|
|
|
|
হুল্লোড় |
ফিল্মের নতুন ল্যাজ |
সিনেমা এখন শেষ হয় না। পিছনে রেখে যায় সিক্যুয়েল।
হলিউড থেকে বলিউড,
সর্বত্র এখন রীতি। ব্যতিক্রম শুধু টলিউড। কেন? খোঁজ নিলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
এ বার আইপিএল-এর প্রথম খেলাটা ইডেন গার্ডেন্সে দেখতে এসেছিলেন অক্ষয় কুমার। কলকাতা সফরে এসেছিলেন তাঁর অভিনীত ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই ২’-এর প্রচারে। সঙ্গে ছিলেন সোনাক্ষী সিংহ এবং ইমরান খান।
তার ঠিক পনেরো দিন পরে আর এক ঝাঁক বলিউড অভিনেতা শহরে। আদিত্য রায় কপূর আর শ্রদ্ধা কপূর। সঙ্গে মহেশ ভট্ট এবং মুকেশ ভট্ট। ছবির নাম ‘আশিকি ২’।
এ সবের কিছু দিন আগে শহরে এসেছিলেন ধর্মেন্দ্র ও তাঁর দুই পুত্র, সানি দেওল আর ববি দেওল। কারণ? ‘য়মলা পাগলা দিওয়ানা ২’-এর প্রচার।
বলিউডে যেন এ বছর সিক্যুয়েলের বন্যা। একটা ছবি হিট করলেই সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা হয়ে যায় যে তার সিক্যুয়েল তৈরি হবে। বছরের শুরুর দিকেই মুক্তি পেয়েছে ‘রেস ২’ আর ‘মার্ডার ৩’। সামনে মুক্তি পেতে চলেছে ‘আশিকি ২’। তার পর আসছে ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই ২’, ‘সাহেব বিবি ঔর গ্যাংস্টার রিটার্নস’, ‘কৃশ ৩’, ‘য়মলা পাগলা দিওয়ানা ২’ আর ‘ধুম ৩’।
ধর্মেন্দ্র থেকে আমির খান, হৃতিক রোশন থেকে সলমন খান— বলিউড এখন সিক্যুয়েল জ্বরে আক্রান্ত। এমনকী গত বছর তো অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’-এর দু’টো সংস্করণ দু’মাসের মধ্যেই মুক্তি পেয়েছিল! ঠিক ছোট গল্পের মতো কোনও সিনেমাই যেন শেষ হয়েও শেষ হয় না।
হলিউড অবশ্য এ বিষয়ে অনেক এগিয়ে। আপাতত ২৩টা জেমস বন্ড-এর সিক্যুয়েল হয়েছে। তা ছাড়াও আছে ‘হ্যারি পটার’, ‘আয়রনম্যান’, ‘স্টারট্রেক’-এর মতো প্রচলিত ফ্র্যানচাইজি। এ বছর নাকি কম করে ২৫টি হলিউড ছবির সিক্যুয়েল মুক্তি পাচ্ছে।
কিন্তু টলিউডে?
এমনিতে বলিউডের প্রচলিত রীতি টলিপাড়ায় আসতে সময় লাগে না। যদিও ফেলুদা আর ব্যোমকেশ করা নিয়ে টলিপাড়ায় কৌতূহলের শেষ নেই, কিন্তু কমার্শিয়াল বাংলা ছবিতে সিক্যুয়েল বানানো নিয়ে সে রকম কোনও উৎসাহ নেই। ‘পাগলু ২’ আর ‘চ্যালেঞ্জ ২’ বানানো হয়েছিল ঠিকই। তবে দু’টোর কোনওটাই বিশাল ব্যবসা করেনি। যে |
|
সামনেই মুক্তি পেতে চলেছে ‘হ্যাংওভার ৩’ |
ইন্ডাস্ট্রিতে হিট-এর জন্য হাহাকার, সেখানে সিক্যুয়েল বানিয়ে বক্স অফিস মাত করাতে এই উন্নাসিকতা কেন?
