দেওয়ালে মাকড়সার জালের মতো ফাটল ধরেছে। ছাদের চাঙড়ও ধসে পড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কাটোয়ার চন্দ্রপুর সেন্ট্রাল হাইস্কুলের শিক্ষক থেকে পড়ুয়ারা। এই অবস্থায় লিখিত ভাবে ক্লাস বয়কটের ডাক দিয়েছেন পড়ুয়ারা। বর্ধমানের সর্বশিক্ষা মিশনের বাস্তুকারও স্কুলঘরগুলির অবস্থা ‘ভয়ঙ্কর’ বলে রিপোর্ট দিয়েছেন। নতুন ভবন তৈরির জন্য স্কুলকর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
কাটোয়া চন্দ্রপুর সেন্ট্রাল হাইস্কুলের ৯৬ বছরের পুরনো ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। এই ভবনটিতে ১৬টি ঘর রয়েছে। প্রতিটি ঘরেরই এক অবস্থা। বেহাল অবস্থা বারান্দারও। অথচ ওই ঘরগুলিতেই নিয়মিত ক্লাস করতে হয় পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির প্রায় হাজার জন্য ছাত্রছাত্রীকে। স্কুল সূত্রে জানা যায়, ৯ এপ্রিল ক্লাস চলাকালীন সপ্তম শ্রেণির ‘খ’ বিভাগের মধুমিতা হাজরা নামে এক ছাত্রীর গায়ে চাঙড় খসে পড়ে। গুরুতর জখম হয় সে। ওই স্কুলের শিক্ষিকা টিঙ্কু দে বলেন, “আমি তখন পড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ ক্লাস ঘরের চাঙড় খসে পড়ল। প্রতিদিনই এমন হয়।” সপ্তম শ্রেণির ওই ঘর সেদিন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সে দিন পড়ুয়াদের ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয়। |
ওই স্কুলের প্রবীণ শিক্ষক তপনকুমার হাজরা বলেন, “পড়াব কি, সবসময়ে আতঙ্কে থাকতে হয়, এই বুঝি কোনও দুর্ঘটনা হল।” পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির প্রায় ৫০০ জন পড়ুয়া নিজেদের সই সম্বলিত একটি চিঠি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষককে। ওই চিঠিতে তারা জানায়, ওই ঘরগুলিতে ক্লাস করতে আতঙ্ক বোধ করে তারা। দ্রুত এই পরিস্থিতির সমাধান না হলে এক যোগে ক্লাস বয়কট করতে বাধ্য হবেন তারা। স্কুল পড়ুয়া অভিজিৎ মাঝি, প্রণব রায় বলেন, “প্রতিদিনই কোনও না কোনও ঘরে ছাদের চাঙড় ঝুলে পড়েছে। আমরা ক্লাসে ঢুকে লাঠি দিয়ে খুচিয়ে ওই চাঙড় ফেলে দিই।” ছাত্রী অপর্ণা দে, শিউলি পালেদের কথায়, “আমাদের সঙ্গেই মধুমিতা বসেছিল। ছাদের চাঙড় খসে পড়ে ও জখম হওয়ার পর থেকে আমদেরও সবসময়ে ভয় করে।” শিক্ষক বিশ্বনাথ দাস, প্রণব সাহারা বলেন, “ঝড় হলেই স্কুলভবন কাঁপতে থাকে।”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯১৭ সালে চন্দ্রপুর মিড্ল স্কুল নাম দিয়ে স্থাপিত হয় স্কুলটি। পরবর্তীকালে বাংলা মাধ্যম হয়ে স্কুলটির নাম হয় চন্দ্রপুর সেন্ট্রাল হাইস্কুল। মোট ২১টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে স্কুলে। নতুন ৫টি ঘরে উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়াদের ক্লাস হয়। বাকি ১৬টি ঘরের মধ্যে দু’টি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। ১৬ এপ্রিল স্কুলটির অবস্থা নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করতে আসেন সর্বশিক্ষা মিশনের বর্ধমানের অতিরিক্ত বাস্তুকার বিন্ধল দাস। তাঁর রিপোর্ট অনুযায়ী, ৯৬ বছরের পুরনো এই ভবনটিতে কোনও নিরাপত্তা নেই। দেওয়ালের ফাটল পুরো ভবনেই ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকী, ফাটল দিয়ে আকাশও দেখা যাচ্ছে। ছাদের অবস্থাও অত্যন্ত বিপজ্জনক। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বলকুমার দাস বলেন, “ওই বাস্তুকারের পরামর্শ মতো ভবন সংস্কার করা হলেও তা টিকবে না। টাকাটাই জলে যাবে।” তাঁর দাবি, সেই কারণেই নতুন ভবন তৈরির (১৬টি ঘর থাকবে তাতে) দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, ভবনটির সংস্কারের দাবি জানিয়ে আগেও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়ে কোনও লাভ হয়নি। চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে শিল্পমন্ত্রী থেকে শুরু করে এলাকার বিডিওর কাছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, “রাতের ঘুম চলে গিয়েছে। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে কাটোয়া থানা-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তরে জানানো হয়েছে। কাটোয়া ১ ব্লকের বিডিও আশিসকুমার বিশ্বাস বলেন, “স্কুলের সমস্যা মেটানোর জন্য আমরা চেষ্টা করে চলেছি।”
|