|
|
|
|
এইমস-এ সনিয়া |
বিক্ষোভ এড়াতে আগেই মাঠে নামল কেন্দ্র
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ফের বিক্ষোভের মেঘ দেখেই সন্ত্রস্ত কংগ্রেস। দামিনীর গণধর্ষণের পর অসন্তোষের আঁচ বুঝতেই সপ্তাহ কেটে গিয়েছিল। এ বার পাঁচ বছরের শিশুর ধর্ষণের ঘটনার পরে তাই আর কালক্ষেপ না করে তড়িঘড়ি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়লেন সনিয়া-মনমোহন। শিশুটিকে দেখতে আজ এইমস হাসপাতালে যান সনিয়া গাঁধী। প্রধানমন্ত্রী এবং কংগ্রেস সভানেত্রী উভয়েই আজ বোঝাতে চেয়েছেন, ঘটনায় তাঁরাও ভীষণই ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাও কঠোর হাতে দমন করা হবে। সরকার ও কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্রে এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে, দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমারকে সরানো হতে পারে।
 মাত্র পাঁচ মাস আগেই বাসে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দিল্লি। শাসক দলের বিরুদ্ধে সার্বিক অসন্তোষকে আরও উস্কে দিতে ময়দানে নেমে পড়েছিলেন বিরোধীরা। আজও তার অন্যথা হয়নি। বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, “ধর্ষণ রুখতে যে আইন রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। শিশু বা নাবালিকাকে ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।” দামিনীর ধর্ষণের পরে অভিযুক্তদের ফাঁসি চেয়ে সুষমাই প্রথমে সরব হন। তার পর সেই দাবিকে সামনে রেখে বিক্ষোভে সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন স্কুল-কলেজের ছাত্ররা। কংগ্রেসের আশঙ্কা, সেই পরিস্থিতিই ফের ফিরিয়ে আনতে চাইছেন সুষমারা।
নভেম্বরে দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এটা এখন স্পষ্ট যে, মহিলা ও শিশুদের নিরাপত্তাহীনতাকেই দিল্লিতে কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটাতে হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। কারণ দামিনী কাণ্ডের মতোই এই ঘটনাতেও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে। সে ব্যাপারে মানুষের ক্ষোভকে উস্কে দেওয়ার সুযোগ ছাড়ছে না বিজেপি। সে জন্য আজ সন্ধ্যাতেই দিল্লিতে মোমবাতি মিছিল করেন রাজ্য সভাপতি বিজয় গোয়েল। বিধানসভা ভোটের আগে একই কৌশল নিয়ে আজ নেমে পড়েছেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালও।
শনিবার কলকাতায় সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, “দিল্লি আর দেশের রাজনৈতিক রাজধানী নয়, অপরাধের রাজধানী! কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।” দিল্লিতে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট জনেদের একাংশও। বিভাস চক্রবর্তী, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, মীরাতুন নাহার, তরুণ সান্যাল, শতরূপা সান্যাল প্রমুখ বিবৃতি দিয়ে দোষীদের এবং প্রশাসনের যে কর্তার ‘অপরাধমূলক উদাসীনতায়’ এ ঘটনা ঘটেছে, সকলের শাস্তি দাবি করেছেন। একই দাবিতে এ দিন ধর্মতলায় মিছিল করে এসইউসি-র মহিলা সংগঠনও। |
 |
কংগ্রেসও এ বার বার্তা দিতে তৎপর যে, মানুষের অসন্তোষের শরিক তারাও। আর তাই রাহুল গাঁধীর নির্দেশে আজ সন্ধ্যায় ইন্ডিয়া গেটে মোমবাতি মিছিল করেন যুব কংগ্রেসের সমর্থকরাও। তার আগে সনিয়া বলেন, “আর বক্তৃতা নয়, প্রয়োজন অপরাধ দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।” রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও বলেন,“সমাজ ব্যবস্থা যে মহিলা ও শিশুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, তা বার বার প্রমাণ হচ্ছে। সমাজের অসুখ দূর করতে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চাই।” ঘটনাটি নিয়ে কংগ্রেস যে সংবেদনশীল, তা বোঝাতে শিশুটিকে দেখতে আজ এইমস হাসপাতালে যান সনিয়া ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, শিশুটি আরও একটু সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে দেখতে যেতে পারেন মনমোহন এবং রাহুল গাঁধীও।
তবে এর পরেও কংগ্রেস নেতৃত্বের উদ্বেগ যাচ্ছে না। কারণ সনিয়া-রাহুল বুঝতে পারছেন পুলিশ নিষ্ক্রিয়তার যে নজির এ বারও দেখা গিয়েছে, তাতে মানুষের ক্ষুব্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রথমত শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশ কোনও অভিযোগই নিতে চায়নি। তার পরে নিখোঁজ ডায়েরি নিলেও ধর্ষণের অভিযোগ লিখতে চায়নি। আর সেই জন্যই পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার বার্তা দিতে এবার বদ্ধপরিকর সনিয়া-মনমোহন।
গত কালই দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর তেজেন্দ্র খন্নাকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, দোষী পুলিশদের কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। মনমোহনের সেই নির্দেশের পর অভিযুক্ত পুলিশদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার পরে আজ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দেকে ফোন করেন সনিয়া। কেন না দিল্লিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। মনমোহন-সনিয়ার নির্দেশে এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহ এবং দিল্লির পুলিশ কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন শিন্দে। পরে শিন্দে বলেন, “সাম্প্রতিক কালে কিছু ঘটনা নিয়ে আমি বিচলিত। তা সে যোজনা কমিশনের দফতরের বাইরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হেনস্থাই হোক, বা আমার বাড়িতে বিক্ষোভের ঘটনা। দু’টি ঘটনারই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশের আচরণ নিয়েও নানান অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় পুলিশি ব্যবস্থায় একটা ঝাঁকুনি দেওয়া দরকার। |
|
|
 |
|
|