বাংলা ছবির ইতিহাসে সিক্যুয়েল-এর প্রচলন যে একেবারে ছিল না, তা কিন্তু নয়। সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালি’র পর বানিয়েছিলেন ‘অপরাজিত’। তার পর ‘অপুর সংসার’। বহু দশক পর গৌতম ঘোষ সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-কে ভিত্তি করে বানিয়েছিলেন ‘আবার অরণ্যে’। সত্যজিৎ বাবু নিজেও বানিয়েছিলেন কলকাতা ট্রিলজি— ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবদ্ধ’ আর ‘জনঅরণ্য’। মৃণাল সেন বানিয়েছিলেন তাঁর কলকাতা ট্রিলজি— ‘ইন্টারভিউ’, ‘কলকাতা ৭১’ এবং ‘পদাতিক’।
পৃথিবীর সিনেমার ইতিহাসে হয়তো এই প্রথম যে, কোনও অভিনেতার নামটা ব্যবহার করে সিক্যুয়েল তৈরি হয়েছে। বক্স অফিসে বিশাল সাফল্য পেয়েছিল ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’ আর ‘ভানু পেল লটারি’।
বাণিজ্যিক সাফল্য পেলেও, উত্তম কুমার বা সুচিত্রা সেনের কোনও হিট ছবির কোনও সিক্যুয়েল তৈরি হয়নি। যদিও আজও এমন বহু দর্শক আছেন, যাঁরা, সে সময় এই জুটির যে কোনও ছবির সিক্যুয়েল দেখতে পেলে দারুণ খুশি হতেন।
এই যেমন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। “আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে বলতাম ‘উত্তর ফাল্গুনী’ বা ‘সপ্তপদী’র সিক্যুয়েল হলে দারুণ লাগত। তবে আজ যদি কেউ ভাবেন যে সিক্যুয়েল বানাবেন, তা হলে আমি তাতে অতটা উৎসাহ পাব না। আমি সেই সিক্যুয়েলটাই দেখতে চাইব যেগুলোতে ওঁরা দু’জনেই অভিনয় করবেন,” বলেন রাজ।
এক সময় এই পরিচালক তাঁর হিট ছবি ‘প্রেম আমার’-এর সিক্যুয়েল বানানোর কথা ভেবেছিলেন। “কিছু দূর কথা হয়েও শেষ পর্যন্ত কাজটা এগোইনি। দু’টো বাণিজ্যিক বাংলা ছবির সিক্যুয়েল বানানো হয়েছিল। তবে সেগুলো সে ভাবে হিট করেনি বলে অনেকেই আমাকে নিরুৎসাহ করেছিল। দর্শক হিসেবে আমার যে খুব একটা এই ফিল্মের নামের সঙ্গে ‘২’, ‘৩’ বা ‘৪’ নম্বর লাগানো ছবিগুলো দেখার উৎসাহ আছে তা নয়,” রাজ জানান। তার মানে কি আমির খান-এর ‘ধুম ৩’ এর বিষয়ে রাজের সে রকম কোনও কৌতূহল নেই? “শুধুমাত্র সিক্যুয়েল বলেই ছবিটা দেখব তা নয়। আমির খান-এর ছবি বলে অবশ্যই কৌতূহল আছে,” বলেন রাজ।
তবে রাজ নিজেও ভাবছেন একটা সিক্যুয়েল বানানোর কথা। “‘প্রলয়’ ছবিটা এমন ভাবে বানানো হচ্ছে যে আমি চাইব এই কনসেপ্টটা দিয়ে ‘প্রলয় ২, ৩’ বানাতে। ইন্টারেস্টিং সিচ্যুয়েশন পেলে এই ‘প্রলয়’-এর সিক্যুয়েলটা বেশ ভাল হতে পারে,” রাজ বলেন।
|
|
শ্রদ্ধা কপূর এবং আদিত্য রায় কপূর। ‘আশিকি ২’-এর প্রচারে কলকাতায় |
ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতার মতে আজকাল আঞ্চলিক কোনও ভাষাতেই সিক্যুয়েলের ধারাটা সে ভাবে প্রচলিত নয়। “তা সে মরাঠি, মালয়ালম, তামিল বা তেলুগু যে কোনও ভাষার ছবি হোক না কেন। একটা দু’টো ট্রাই করা হয়েছে বাংলাতে। কিন্তু সেগুলো বড় সাফল্য পায়নি বলে হয়তো আর বেশি দেখা যায়নি। ফেলুদার ছবিগুলো তো আমরা প্রত্যেক বছরই করছি। সেগুলো দর্শকও খুব পছন্দ করছে। এখন ব্যোমকেশও হচ্ছে। এ বার কাকাবাবু শুরু করলাম। ইচ্ছে আছে, আগামী পাঁচ বছরে তিনটে কাকাবাবু করার,’’ বলছেন শ্রীকান্ত।
আর ইচ্ছে আছে ফাটাকেষ্ট চরিত্রটার একটা সিক্যুয়েল বানানো। “মিঠুনদাকে নিয়ে ফাটাকেষ্টর চরিত্রটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। আমাদের বহু দিনের ইচ্ছে আর একটা ফাটাকেষ্ট বানানোর। একটা ভাল সুযোগ পেলেই আমরা ফাটাকেষ্টটা বানাব,” শ্রীকান্ত জানান।
