|
|
|
|
পাঁচ মাস পরেই ফের উত্তাল রাজপথ, এ বার ‘গুড়িয়ার’ জন্য
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
৫ বছরের ছোট্ট শিশু। নাম, ধরা যাক ‘গুড়িয়া’। আর কী নামেই বা ডাকা যেতে পারে। যদিও এই শিশুটিকেই নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করেছে তার প্রতিবেশী। শরীরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে তেলের শিশি, মোমবাতি। তারই প্রতিবাদে আজ মানুষের ঢল নেমেছিল দিল্লির রাজপথে। তারা চিৎকার করল, ব্যারিকেড ভাঙল, মোমবাতি হাতে হাউহাউ করে কাঁদল ইন্ডিয়া গেটে! ঠিক পাঁচ মাস আগে যেমনটা হয়েছিল দিল্লির ছাত্রীটির বেলায়। আর এ বারেও তারা দামিনীর মতোই নাম রাখল ‘গুড়িয়া’।
ডিসেম্বরে দিল্লির দীর্ঘ প্রতিবাদ-আন্দোলন-বিক্ষোভের পর ধর্ষণের ঘটনা যে আর ঘটেনি, তা নয়। পুলিশি ব্যর্থতা নিয়েও বার বার প্রশ্ন ওঠে। তবে এ বারের ঘটনায় শিউরে উঠছে রাজধানী! অমন নৃশংস ভাবে ধর্ষণের পর বন্ধ ঘরে গুড়িয়াকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল মনোজ। মস্তিষ্কের বিকৃতি কোন পর্যায়ের পৌঁছলে এমন কাজ করতে পারে মানুষ, ভিড়ের মধ্যে মাঝেমধ্যেই শোনা গেল এই প্রশ্ন। তবে আজ অবশ্য কোনও ব্যক্তির মাথার দোষ নিয়ে পথে নামেনি দিল্লি! নেমেছে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে।
জেএনইউ-র ছাত্রী স্মিতা পাণ্ডে যেমন বললেন, “একটা পাঁচ বছরের মেয়ে নিখোঁজ হল। পুলিশ তাঁর বাবাকে বলল, বাড়ির আশপাশে খুঁজুন। তার পর যাওয়া হল ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে। এ বার তারা বলল, দু’হাজার টাকা নিয়ে মুখ বন্ধ রাখুন।” কথা শেষ হল কি হল না, ভিড় ঠেলে দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে লাগানো ব্যারিকেড সমস্ত শক্তি দিয়ে ঝাঁকাতে ছুটে গেলেন স্মিতা। বাতাসের উত্তাপ তখন চল্লিশ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। আর রাজধানী আরও গরম। |
জবাব চাই
শিশুকে ধর্ষণের প্রতিবাদে পুলিশের সদর দফতরের বাইরে
ব্যারিকেড ভাঙতে চাইছে বিক্ষুব্ধ জনতা। শনিবার নয়াদিল্লিতে। |
স্মিতা একা নন, এ দিন সকাল থেকেই দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান হাজার হাজার লোক। পাঁচ মাস আগেও যে দৃশ্য দেখেছিল ইন্ডিয়া গেট থেকে যন্তর মন্তর। বিক্ষোভকারীরা দফায় দফায় ব্যরিকেড ভেঙে সদর দফতরের ঢোকার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে পুলিশও। তবে আজ তারা অনেক সংযত ছিল। বিক্ষোভের আগুন নেভাতে গত বারের মতো জল কামান ছোড়েনি, এলোপাথাড়ি লাঠিও চালায়নি। শুধু দফতর আর নিজেদের বাঁচাতে যতটুকু করা প্রয়োজন, তা-ই করেছে।
দিল্লি পুলিশের সদর দফতর ছাড়াও আজ স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এইমস হাসপাতালের সামনেও। এসএফআই এবং আম আদমি পার্টির ব্যানার হাতে বিক্ষোভকারীরাও ধর্না দিয়েছেন সনিয়া গাঁধী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দের বাড়ির সামনে। পরে সন্ধ্যায় ইন্ডিয়া গেটে মোমবাতি মিছিল করেন ছাত্রছাত্রীরা। তাতে যোগ দিয়েছিল শাসক এবং বিরোধী উভয়পক্ষেরই ছাত্র-যুব সংগঠনগুলি।
যারা হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে অভিযোগ নিতে চায়নি, সেই পুলিশই সাধারণ মানুষের চাপে আজ ভোর রাতে মূল অভিযুক্ত মনোজকুমার শাহ্কে বিহারের মুজফফ্রপুর জেলার চিখনৌটা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। পরে পুলিশ জানায়, সম্প্রতি বিয়ে করেছিল ওই যুবক। গা-ঢাকা দিতে তাই শ্বশুরবাড়িকেই বেছে নিয়েছিল সে। কিন্তু মোবাইল ফোনটিই ধরিয়ে দেয় মনোজকে। ফোনের অবস্থান থেকে তাকে ধরে ফেলে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মনোজকে দিল্লি নিয়ে আসা হয়েছে। |
ক্ষুদ্র তবু...
ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে মোমবাতি আর প্ল্যাকার্ড
হাতে খুদে পড়ুয়ারা। শনিবার মির্জাপুরের একটি স্কুলে। |
চাপে পড়ে গত কালই গুড়িয়াকে এইমসে সরিয়ে আনা হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য আট সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিমও গঠন করা হয়েছে। আজ সকালে এইমসের চিকিৎসকরা জানান, “শিশুটির অবস্থা স্থিতিশীল। তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। ওষুধও কাজ করছে।” পরে সন্ধ্যায় জানানো হয়, অস্ত্রোপচার হয়েছে গুড়িয়ার। তবে অবস্থা স্থিতিশীল।
তবে গুড়িয়ার ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমান্তরাল একটি বিতর্ক আজ উঠে এসেছে। আইন করেই কি ধর্ষণ রোখা সম্ভব? দামিনীর গণধর্ষণের পর দেশ জুড়ে বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ফৌজদারী আইন সংশোধন করে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনায় কঠোর শাস্তির বিধান করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও পাশবিক এই ধর্ষণের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, কঠোর শাস্তিই ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ দমনে একমাত্র দাওয়াই নয়। সুষমা স্বরাজের কথায়, “আইন কঠোর করার পরেও ধর্ষণের ঘটনা ৮০ শতাংশ বেড়েছে। এবং তাতে ফের পরিষ্কার, রোগাক্রান্ত সমাজই।”
তবে আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিয়াল আজ বলেন, “সেই রোগ নিরাময় বৃহত্তর বিতর্ক। তার আগে পুলিশ বাহিনীর রোগ সারানো দরকার। একটা পাঁচ বছরের শিশুর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, তার ধর্ষণও যদি পুলিশের মনে দাগ না কাটে, তা হলে পুলিশকেই আগে ওষুধ দিতে হবে।”
|
ছবি: পিটিআই
|
মধ্যপ্রদেশেও ধর্ষিতা নাবালিকা
নিজস্ব সংবাদদাতা • ভোপাল |
নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল সেওনির বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থায় কর্মরত এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নাম ফিরোজ খান। পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৭ এপ্রিল চকোলেটের লোভ দেখিয়ে বছর পাঁচেকের ওই নাবালিকাকে ঘনসৌরের এক খামারবাড়িতে নিয়ে যায় অভিযুক্ত। ধর্ষণের পর সেখানেই তাকে ফেলে রেখে যায় সে। পর দিন সকালে ওই খামারবাড়িটি থেকেই মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেন পরিবারের লোকজন। চিকিৎসার জন্য তাকে জবলপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এখনও জ্ঞান ফেরেনি মেয়েটির, অবস্থা সঙ্কটজনক। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার ঘনসৌরে বন্ধ পালন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযুক্তের গ্রেফতারির দাবিতে মহকুমা শাসকের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তের খোঁজে দিল্লি ও বিহারে পাঠানো হয়েছে বিশেষ পুলিশ বাহিনী। নিজেদের কর্মচারীর এই জঘন্য অপরাধের খেসারত স্বরূপ মেয়েটির চিকিৎসার যাবতীয় দায়ভার গ্রহণ করেছেন বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থা কর্তৃপক্ষ। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দু’লক্ষ টাকা দিয়েছেন শিবরাজ সিংহ চৌহানও। মেয়েটির সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য অফিসারদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। |
|
|
|
|
|