চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত
নবিংশ শতকে ভারতের নবজাগরণে স্বামী বিবেকানন্দের প্রধান অবদান সম্ভবত এটাই যে তিনি কর্মসাধনার সঙ্গে অধ্যাত্মসাধনার সমন্বয় ঘটাতে চেয়েছিলেন। ভারতের অধ্যাত্মসাধনার ঐতিহ্যকে আধুনিক বিশ্বের সামনে তিনি তুলে ধরেছিলেন। সেই উত্তরাধিকার আজও প্রবাহিত হয়ে চলেছে রামকৃষ্ণ মিশনের বহুমুখী কর্মধারার মধ্য দিয়ে। কর্মের সঙ্গে সৌন্দর্যের সমন্বয়ের স্বপ্নও বিবেকানন্দের চিন্তার একটি বৈশিষ্ট্য। স্বদেশের ও বিশ্বের শিল্প-ঐতিহ্যের সঙ্গে তাঁর গভীর পরিচয় ছিল। শিল্পের প্রবহমানতাকেও তিনি নানা ভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে গেছেন। তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষে তাঁর চিন্তা ও কর্মধারা নিয়ে যখন নানা দিক থেকে চর্চা হচ্ছে, তখন স্বাভাবিক যে দৃশ্যকলার ভাষাতেও তাঁর আদর্শের প্রতি আলোকপাতের চেষ্টা হবে।
আইসিসিআর-এর চারটি বড় গ্যালারি জুড়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল সারা ভারতের প্রবীণ ও নবীন শিল্পীদের ছবি ও ভাস্কর্য নিয়ে প্রদর্শনী। প্রদর্শনীটি উপস্থাপিত করেছেন রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের পক্ষে এর সচিব তথা সম্পাদক স্বামী সর্বভূতানন্দ। পরিকল্পনা করেছেন বিশিষ্ট শিল্পতাত্ত্বিক অরুণ ঘোষ। প্রদর্শনীর স্মারকগ্রন্থে স্বামী বিবেকানন্দের শিল্পচিন্তা নিয়ে প্রজ্ঞাদীপ্ত আলোচনা করেছেন তিনি। দেখিয়েছেন রামকৃষ্ণ মিশনের বিভিন্ন স্থাপত্য পরিকল্পনায় কেমন করে প্রতিফলিত হয়েছে স্বামীজির কলা-আদর্শ। স্বামীজির চিন্তা নিবেদিতার মাধ্যমে কেমন করে উদ্বুদ্ধ করেছে ভারতশিল্পের নবজাগরণকে, এ বিষয়েও বিস্তৃত আলোকপাত করেছেন।
বিবেকানন্দের ভাবাদর্শকেও অনুধাবনের চেষ্টা করেছেন অনেক শিল্পী সাম্প্রতিক আধুনিকতার ভাষায়। এই দু’টি দিক থেকেই শিল্পীরা স্বামীজির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। এর পাশাপাশি এ রকম কাজও রয়ে গেছে বেশ কিছু যেখানে শিল্পীর নিজস্ব রূপভাবনার সম্যক প্রকাশ ঘটেনি। একটু গতানুগতিক ভাবেই বিবেকানন্দের প্রতিকৃতি এঁকে বা গড়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে চেয়েছেন অনেকে। এরকম অল্প কিছু সীমাবদ্ধতার বাইরে প্রদর্শনীটি দু’টি দিকের উপর সমৃদ্ধ আলোকপাত করে। এক, নব্য ভারতীয় ঘরানা কেমন করে আমাদের আধুনিকতাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। দুই, আজকের সমাজবিকাশে আধ্যাত্মিকতার ভূমিকা।
শিল্পী: নাগজি পটেল
এই দু’টি ধারার দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায় প্রায় সমসাময়িক কিন্তু ভিন্ন আদর্শে বিশ্বাসী দুই প্রবীণ শিল্পীর দু’টি ছবির। ধীরেন্দ্রনাথ ব্রহ্মের টেম্পারার অনামা ছবিটিতে নব্য ভারতীয় ধারা অনুসারী পুরাণকল্পমূলক আধ্যাত্মিকতার সমৃদ্ধ প্রকাশ। সতীশ গুজরালের ‘এনার্জি আনবাউন্ড’ বা ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ শীর্ষক ছবিদু’টিতে উদ্ভাসিত হয় আর এক ধরনের আধ্যাত্মিকতা যা সাম্প্রতিকের সংঘাতময় জীবনযাপন থেকে উঠে এসেছে। নব্য ভারতীয় ধারার আর এক জন শিল্পী অমলনাথ চাকলাদার ‘দ্য ওয়ান্ডারার’ শিরোনামে টেম্পারায় এঁকেছেন পরিব্রাজক স্বামীজির প্রতিকৃতি। তাঁরই সমসাময়িক শিল্পী গণেশ পাইন এঁকেছেন শ্রীচৈতন্যের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি। ১৯৬০-এর দশকের শিল্পীদের ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক উন্মীলনের তৃতীয় একটি মাত্রা পাই লক্ষ্ম কে গৌড়ের দু’টি ছবিতে।
কাঞ্চন দাশগুপ্ত ‘সিম্বল অ্যান্ড সিম্বলিজম’ ছবিতে আধ্যাত্মিকতার এক প্রতীকী আবহ তৈরি করেছেন রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীকটিকে সামনে রেখে। শুভাপ্রসন্ন-র ‘অ্যাওকেনিং’ ছবিতে রুদ্ধদৃষ্টি শোষিত মানুষের রূপকল্প। তমসার প্রতীকী ভাষ্য উঠে এসেছে আর. বি. ভাস্করন, পার্থপ্রতিম দেব, এম সেনাথিপতি, শেখর রায়, সিদ্ধার্থ ঘোষ, চন্দ্র ভট্টাচার্য, পরাগ রায়, পার্থ দাশগুপ্ত, ছত্রপতি দত্ত, মিঠু সেন প্রমুখ শিল্পীর ছবিতে। এই জীবনবোধের তাৎপর্যেই প্রদর্শনীটি প্রাসঙ্গিকতা পায়।
ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে এ রকম তমসাদীর্ণ অধ্যাত্মচেতনার প্রতীকী প্রকাশ ঘটেছে নাগজি পটেলের পাথরের রচনাটির মধ্যে। এর মধ্যে খুব প্রচ্ছন্ন ভাবে টের পাওয়া যায় স্বামীজির উপস্থিতি, তেমনই পারিপার্শ্বিক অন্ধকার এবং তাকে অতিক্রম করার ইঙ্গিতও। এই বহুমুখী মাত্রাময়তাতেই অনুভব করা যায় শিল্পের মুক্তি। উমা সিদ্ধান্তের ‘নিবেদিতা’ ও মৃণালকান্তি গায়েনের ‘মেডিটেশন’ রচনাদু’টিও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ছাড়াও ভাস্কর্য দিয়েছেন নিরঞ্জন প্রধান, বিমানবিহারী দাস, বিমল কুণ্ডু, অনিট ঘোষ, এস. নন্দগোপাল, রাজেন্দ্র টিকু, সন্দীপ চক্রবর্তী প্রমুখ আরও অনেক শিল্পী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.