উত্তর কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
দুষ্কৃতী-রাজ
শিকেয় প্রকল্প
কেন্দ্রের টাকায় তৈরি হয়েছিল মডেল প্রকল্প। কিন্তু চালু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ, এর কিছু দিনের মধ্যেই চুরি যায় প্রকল্পে ব্যবহৃত কয়েক কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার ও ওজন যন্ত্র। পুরকর্তাদের দাবি, একাধিক বার পুলিশে অভিযোগ জানালেও উদ্ধার হয়নি সেগুলি। উত্তর দমদম পুরসভা এলাকায় ওই প্রকল্পের জায়গা এখন সুনসান। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাত বাড়লেই সেখানে মদ্যপ, জুয়াড়ি আর সমাজবিরোধীদের ঠেক শুরু হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে উত্তর দমদম পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কল্যাণী রোডের ধারে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থে তৈরি হয় ‘কঠিন বর্জ্য পদার্থ অপসারণ ও প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প’। এ জন্য কেন্দ্র দিয়েছিল ৬ কোটি টাকা। উত্তর দমদম ও নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার জন্য প্রকল্পটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় কেএমডিএ। মূল প্রকল্প নির্মাণের জন্য কেন্দ্র টাকা দিলেও প্রকল্পের জন্য নিজ নিজ জমির পাশাপাশি কিছুটা জমি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের থেকে লিজ নেয় উত্তর দমদম পুরসভা। জমির চারপাশে প্রায় ৫ ফুট উঁচু পাঁচিল তৈরি করে পুরসভা। প্রকল্পের জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্রও নেওয়া হয়।
২০০৯-এর ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তত্‌কালীন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। বসানো হয় নানা যন্ত্রপাতি ও কম্পিউটার চালিত একটি ওজনযন্ত্র। তৈরি করা হয় অসংখ্য রিজার্ভার। সেগুলির উপরে টালির ছাউনি তৈরি করা হয়। প্রকল্পের মাঠে বিছানো হয় লক্ষাধিক টাকা মূল্যের পলিথিন-কার্পেট। কিন্তু সার নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার দিন পনেরো পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্গন্ধের অভিযোগ তুলে প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের আপত্তিতে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পটি। অভিযোগ, এর বছরখানেক পর থেকেই চুরি হতে থাকে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, পলিথিন-কার্পেট। এমনকী, রিজার্ভারের ছাউনির টালিগুলিও চুরি হয়ে যায়। ফাঁকা জায়গায় বাড়তে শুরু করে সমাজবিরোধীদের উপদ্রব। এক পুরকর্তার দাবি, নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে যন্ত্রপাতি চুরি করা হয়।
 
স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি তৃণমূলের সুলতানা বানু বলেন, “ওই প্রকল্পের জন্য এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াত। ফলে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পরে সব কিছুই চুরি হয়ে গিয়েছে। এখন মাঝে মাঝে ওখানে রাস্তা নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাকর্মীরা থাকেন। বাকি সময়, বিশেষত রাতে জায়গাটি কার্যত সমাজবিরোধীদের দখলে চলে যায়।” উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) সিপিএমের শিবশঙ্কর ঘোষ বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের অসন্তোষের পিছনে রাজনৈতিক কারণই মূলত দায়ী। পুরসভা প্রকল্পের জন্য নিরাপত্তাকর্মীও নিয়োগ করেছিল। তাঁদের মারধর করেই প্রকল্পের সরঞ্জাম চুরি করে দুষ্কৃতীরা। একাধিক বার পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
ওই প্রকল্পের কোনও ভবিষ্যত্‌ নেই। এখন বরাহনগর পুরসভার মাঠকলে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। আর এই প্রকল্পের জায়গায় রাতে ঠেক নেয় মদ্যপ, জুয়াড়ি আর সমাজবিরোধীরা।” উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের সুনীল চক্রবর্তী বলেন, “এই প্রকল্পের আর কোনও ভবিষ্যত্‌ দেখছি না। পুলিশ ও প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কিছু উদ্ধার হয়নি। এখানে অসামাজিক কাজকর্ম হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি, পুলিশকে তা জানিয়েছি। প্রয়োজনে আবার বলব।” যদিও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার সঞ্জয় সিংহ বলেন, “ওই প্রকল্পের জিনিসপত্র চুরি হয়েছে বলে কোনও অভিযোগ পাইনি। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.