যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণের কৃত্রিম ঘাস যখন নানা প্রশ্নের মুখে, তখন সেখান থেকে পঁচিশ কিলোমিটারের মধ্যেই আর এক স্টেডিয়ামে রমরমিয়ে চলছে কৃত্রিম ঘাস পাতার কাজ।
দেখভালের অভাবে খারাপ হয়ে পড়া, খেলোয়াড়দের নিয়মিত চোট পাওয়াঅ্যাস্ট্রোটার্ফ বসানোর পরে যুবভারতীতে এই সব অভিযোগ উঠেছে বারবার। বারাসত স্টেডিয়ামে নির্মীয়মাণ টার্ফ নিয়ে তাই এখন আশা-আশঙ্কার দোলাচল। স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ এবং আইএফএ-র অবশ্য আশ্বাস, যে টার্ফ এখানে পাতা হচ্ছে, তা যুবভারতীর চেয়ে ঢের ভাল। তাই আশঙ্কা তো দূর, বরং এই মাঠ ভবিষ্যতে বাংলাকে বহু ভাল ফুটবলার উপহার দেবে, এমন দাবি করেছেন আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়।
বারাসত স্টেডিয়ামের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক আশিস সরকার জানান, ফিফার ‘উইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে এ দেশের সাতটি মাঠে অ্যাস্ট্রোটার্ফ বসানো হবে। বারাসতে গত নভেম্বরে কাজ শুরু হয়েছে। গ্লোবাল টেন্ডারের মাধ্যমে সেখানে টার্ফ বসানোর দায়িত্ব পেয়েছে নেদারল্যান্ডের একটি সংস্থা। আশিসবাবুর দাবি, মাঠের কাজ প্রায় শেষ। টার্ফ পাতার খরচ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “এটি ফিফার প্রকল্প। আমরা কিছু বলতে পারব না।” তবে কৃত্রিম ঘাসে সাজার সঙ্গে সঙ্গে স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো উন্নত করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে সুইমিং পুল, জিম। সারানো হয়েছে ফ্লাডলাইট। এ সবের জন্য প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলে স্টেডিয়াম সূত্রে খবর। |
বারাসত স্টেডিয়ামে লাগানো হয়েছে কৃত্রিম ঘাস। ছবি: সুদীপ ঘোষ। |
স্টেডিয়াম আধুনিক রূপ পেলেও এখনই জাতীয় স্তরের কোনও প্রতিযোগিতার খেলা এই মাঠ পাচ্ছে না। কারণ, এই স্টেডিয়ামে ২০১০ সালে মোহনবাগান ও চার্চিল ব্রাদার্সের একটি ম্যাচে গোলমাল বাধে। ইট পড়ে মাঠে, আহত হন কয়েক জন। তার পরে বারাসত স্টেডিয়ামকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে এআইএফএফ। তা হলে কৃত্রিম ঘাস বসিয়ে লাভ কী? আইএফএ জানায়, আপাতত তাদের অনূর্ধ্ব ১৭ ও অনূর্ধ্ব ১৯ অ্যাকাডেমি এই মাঠে স্থানান্তর করা হবে। উৎপলবাবু বলেন, “আই লিগের খেলা এখনই হবে কি না বলতে পারব না। তবে শীঘ্রই এখানে জুনিয়র পর্যায়ের আর্ন্তজাতিক প্রতিযোগিতা করার কথা ভাবছি।”
যুবভারতীতে টার্ফ বসানোর পর থেকেই মাঠ নিয়ে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কলকাতার বড় দলগুলি। নানা সময়ে এএফসি কাপ খেলতে আসা বিভিন্ন বিদেশি দলও মাঠের সমালোচনা করেছে। বারাসতের ক্ষেত্রে অবশ্য তা হবে না বলে দাবি আইএফএ-র। উৎপলবাবুর কথায়, “এখানে বিশ্বের অন্যতম সেরা মানের অ্যাস্ট্রোটার্ফ বসানো হয়েছে।” স্টেডিয়ামের কর্তা আশিসবাবু বলেন, “শুধু জল দিলে এই টার্ফ ভাল থাকে না। নিয়মিত পরিচর্যা ও কৃত্রিম ঘাসে ব্রাশিং প্রয়োজন। সে সব করা হচ্ছে।”
আশার আলো দেখছেন প্রাক্তন ফুটবলাররাও। মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার তথা কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “বারাসতের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ইদানীং বারবার প্রশ্ন উঠেছে। খেলাধুলোর প্রসারে অপরাধ প্রবণতা কমে। সে দিক দিয়েও এই নতুন মাঠ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।” উত্তর ২৪ পরগনার প্রাক্তন ফুটবলার মুর্শেদ আলি, দীপেন দে, অজিত সাহারা বলেন, “এক সময়ে বারাসত থেকে বহু ভাল ফুটবলার উঠে এসেছিলেন। মাঠটি তৈরি হয়ে গেলে ময়দানে আবার বারাসতের অনেক খেলোয়াড় দেখা যাবে বলে আশা রাখি।”
আশঙ্কার কথা ভুলে তাই আলোর দিকেই এখন নজর সবার। |