|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৪... |
|
মুড়িমিছরি একদর হইয়াছে |
বইপোকা |
বঙ্গীয় বইপাড়ায় নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ কেবল তাঁহার গভীর পাঠ ও সুরম্য লেখনীর জন্যই স্মরণীয় হইয়া থাকিবেন না। বঙ্গীয় গ্রন্থনির্মাণে দিকবদল ঘটাইয়াছিল তাঁহার গ্রন্থগুলি, বাংলা গ্রন্থের ইতিহাসে সেই স্মরণীয়তার সহিতও জড়াইয়া থাকিবে প্রয়াত সেই প্রজ্ঞার নাম। সেই দিকবদল চিত্রিত গ্রন্থের ক্ষেত্রে। ‘চিত্রিত’ শব্দের অর্থ কী? দেশি-বিদেশি নানাবিধ ‘চিত্রিত’ অথবা illustrated গ্রন্থ যে ধারণা তৈরি করে তাহা বলে যে, গ্রন্থে চিত্র থাকিলেই তাহাকে ‘চিত্রিত’ বলিয়া দেওয়া যায় না। ‘চিত্রিত’ অভিধা পাইবার প্রথম শর্ত চিত্রসকল গ্রন্থে কী ভূমিকা পালন করিতেছে তাহার বিচার। যদি চিত্রগুলি নিছক অলংকরণ হয়, পড়িতে পড়িতে যে ক্লান্তি আসে তাহা দূর করিবার জন্য কয়েকটি চিত্রমাত্র হয়, তবে সেই গ্রন্থকে ‘চিত্রিত’ বলা যায় না। কারণ ‘চিত্রিত’ গ্রন্থে লেখকের সৃজনের যেন কিছুটা সমান্তরালেই চলিতে থাকে চিত্রীর সৃজন। এই বিচারে শ্রীপান্থ-র গ্রন্থগুলি (মেটিয়াবুরুজের নবাব, কেয়াবাৎ মেয়ে, মোহন্ত-এলোকেশী সম্বাদ, বটতলা—আনন্দ সংস্করণ) যথার্থ চিত্রিত গ্রন্থের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। কিন্তু এগুলির বাহিরেও শ্রীপান্থ-র বেশ কয়েকটি গ্রন্থ, যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকিলেও, নিছক দুয়োরানির ন্যায় পড়িয়া রহিয়াছে। জিপসীর পায়ে পায়ে, দেবদাসী, হারেম ও ঠগী গ্রন্থকয়টির (দে’জ) কথা এই সূত্রে মনে পড়িবে। গবেষণাঋদ্ধ অথচ চরম সুখপাঠ্য এই গ্রন্থগুলি নিছক কয়েকটি সাদা-কালো চিত্র অবহেলায় গুঁজিয়া দিয়া নির্মিত হইয়াছে। দু-একটিতে চিত্র নাইও। এমনকী ঠগী গ্রন্থের প্রচ্ছদচিত্রটি কাহার অঙ্কিত সে তথ্যটুকুও দেওয়া হয় নাই। বইপাড়ায় এই প্রকারে মুড়ি-মিছরি একদর হইয়া উঠিতেছে, ইহা বিশেষ আশঙ্কার বিষয়। |
|
|
|
|
|