দুই গুরুর গোড়ায় গলদ, মন্দার তত্ত্বে ঘা দিলেন গবেষক
‘বামন’ হয়েও চাঁদের ‘কলঙ্ক’ ধরে ফেললেন টমাস হের্ন্ডন।
প্রথমটা বিশ্বাস হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। কিন্তু শেষমেশ নিজেকে প্রায় চিমটি কেটে বছর আঠাশের টমাস দেখলেন, দুই পৃথিবী বিখ্যাত অর্থনীতিবিদের ততোধিক বিখ্যাত তত্ত্বের হিসেবের ভুল ধরে ফেলেছেন তিনি। যা নিয়ে আজ দুনিয়াজুড়ে হইচই। বিশ্বজোড়া বিতর্ক। এমনকী প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, মন্দা কাটাতে খরচ কমানোর তেতো দাওয়াই তা হলে কতটা সঠিক?
অথচ গল্পের শুরুটা ছিল নিতান্ত মামুলি। ম্যাসাচুসেটস্ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করতে আসা টমাসকে তাঁর অধ্যাপকেরা বললেন নতুন করে তথ্য (ডেটা) সংগ্রহ করে রিনহার্ট-রজফ তত্ত্ব প্রমাণ করতে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক কার্মেন রিনহার্ট এবং কেনেথ রজফের ওই গবেষণাকে সারা বিশ্বের শিক্ষা জগৎ এক ডাকে চেনে। তাঁরা দেখিয়েছিলেন, কোনও উন্নত দেশের ঋণ জাতীয় আয়ের ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে, তা বৃদ্ধিকে পুরোপুরি থমকে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কারণ, তখন বৃদ্ধি তো দূরের কথা, বরং কিছুটা সঙ্কুচিতই হবে সে দেশের অর্থনীতি।

কেনেথ রজফ।
দুই গুরুর এক জন।
টমাসও নিশ্চিন্ত ছিলেন যে, ওই একই ফলাফল উঠে আসবে তাঁর জোগাড় করা তথ্যে। কিন্তু এ কি গেরো? অঙ্ক আর মেলে না!
বার বার কষার পরেও কিছুতেই ওই তত্ত্বের ধারেপাশেও পৌঁছতে পারছেন না টমাস। হিসাব দেখাচ্ছে, গলা অব্দি ধারে ডুবে থাকার দরুন বৃদ্ধি ধাক্কা খাবে ঠিকই। কিন্তু তবুও তা থাকবে ২.২ শতাংশের আশেপাশে।
মাস্টারমশাইদের বলার আগে নিজেই প্রবল বিড়ম্বনায় পড়লেন টমাস। অর্থনীতির পড়ুয়া হিসেবে তিনি বিলক্ষণ জানেন অর্থনীতিবিদ হিসেবে ওই দুই হার্ভার্ড অধ্যাপকের দুনিয়াজোড়া খ্যাতির কথা। জানেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা রিনহার্ট মুখ্য অর্থনীতিবিদ ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন বিশ্বের প্রথম সারির ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কে। কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারে (আইএমএফ)। সেখানে আবার মুখ্য অর্থনীতিবিদ পদে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে দাবায় গ্র্যান্ডমাস্টার রজফের।
শুধু তা-ই নয়। তাঁদের ওই তত্ত্ব এতটাই বিখ্যাত, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরেও তা বহুচর্চিত। খাস মার্কিন মুলুকে আগের বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ওই ‘থিওরি’ বার বার তুলে এনেছেন রিপাবলিকানরা। বোঝাতে চেয়েছেন, প্রয়োজনে সরকারি ব্যয় ছেঁটেও ঋণের বোঝা কমানো কেন এত জরুরি। এই একই যুক্তির উপর আস্থা রেখেছে ব্রিটেন সমেত ইউরোপের অনেক দেশও। তাই সেখানে যে এমন গোড়ায় গলদ থাকতে পারে, সেই সম্ভাবনা অন্তত প্রথম দিকে ভুলেও মাথায় আসেনি তাঁর।
কিন্তু বার বার ব্যর্থতায় বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সাহস করে রিনহার্ট আর রজফের কাছে নিজের সমস্যা জানিয়েছিলেন টমাস। তাঁকে নিজেদের হিসাবের এক্সেল শিট দিয়েওছিলেন ওই দুই অধ্যাপক। আর তা দেখতে গিয়েই চক্ষু চড়ক গাছ।
টমাস দেখলেন, হিসাব কষার সময় ২০টি দেশের মধ্যে ১৫টি দেশের তথ্য নিয়েছেন রিনহার্ট-রজফ। তাদের মধ্যে আবার এমন দেশ রয়েছে, যার বৃদ্ধি সেই সময় শূন্যের অনেক নীচে। সেই কারণেই হিসাবে ওই গলতি।
বার বার অঙ্ক কষেও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেননি। ফোনে ডেকে নিয়েছিলেন বান্ধবীকে। জিজ্ঞাসা ছিল, “ভুল দেখছি না কি?” ভরসা জুগিয়ে বান্ধবী অবশ্য বলেছিলেন, “মনে হয় না।”
দুনিয়া জুড়ে এ নিয়ে হইচই শুরু হওয়ার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক অবশ্য এ দিন মেনে নিয়েছেন, ভুল তাঁদেরই। তবে তাতে তত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্য পাল্টাবে না বলেই তাঁদের দাবি।
কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, যে তত্ত্বকে সামনে রেখে ধার কমাতে সরকারি খরচ ছাঁটাইয়ের এত তোড়জোড়, সেটাই তো ভুল! তা হলে?
এ নিয়ে আগামী দিনে নতুন করে অনেক গবেষণা হবে নিশ্চয়ই। উঠে আসবে অনেক নতুন তথ্য। কিন্তু আজ অন্তত গোলিয়াথের সঙ্গে ডেভিডের ‘যুদ্ধ জেতা’র দিন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.