সারদা-কাণ্ডে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা
ঝুঁকি নিতে নারাজ লালবাজার, নিরাপত্তা দ্বিগুণ মমতার পাড়ায়
ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়তে থাকায় আর ঝুঁকি নিতে রাজি নন লালবাজারের কর্তারা। ক্ষোভের আঁচ বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় পুলিশি বন্দোবস্ত ও নজরদারি এক ধাক্কায় দ্বিগুণ করে দিলেন তাঁরা। পাশাপাশি, এই ধরনের বিক্ষোভের কথা মাথায় রেখে গোটা শহর :জুড়েই পুলিশি টহলদারি ও সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে।
রবিবার সকাল থেকেই ৩০-বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট ও সংলগ্ন এলাকায় এই নয়া পুলিশি ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। তার আগে সাতসকালে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশে চুঁচুড়া থেকে আসা একদল বিক্ষুব্ধের মিছিল দেখেই প্রমাদ গোনে পুলিশ। কোনও মতে সেই দলটিকে বুঝিয়েসুজিয়ে নিরস্ত করা হলেও সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করার সিদ্ধান্ত নেন পুলিশকর্তারা। শুধু এ দিনের ওই ঘটনাই নয়, বিক্ষোভকারীরা কেন সব সময়ে তাঁর বাড়ির এত কাছাকাছি চলে আসতে পারছেন, তা নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকর্তাদের কাছে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে হাজরা মোড় থেকেই শুরু
হয়েছে কড়া পুলিশ প্রহরা। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
শুক্রবারও দিনভর মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে কার্যত ধর্নায় বসেছিলেন সারদার বহু বিপন্ন এজেন্ট। সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী বাড়ি ফেরার আগে জবরদস্তি তাঁদের উঠিয়ে দেয় পুলিশ। তার পরে ফের এ দিনের ঘটনা। তবে মুখ্যমন্ত্রী যেমন তাঁর বাড়ির কাছে নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তেমনই নয়াদিল্লিতে যোজনা কমিশনের অফিসের সামনে সিপিএমের বিক্ষোভের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে পুলিশও জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী রাখাটা এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বরাবরই তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীন।
এ দিন সকালে ডিসি (সাউথ)-কে দিনভর সরেজমিন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির আশপাশের গোটা পুলিশি বন্দোবস্তের তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় জনা পঞ্চাশের বেশি পুলিশ মোতায়েন থাকে না। কিন্তু রবিবার থেকেই ১০০-রও বেশি পুলিশকর্মী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। পুলিশের শীর্ষকর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যত দিন না সারদা গোষ্ঠী-সংক্রান্ত বিষয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তত দিন এই বাড়তি পুলিশ-বাহিনীকে মজুত রাখা হবে। শুধু হাজরা রোড-হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের মোড়ই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ঢোকার সব রাস্তাতেই ব্যারিকেড রেখেছে পুলিশ।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন? পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ হাজরা রোড থেকে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির দিকে এগোচ্ছিল জনা তিরিশের একটি দল। মুখেচোখে হতাশা ও বিক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট। ওঁদের কেউ সারদা আর্থিক সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন, কেউ এজেন্ট। সর্বস্ব খুইয়ে এখন সকলেই প্রতিকার চাইছেন। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ঢোকার মুখেই পুলিশ অবশ্য তাঁদের সকলকে সরিয়ে দেয়। পুলিশের বক্তব্য, ওঁদের সকলেই এসেছিলেন চুঁচুড়া থেকে। দলটিতে মহিলার সংখ্যা জনা তিনেক। নিজেরাই বাস ভাড়া করে তাঁরা কলকাতায় আসেন। পুলিশকে তাঁরা সাফ জানান, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না-করে কেউ নড়বেন না।
শেষমেশ ঠিক হয়, চুঁচুড়া থেকে আসা দলটির তিন জন প্রতিনিধি সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে দেখা করার অনুমতি পাবেন। এই আশ্বাসেও ক্ষোভ পুরো প্রশমিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত ওই তিন জনের কাছ থেকে পুলিশই স্মারকলিপি জমা নেয়। তার প্রাপ্তি স্বীকারও করা হয়। স্মারকলিপি জমা পড়ে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। তার পরে দলটিকে কালীঘাট সেতু পার করিয়ে রাখালদাস আঢ্যি রোডে নিয়ে গিয়ে বাসে তুলে দেয় পুলিশ। সেই বাস যখন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁদের নিয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরোচ্ছে, তখন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে কলকাতা পুলিশ।
তবে স্রেফ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি নয়। সারদা নিয়ে তদন্তভার বিধাননগরের পুলিশের হাতে থাকলেও ক্ষোভের আঁচে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে লালবাজার। এ ব্যাপারে সব থানাকে সতর্ক করা হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশি টহলদারি জোরদার করা হয়েছে। টহলদারি পুলিশ ভ্যান ও টহলদারি পুলিশের সংখ্যাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক জনজীবন যাতে কোনও ভাবেই ব্যাহত না-হয়, সেটাই সুনিশ্চিত করতে চাইছে লালবাজার। শুক্রবার সন্ধ্যাতেই এ ব্যাপারে লালবাজারে জরুরি বৈঠক করেন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ।
লালবাজারের এক শীষর্কর্তা বলেন, “রবিবার অত সকালে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছাকাছি চুঁচুড়া থেকে জনা তিরিশ মানুষ চলে এসেছিলেন। সকলেই ক্ষুব্ধ। এর পরে আর ঝুঁকি নেওয়া যায় না। কলকাতার মধ্যে যাতে ওই ক্ষোভ ছড়িয়ে না-পড়ে, কোনও রকম গণ্ডগোল যাতে না-হয়, সে দিকে আমরা নজর রাখছি।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.