কাজ করেও কেন অনেকের নাম পে-রোলে ওঠেনি? আবার ভুয়ো নাম কী ভাবে পে-রোলে উঠল? কোনও দিন কাজ না করেই কেউ কেউ টাকা তুলছেন? এই সব অভিযোগের জবাব চাইতে শুক্রবার দুপুরে তৃণমূলের ব্যানারে খয়রাশেলের পাঁচড়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান ও এক লোকাল কমিটির সদস্যকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখালেন বাহাদুরপুর সংসদের কিছু জবকার্ডধারী। তাঁদের অভিযোগ, প্রধানত দু’টি। প্রায় সাত মাস পরে একটি ১০০ দিন প্রকল্পে কাজের টাকা দেওয়া হচ্ছে। অথচ বেশ কিছু জবকার্ডধরীর নাম বাদ পড়েছে। অবার এমন অনেকেরই পে-রোলে নাম রয়েছে এবং টাকা তুলেছেন যাঁরা একদিনও কাজ করেননি। সেই তালিকার মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামী ও সিপিএমের এক লোকাল কমিটির সদস্যের মতো প্রায় ৩০টি ভুয়ো নাম রয়েছে।
খয়রাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার বলেন, “টাকা দেরিতে পাওয়া বা ভুয়ো নামে টাকা তোলার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।” |
মজুরির দাবি: খয়রাশোলে পাঁচড়া পঞ্চায়েতে জবকার্ড হাতে
একশো দিন প্রকল্পের শ্রমিকেরা। —নিজস্ব চিত্র |
এ দিন বিক্ষোভ চলাকালীন প্রধানদের পঞ্চায়েত কার্যালয় থেকে বাইরে আসতে বাধাদেন বিক্ষোভকারীরা। প্রধান কার্যত ভুল স্বীকার করলে এবং দ্রুত সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে। যদিও ১০০ দিনের কাজ করে দীর্ঘদিন টাকা পাচ্ছেন না এই আভিযোগে দিন কয়েক আগেই পাঁচড়া পঞ্চায়েতের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বেশ কিছু জবকার্ডধারী। শুক্রবারের ঘটনার পর স্বভাবতই বিরক্ত এলাকার মানুষ। পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্র জানা গিয়েছে, ওই পঞ্চায়েতের বাহাদুরপুর গ্রামের একটি নদী বাঁধ সংস্কারের কাজে নিযুক্ত ছিলেন এ দিনের বিক্ষোভকারীরা। পরেশ বাগদি, শেখ রহমতুল্লাহ, শেখ মসির, ইজার হোসেনরা জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পে প্রায় ২০০ জন ৪ দিন করে কাজ করেছেন। দুর্গাপুজোর আগে হওয়া সেই কাজের জন্য বহু বার পঞ্চায়েতের দরজায় ঘুরতে হয়েছে। তাঁদের ক্ষোভ, “শেষ পর্যন্ত যদিও বা টাকা এল দেখলাম তাতে আমাদের নাম নেই। তাই বাধ্য হয়েই প্রতিবাদ করতে এসেছি।”
স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ সুকুর আলির দাবি, “প্রাধনের আশ্বাসে এতদিন সকলে চুপ করে ছিলেন। কিন্তু কাজ করেও নাম না থাকা এবং এত ভুয়ো নাম থাকা মেনে মেওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, সাজাপ্রাপ্ত আসামীর নামেও টাকা উঠেছে এবং শিশির বাগদি নামে সিপিএমের লোকাল কমিটির এক সদস্য কাজটির সচিবের জায়গায় ছিলেন তিনিও টাকা তুলেছেন।” ওই পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান দামোদর বাগদি অবশ্য বলেন, “কিছু ভুলভ্রান্তি হয়েছে। সকলকে ডেকে নতুন মাস্টার রোল তৈরি করে টাকা দেওয়া হবে।” কিন্তু কাজ না করে টাকা তোলা, মাস্টার রোলেই তাঁদের নাম কীভাবে এল তার জবাব মেলেনি। আর টাকা দিতে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে প্রধানের সাফাই, “প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি শ্রমিক কাজে লেগেছিলেন। দু-লক্ষ টাকা বরাদ্দের কাজ বেড়ে হয় প্রায় পাঁচ লক্ষ। তাই মাস্টার রোল তৈরিতে এবং দু’টি ধাপে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রথম ধাপে ২ লক্ষ টাকা আগেই দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া চলছে।” শিশির বাগদি নামে ওই সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্যের যুক্তি, “আমি কাজ দেখাশোনা করেছি। টাকা নেব না!” |