অনেকের মতে বাণিজ্যিক বাংলা ছবির সিক্যুয়েল না করার আর একটা কারণ হল যে তামিল বা তেলুগু অরিজিনাল-এ হিট সিক্যুয়েলের অভাব। “বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে সিক্যুয়েল যা হয়েছে, সেগুলো বানানোর একটা ধারা রয়েছে। নামটা এক রাখা হয়। কিন্তু রিমেক করা হয় অন্য গল্পের। এর অনেকটাই কারণ হল অরিজিনাল তামিল-তেলুগু ইন্ডাস্ট্রিতে সিক্যুয়েলের তেমন চল নেই। তাই একটা অফিশিয়াল রিমেক হিট হলেও সেটার স্টোরিলাইন মনে রেখে এখনকার চিত্রনাট্যকারকে দিয়ে সিক্যুয়েল লেখালে সেটা নাও চলতে পারে। ‘ধুম’-এর সিক্যুয়েলটা দেখুন। সেই অভিষেক বচ্চন আর উদয় চোপড়া রয়েছেন। ‘মুন্নাভাই’-ও তাই। ‘হেরাফেরি’ ও তাই। সে ধরনের সিক্যুয়েল তো আমাদের এখানে প্ল্যানই হয়নি এখনও,’’ বলেন প্রযোজক হিমাংশু ধানুকা।
কিন্তু বলিউডের সব সিক্যুয়েলে তো সেই এক অভিনেতারা থাকেন না। ‘জিসম’-এর দু’টো ছবিতে তো গল্প বা অভিনেতার কোনও মিলই নেই সে ভাবে। কোথায় বিপাশা, আর কোথায় সানি লিওন! ‘মার্ডার’ ছবিতেও তাই। কোথায় মল্লিকা শেরাওয়াত, আর কোথায় জ্যাকেলিন ফার্নান্ডেজ! “তবু কোথাও থিমটা এক থাকে। আজও কেউ ‘আশিকি ২’ দেখতে গেলে মাথায় থাকবে প্যাশনেট প্রেম, আর ভাল গান। বাংলায় আমরা সিক্যুয়েলের গল্প নিয়ে ভাবি না। থিম নিয়েও অত পাত্তা দিই না। শুধু বক্স অফিসে একটা ‘ইনিশিয়াল’ পাওয়ার লোভে আগের টাইটেলের ব্র্যান্ডটাকে ভাঙানোর চেষ্টা করি। এতে দর্শককে ধোঁকা দেওয়া হয়,” বলছেন হিমাংশু। |
হলিউডে সিক্যুয়েল |
• জেমস বন্ড (২৩টি টাইটেল)
• ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ (১২টি টাইটেল)
• হ্যালোউইন (১০টি টাইটেল)
• পিঙ্ক প্যান্থার (১০টি টাইটেল)
• নাইটমেয়ার অন এলম্ স্ট্রিট (৯টি টাইটেল) |
|
• স্টার ট্রেক (৯টি টাইটেল)
• হ্যারি পটার (৮টি টাইটেল)
• ব্যাটম্যান (৮টি টাইটেল)
• আমেরিকান পাই (৮টি টাইটেল)
• স্টার ওয়ার্স (৭টি টাইটেল) |
|
|
সামনেই মুক্তি পাচ্ছে হিমাংশুর ‘খোকা ৪২০’। দেব, শুভশ্রী আর নুসরতকে নিয়ে ছবি। যদিও ‘খোকা’ নামটা রয়েছে, হিমাংশু এই ছবিকে ‘খোকাবাবু’র সিক্যুয়েল বলতে নারাজ। বলছেন ‘খোকাবাবু’ আর ‘খোকা ৪২০’-র মধ্যে মিল একটাই— দু’টো ছবিতে দেবের চরিত্রের ডাকনাম হল খোকা।
“এটাকে আমি সিরিজ বলতে পারি। যে ভাবে অক্ষয় কুমার তাঁর ‘খিলাড়ি’ সিরিজ বানিয়েছিলেন, সে ভাবেই ভাবছি। ‘খোকাবাবু’ ছবিটা যে সিনেমার অফিশিয়াল রিমেক, তার সঙ্গে ‘খোকা ৪২০’-র অরিজিনালের কোনও সম্পর্ক নেই। আসল ছবিটার নাম ছিল ‘ভি’। যে ছবিটা থেকে ‘খোকা ৪২০’ রিমেক করছি, তার আসল নাম ‘বৃন্দাবনম’। ছবিটির হিন্দি রিমেকের স্বত্ব রয়েছে সলমন খানের কাছে। হয়তো ২০১৪ নাগাদ উনি ওটার কাজ শুরু করবেন। আমরা অবশ্য ‘খোকা ৪২০’ এ বছরের জামাইষষ্ঠীতেই রিলিজ করছি,” বলছেন প্রযোজক।
তবে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘শত্রু’ ছবির সিক্যুয়েল বানানোর পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন হিমাংশু। কারণ? যে তামিল ‘সিঙ্ঘম’ ছবিটি থেকে ‘শত্রু’ বানানো হয়েছিল, সেই ছবির সিক্যুয়েল তৈরি হচ্ছে এখন। নাম ‘সিঙ্ঘম ২’। যদি সেই তামিল ছবি ভাল ব্যবসা করে, তা হলে খুব শীঘ্রই টলিউডে ‘শত্রু ২’ বানানো হবে!
হিমাংশুর কথা শুনে মনে হচ্ছে, যেখানে হলিউড আর বলিউড সিক্যুয়েলের স্রোতে ভাসছে, সেখানে বাণিজ্যিক বাংলা ছবি এখনও অপেক্ষায়। কবে তামিল, তেলুগু ছবির লেজ গজাবে সে দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে টালিগঞ্জ। |
|
|
|
|
|