টোকাটুকি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক ছাত্র নেতার খাতা বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা গেল, তিনি পাশ করে গিয়েছেন। শুক্রবার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়েন। তাঁরা অবশ্য এই দিনই ওই ছাত্র নেতার ফল প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, ভুল করেই ওই ফল প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল।
ওই ছাত্র নেতার নাম অনিমেষ সরকার। পড়েন মালদহের গাজল কলেজে। গত ২৩ অগস্ট স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের (সাধারণ) পরীক্ষায় বাংলা ষষ্ঠ পত্রে টোকাটুকি করার জন্য তাঁর খাতা বাতিল করে দেওয়া হয়। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক (ভারপ্রাপ্ত) সনাতন দাস বলেন, “টোকাটুকি করার জন্য ওই ছাত্রকে ‘আরএ’ বা বাতিল করা হয়েছিল। তাঁর ওই পত্রের খাতাই মূল্যায়ণের জন্য বিবেচিত হওয়ার কথা নয়, তবু তাঁকে পাশ করানো হয়েছিল। দফতরের ভুলের জন্যই এমন হয়েছে। ওই ছাত্র অকৃতকার্যই হয়েছেন।” সেই সঙ্গেই তিনি স্বীকার করেন, “এই ঘটনায় দফতরের কোনও কর্মী যে জড়িত থাকতে পারেন, তা অস্বীকার করছি না। ওই কর্মীকে খুঁজে বের করার জন্য তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
অনিমেষবাবু গাজল কলেজের ছাত্র। সেই কলেজের ইউনিট সভাপতি। টোকাটুকি করে ধরার পড়ার কথা তিনিও অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “আমি টোকাটুকি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু কেমন করে পাশ করেছি বলতে পারব না।”
গাজল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পরীক্ষায় টোকাটুকির অভিযোগে কলেজের শিক্ষকদের হাতেই ধরা পড়েন অনিমেষবাবু এবং ছাত্র পরিষদের ইউনিট সভাপতি বাপ্পা সাহা সহ মোট ছ’জন। ওই দিন পরীক্ষা শেষে গাজল কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই ছয় ছাত্রকে যে টোকাটুকির জন্য ধরা হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামককে লিখিত ভাবে জানিয়েও দেন। পনেরো দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে কিন্তু দেখা যায় ওই ছয় ছাত্রের মধ্যে পাঁচ জন অকৃতকার্য হলেও অনিমেষবাবু পাশ করে গিয়েছেন। ওই পত্রে তিনি মোট ৫০ নম্বরের মধ্যে ১৭ নম্বর পেয়েছেন।
ঘটনার কথা জানাজানি হলে ছাত্রপরিষদ কর্মীরা হইচই শুরু করেন। গাজল কলেজের ছাত্র পরিষদের বাপ্পাবাবু বলেন, “আমরা এক সঙ্গে ৬ জন নকল করতে গিয়ে ধরা পড়েছি। পাঁচ জন ফেল করলাম। তৃণমূলের নেতা বলে অনিমেষকে পাশ করানো হল।” গাজল কলেজে অধ্যক্ষ সামসুল হকের কথায়, “কেমন করে ওই ছাত্রকে পাশ করানো হল বুঝতে পারছি না। বিষয়টি কাউন্সিলের বৈঠকে তুলব।” বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সনাতনবাবু জানান, শুক্রবারই বিষয়টি নজরে আসে। তারপরে গাজল কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি পাঠানো হয় যে ওই ছাত্রের রেজাল্ট প্রত্যাহার করে নতুন রেজাল্ট পাঠানো হচ্ছে। সনাতনবাবু বলেন, “ওই ছাত্রকেও ২৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ পাঠানো হবে।”
এই ঘটনায় অস্বস্তিতে গাজল কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রও। তিনি বলেন, “টোকাটুকি করতে গিয়ে ধরা পড়া ছাত্রকে কেমন করে পাশ করানো হল জানি না। এর পিছনে কারা রয়েছেন, খতিয়ে দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে তদন্ত করতে বলব। তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা বলেই ওই ছাত্রকে পাশ করানো হয়েছে, এমন অভিযোগ ঠিক নয়।” |