কোথাও পর্যটন কেন্দ্র গড়ার নাম করে, কোথাও হাসপাতাল তৈরির প্রকল্প ঘোষণা করে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় অন্তত আড়াইশো বিঘা জমি সারদা গোষ্ঠী কিনেছে বলে সংস্থার এজেন্টদের একাংশ দাবি করেছেন। এজেন্টরাই জানিয়েছেন, শিলিগুড়িতে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলও কিনেছে সারদা গোষ্ঠী। রবিবার এজেন্টদের একাংশ সেবক রোডের একটি এলাকায় বৈঠখ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সংস্থা টাকা দিতে না-পারলে ওই জমি বিক্রি করে টাকা আদায়ের চেষ্টা হবে। তবে এজেন্টদের অন্য অংশ জানান, বাজার থেকে যে পরিমাণ টাকা তোলা হয়েছে জমি বিক্রি করে তা তোলা সম্ভব নয়। তবে লাটাগুড়িতে ওই গোষ্ঠীর নামে যে রিসর্ট রয়েছে তাও বিক্রির দাবি তুলেছেন আমানতকারীর একাংশ। সরকারি সাহায্যেরও দাবি করেছেন সকলে। ওই গোষ্ঠীর শিলিগুড়ি শাখা অফিসের এজেন্ট ও কর্মীদের আশঙ্কা, উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার কয়েক লক্ষ আমানতকারীর পাওনার পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। |
লাটাগুড়িতে রিসর্ট। পিছনে সাড়ে ৪ বিঘা জমি। |
দার্জিলিংয়ের ঘুমে কোটি টাকা মূল্যের জমি। |
আলিপুরদুয়ারে ৩৩ বিঘা জমি বায়না করেছে। |
বালুরঘাট ত্রিমোহিনী এলাকায় ৩৯ বিঘা জমি। |
ফালাকাটার বংশীধরপুর এলাকায় ৬৫ বিঘা জমি। |
ধূপঝোড়ায় ১৭ বিঘা। |
কোচবিহার মধুপুরধাম এলাকায় ৪৭ বিঘা জমি। |
ময়নাগুড়ি মৌলালিপুর এলাকায় ২৯ বিঘা জমি। |
মাথাভাঙার পখিহাগা এলাকায় ১১ বিঘা জমি। |
|
সারদা গোষ্ঠীর শিলিগুড়ি শাখার ম্যানেজার গৌতম চৌধুরী বলেন, “আমরা পুরো বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। ফের জানাব। আশা করছি সরকারের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে” আজ, সোমবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে বিষয়গুলি জানাবেন তারা। ওই সংস্থার শিলিগুড়ির এক আধিকারিক প্রণব কুমার মহন্ত বলেন, “কোথায় কি সম্পত্তি রয়েছে তার একটি হিসেব আমরা তৈরি করেছি। তা প্রশাসন ও পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।” ওই গোষ্ঠীর শিলিগুড়ি অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বালুরঘাটের ত্রিমোহিনীতে একটি হিমঘর ও একটি নার্সিংহোম করার জন্য ৩৯ বিঘা জমি কিনেছে ওই গোষ্ঠী। কিন্তু সেখানে কোনও কাজকর্ম শুরু করা হয়নি। একই ভাবে কোচবিহারের রাজারহাটে নার্সিংহোম তৈরির জন্য ৪৭ বিঘে জমি কিনে রেখেছে। এ ছাড়া ধূপঝোড়ায় ১৭ বিঘা, ফালাকাটার বংশীধরপুরে ৬৫ বিঘা জমি রয়েছে তাদের। ময়নাগুড়ির মৌলালিপুর ২৯ বিঘা জমি রয়েছে। মাথাভাঙার পখিহাগায় ১১ বিঘা রয়েছে। এ ছাড়া দার্জিলিংয়ের ঘুমে পর্যটনকেন্দ্র করার জন্য প্রায় কোটি টাকা মূল্যের একটি জমি কেনা হয়েছে ওই গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে। এ ছাড়া লাটাগুড়িতে একটি রিসর্ট ছাড়াও সারদা গোষ্ঠীর নামে সাড়ে ৪ বিঘে জমি রয়েছে। মাথাভাঙা শহরের আমলাপাড়ায় একটি চার তলার ভবন রয়েছে। শিলিগুড়ির কড়াইবাড়িতে একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলও কিনে নেন তারা। আলিপুরদুয়ারে ৩৩ বিঘার জমি কেনার জন্য বায়না করা হয়েছে।
শিলিগুড়ির হায়দরপাড়ার বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি ৫০০ জনের দল নিয়ে ওই সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। প্রায় ২৫ কোটি টাকা তার দলের সদস্যরা সংস্থায় জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি বাজার থেকে ৩০ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছি। এখন গ্রাহকেরা আমার বাড়িতে ধর্না দিয়েছেন। হুমকি দিচ্ছেন। এই অবস্থায়, চাই তাদের জমি, সম্পত্তি বিক্রি করে আমাদের টাকা দেওয়া হোক। না হলে আমাদের কি হবে।” শালবাড়ির বাসিন্দা মিনা প্রধান বলেন, “১৫ লক্ষের টাকার আমি জমা দিয়েছে। সবাই জবাবদিহি চাইছে। এখন শুনছি ওই সংস্থার নামে প্রচুর জমি, বাড়ি রয়েছে। সব বিক্রি করে আমাদের দেওয়া হোক। ওই সংস্থার কর্মীরা বলেন, “আমরা একটা হিসেব করে দেখেছি গ্রাহকদের যা পাওনা রয়েছে তাতে সম্পত্তি বিক্রি করে সব মেটানো সম্ভব নয়। এ জন্য জমি, বাড়ি বিক্রির পাশাপাশি সরকারি সাহায্য চাইছি আমরা। যাতে অন্তত গ্রাহকেরা তাদের জমানো টাকা ফিরে পান।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেন, সারদা গোষ্ঠীর উত্তরবঙ্গের জমির পরিমাণ আরও বেশি। তিনি বলেন, “অধিকাংশ জায়গাতেই কৃষি জমি নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার কৃষি জমি অন্য কাজে দেওয়ার বিরোধী। তা হলে ওই গোষ্ঠী কৃষি জমি কেনার ক্ষেত্রে সরকারি তরফে কোনও বাধা পেল না কেন? নেতা, মন্ত্রীরা এর পিছনে নেই তো?” |