপ করাটা ঠিক নয়। অনেক সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেন যাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়। কাজেই অসুখের কারণ নির্ধারণ না করে শুধু রোগের লক্ষণ দেখে চিকিৎসা করে রোগী নিরাময় হতে পারে না।”
অরুণ জেটলি অন্য প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর যুক্তি, সাংসদদের সাসপেন্ড করা হলে কোনও সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সংখ্যালঘু হয়ে যেতে পারে। কাজেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই অধিকারকে ব্যবহার করা সম্ভব। তখন রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ইয়েচুরিও এ ব্যাপারে একমত। তাঁর মতে, অনেক সময় বিরোধীদের দাবিগুলি মানা হয় না। যে সব বিষয়ে আলোচনাকে বিরোধীরা অগ্রাধিকার দিতে চান, তা শাসক দল দিতে চায় না। এই ধরনের অসহযোগিতার সঙ্গে তাই বিরোধী দলের সাংসদদের অসহিষ্ণুতার একটা কার্যকারণ সম্পর্ক রয়েছে।
বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধের শেষ দিনে শ্রীলঙ্কার তামিলদের সমস্যাকে ঘিরে এডিএমকে সাংসদরা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের টেবিলের মাইক ভেঙে দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার স্মৃতিই হামিদ আনসারিকে আরও বেশি সক্রিয় করে দিয়েছে। সেই কারণেই সাংসদদের জন্য কিছু ‘ডু’জ অ্যান্ড ডোন্ট’স’ তৈরি করতে চেয়েছিলেন তিনি। মায়াবতীর দলের নেতা সতীশ মিশ্র অবশ্য যথেষ্ট নমনীয় মনোভাব দেখিয়ে জানান, তিনি সব প্রস্তাবই মেনে নিতে রাজি। মুলায়মের দলের কোনও প্রতিনিধি এই বৈঠকে হাজির ছিলেন না। সমাজবাদী পার্টির অনুপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা এখনও সরকারের উপরে বিরক্ত। জেডি (ইউ)-র শিবানন্দ তিওয়ারি আবার বিজেপিকেই সমর্থন করেছেন। সব মিলিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সাংসদদের পায়ে বেড়ি পরাতে গিয়ে কংগ্রেসই একঘরে হয়ে পড়েছে। বিরোধীদের দাবিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাই রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এক পা এগিয়েও দু’পা পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। |
|
|
|
|
|