রাতেই ভাঙচুর হয়েছে সাঁইথিয়ার শশিভূষণ দত্ত বালিকা বিদ্যালয় লাগোয়া সারদা গোষ্ঠীর অফিসে। ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা অফিস থেকে চেয়ার টেবিলও নিয়ে চলে গিয়েছেন। তারপরেই দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে সারদা গোষ্ঠীর সাঁইথিয়া কার্যালয়ের প্রায় ২৫০ জন এজেন্টকে। গত কয়েক দিনের ঘটনা এমনিতেই কপালে ভাঁজ তুলেছিল। তারপরেই শনিবার রাতের দিকে ভাঙচুর। রবিবার দেখা মিলল স্থানীয় বিবেকানন্দ পল্লির অমিয় মুখোপাধ্যায়ের। পুরোহিতের কাজ করার পাশাপাশি তিনি সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট হিসেবেও কাজ করতেন। তিনি নিজেও সংস্থায় ৫ লক্ষ টাকা লগ্নি করেছিলেন বলে দাবিও করলেন। তাঁর কথায়, “নিজের সর্বস্ব ঢেলেছি। গ্রাহকদের কাছ থেকেও প্রায় ৫ লক্ষ টাকা সারদাতে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু সংস্থার কোনও আধিকারিকই এখন আর ফোন ধরছেন না।” নিজের টাকা, গ্রাহকদের টাকা কোথা থেকে মিলবে তার চিন্তাই এখন তাঁকে কুরেকুরে খাচ্ছে। দৃশ্যত শঙ্কিত অমিয়বাবু বললেন, “শুনছি রাজ্য সরকার গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেবে। দেয় তো ভাল, না হলে আমাকে আত্মহত্যাই করতে হবে।” |
এ দিকে গ্রাহকেরা অবশ্য দোষ দিচ্ছেন এজেন্টদেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রাহকের দাবি, “মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সুবাদে এজেন্টরা আমাদের ওই সংস্থায় টাকা রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁদের কথায় বিশ্বাস করেই আমরা আমাদের যথাসর্বস্ব জমা করেছিলাম। আমাদের কষ্ট করে জমানো টাকা ফেরত পাব তো?” এ দিকে এজেন্টদের একাংশ অবশ্য সেই দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব, সংস্থার কর্তারাই সবাইকে ভরসা জুগিয়েছিলেন। যাঁরা টাকা লগ্নি করেছিলেন, সবাই নিজের দায়িত্বেই করেছেন। যাঁর জন্যই বহু এজেন্ট নিজেও সারদা গোষ্ঠীতে টাকা ঢেলেছিলেন বলে তাঁদের দাবি। সংস্থায় নিজের ৮৫ হাজার টাকা জমা করে মাথায় হাত পড়েছে ময়ূরেশ্বরের বাজিতপুরের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক প্রবীর রায়েরও। এজেন্ট হিসেবেও প্রায় ৩ লক্ষেরও বেশি টাকা সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছিলেন প্রবীরবাবু। তাঁর বক্তব্য, “প্রতিনিয়ত গ্রাহকেরা খোঁজ খবর নিচ্ছেন। গৃহবন্দি হয়ে আছি। নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি।”
সাঁইথিয়ায় সারদা গোষ্ঠীকে অফিসের জন্য বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন সুধা ঘোষ। অমিয়বাবু সুধাদেবীকে নিজের সাব-এজেন্ট বলেই দাবি করলেন। যদিও ভাঙচুরের পরে সুধাদেবী অবশ্য নিজেকে ওই সংস্থার সঙ্গে জড়িত নন বলেই জানান। তাঁর দাবি, “শুধু অফিস ভাড়া দিয়েছিলাম। বরং বাড়িভাড়া ছাড়াও নিজের ১ লক্ষ টাকা ওই সংস্থায় লগ্নি করেছিলাম। আমি সংস্থার সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নই।” ওই অফিসের ম্যানেজার-ইন-চার্জ শ্রীমন্ত চৌধুরীর বাড়ি সাঁইথিয়াতেই। বাড়িতে গিয়েও তাঁর দেখা মেলেনি। এমনকী মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পুলিশ জানায়, ভাঙচুর ও লুঠপাটের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রাহকদের থেকেও কোনও অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। |