ইজরায়েলি দূতাবাসে বোমা বিস্ফোরণের তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ঘিরে ভারত-ইজরায়েল টানাপোড়েন তীব্র হয়ে উঠেছে। সে দেশের অভিযোগ, তথ্যপ্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও ইরানের প্রতি নরম মনোভাব নিচ্ছে ভারত। বিষয়টি নিয়ে সাউথ ব্লকের উপরে চাপ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে ইজরায়েল।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে দূতাবাসের গাড়িতে ওই বিস্ফোরণের পর ইজরায়েলের অভিযোগের ভিত্তিতে ইরানি সংবাদসংস্থার জনৈক ভারতীয় প্রতিবেদক সৈয়দ মহম্মদ আহমেদ কাসমিকে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করে। অভিযোগ, হামলার ঘটনায় তিনি এবং তাঁর স্ত্রী জাহান আরা জড়িত ছিলেন। জাহান আরাকে গ্রেফতার করা না হলেও তাঁকে কড়া জেরা করা হয়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে দু’জনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় প্রবল ক্ষুব্ধ ইজরায়েল। সম্প্রতি জাহান আরারই লেখা একটি বই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত উদ্বোধন করায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। ইজরায়েলের বক্তব্য, নিজের স্বার্থেই ভারতের উচিত তেহরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ ইরানি জঙ্গি এবং তালিবানের যোগসাজশের সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে ভারতেও।
ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত আলোন উসপিজ সম্প্রতি বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের সঙ্গেও দেখা করে ইরানের জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ঘটনার তদন্ত করে দিল্লি পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করে ছেড়ে দেয় এবং ৪ জন ইরানি দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু ৪ জনই ভারত ছেড়ে পালিয়েছে। বিজেপিকে ইজরায়েলের অনুরোধ, বিষয়টি সংসদে তোলা হোক।
কেন্দ্রের অবশ্য বক্তব্য, বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ভারতের কাছে ইজরায়েলের কূটনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে রাশিয়ার পরে ইজরায়েলই ভারতের বৃহত্তম অংশীদার। তা ছাড়া ভারত নিজেও মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের শিকার। এই টানাপোড়েনের আবহেও সম্প্রতি শুরু হয়েছে ভারত-ইজরায়েল সন্ত্রাস-বিরোধী আলোচনা। তাতে ইজরায়েলের পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আফ-পাক সন্ত্রাসের সংযোগ রয়ে গিয়েছে ইরানেও। ইজরায়েলের ডেপুটি ডিরেক্টর (স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স) জেরমি ইশাকরফ দিল্লির ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “এ ব্যাপারে ইরানের হাত রয়েছে, সন্দেহ নেই।” তাঁর বক্তব্য, ইরান যে হারে ইউরেনিয়াম উৎপাদন বাড়াচ্ছে, তা গোটা বিশ্বের পক্ষে উদ্বেগজনক। ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি রাখাটা খুবই জরুরি।
কেন্দ্রের যুক্তি, পরমাণু অস্ত্র সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে ভারতের ভূমিকা প্রশ্নাতীত। ইরান যাতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার নির্দেশাবলী মেনে এগোয়, তা নিয়ে বরাবরই তেহরানকে চাপে রাখা হয়েছে। কিন্তু শক্তি-প্রশ্নে ইরানের উপরে ভারতের নির্ভরতাও দীর্ঘদিনের। ফলে দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্যের চেষ্টা চালাচ্ছে দিল্লি। এক বছর ধরে ইরান থেকে তেল আমদানি কমিয়ে অন্যান্য শক্তির উৎস খোঁজা হচ্ছে। দূতাবাসের ঘটনার তদন্ত নিয়ে ইজরায়েলকে ইতিবাচক আশ্বাসই দিয়েছে সাউথ ব্লক।
|