সম্পাদকীয় ২...
সুবিচারের দায়
মামলায় যদি সরকারের বিভিন্ন দফতর জড়িত থাকে এবং সরকারি আইনজীবীরা মামলাগুলি পরিচালনা করেন, তবে ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সঞ্চালনের জন্য তাঁহাদের সহযোগিতা অত্যাবশ্যক হইয়া ওঠে। অথচ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন আদালতের বিচারপতিরা অনেক সময়েই সেই সহযোগিতা পাইতেছেন না। প্রথমত, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি আইনজীবীরা শুনানির দিন আদালতে সময় মতো হাজিরা দিতেছেন না। তাঁহাদের অনুপস্থিতি মামলাকে অনাবশ্যক দীর্ঘায়িত করিতেছে। দ্বিতীয়ত, আদালতের নির্দেশ প্রায়শ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরকে জানানোও হইতেছে না, ফলে দফতর হইতে সময় মতো কোনও উত্তরও আসিতেছে না। আর সেই না-আসার ‘যুক্তি’তে আইনজীবীরা শুনানির দিন পিছাইয়া দেওয়ার আর্জি জানাইতেছেন। কলিকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা এই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে এতটাই ক্ষুব্ধ যে, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে এ জন্য ক্ষোভ জানাইয়াছেন।
বিচারপতিরা বলেন নাই যে, এই ঘটনাপরম্পরায় সরকার তথা শাসক দলের কোনও নিহিত অভিপ্রায় বা অভিসন্ধি রহিয়াছে। কিন্তু যদি ক্রমাগত আদালতের সহিত এ ধরনের অসহযোগিতা চলিতে থাকে, তবে সেই সংশয়টিও কিন্তু জাগিতে পারে। বিশেষত সরকারি আইনজীবীদের তরফে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলিকে আদালতের নির্দেশ যথাসময়ে না-জানানো এবং তাহার পর ‘দফতর হইতে নির্দেশ আসে নাই’ বলিয়া আদালতের কাছে সময় চাওয়া একটি গর্হিত অনিয়ম। এই অনিয়ম কেবল দুর্ভাগ্যজনক নহে, সন্দেহজনক। রাজ্য সরকারের আইন মন্ত্রক ও তাহার ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর তাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিচার করিয়া দেখা জরুরি। যদি ইহা কেবল ওই আইনজীবীদের তরফে শৈথিল্য বা গড়িমসির ব্যাপার হয়, তবে বুঝিতে হইবে তাঁহারা ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের যোগ্যই নহেন। প্রসঙ্গত, এই অভিযোগ অশ্রুত নয় যে, শাসনক্ষমতায় আরোহণের পর তৃণমূল কংগ্রেস পূর্বসূরি বামফ্রন্টের মতোই অনুগত আইনজীবীদের দিয়া সরকারি কৌঁসুলিদের প্যানেল বোঝাই করিয়াছে। আনুগত্যের উপর জোর দিলে যোগ্যতার বিবেচনা গৌণ হইয়া যায়।
এই অযোগ্যতাই একের পর এক মামলায় সরকারের হতমান হওয়ার কারণ কি না, তাহাও বিচার্য। সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দিবার আইন হইতে শুরু করিয়া জেলায়-জেলায় স্পোর্টস্ কাউন্সিল ভাঙিয়া দেওয়া, নির্বাচিত সমবায় সমিতিগুলির মেয়াদ সঙ্কুচিত করা, বিষমদে মৃতদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিপূরণ, ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রেই যে সরকারি আইনজীবীরা আদালতকে শাসক দলের যুক্তি বুঝাইতে ব্যর্থ হইয়াছেন। বিচারপতিরা আদালতের মূল্যবান সময়ের অপচয়ের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছেন। কলিকাতা হাইকোর্টে এমনিতেই তিন লক্ষের বেশি মামলা মীমাংসার অপেক্ষায়। বিলম্বিত বিচার যে অবিচারের শামিল, তাহা তো সরকারও জানে। বিচারপ্রার্থী জনসাধারণকে সুবিচার দেওয়ার দায় কি কেবল বিচারকের?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.