বঞ্চিত ছিটমহলের খুদেরা
পরিচয়পত্র নেই, স্কুলের দরজা বন্ধ
রিচয়পত্র না থাকায় ছিটমহলের শিশু ও কিশোরদের ৬০ শতাংশ স্কুলে স্কুলের আঙিনায় পা রাখতে পারছে না। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
গত ১৩ এপ্রিল থেকে কোচবিহারের দিনহাটা ও মেখলিগঞ্জ মহকুমা লাগোয়া ১০টি ছিটমহলে ওই সমীক্ষার কাজ করে ৯ জনের একটি দল। বুধবার সমীক্ষা শেষ হয়। সমীক্ষক দলের পক্ষে ভূগোল বিভাগের শিক্ষক সনৎকুমার গুছাইত বলেন, “যত দিন না ছিটমহল বিনিময় হচ্ছে, তত দিন শিশুমহলের শিশু-কিশোরদের নির্দিষ্ট কোনও শংসাপত্রের ভিত্তিতে মূল ভূখণ্ডের স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করা দরকার। না হলে কোনও দিন তাদের স্কুলমুখী করা সম্ভব হবে না।”
দিনহাটা লাগোয়া মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিণ মশালডাঙা, পূর্ব ও পশ্চিম বাকালিরছড়া, বাত্রিগছ ও পোয়াতেরকুঠি এবং মেখলিগঞ্জ লাগোয়া ছিটকুচলিবাড়ি, বালাপুখিরি, ধবলশ্বেতি মৃগীপুর ছিটমহলে সমীক্ষার কাজ করেছে দলটি। সমীক্ষকেরা জানান, প্রতিটি ছিটমহলের ৩০টি পরিবারের কাছে নির্দিষ্ট প্রশ্নমালা হাজির করা হয়েছিল। তাঁদের উত্তর নথিভুক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তিনশো পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে প্রায় সাতশো শিশু ও কিশোর রয়েছে। প্রত্যেকের বয়স ৫ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। তার মধ্যে চারশো জনের বেশি স্কুলের মুখ দেখেনি।
সমীক্ষক দলের তরফে মুকুল চক্রবর্তী বলেন, “আর্থিক সমস্যা তো আছেই। শিক্ষা নিয়ে সচেতনতার অভাবও স্পষ্ট। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে পরিচয়পত্র না থাকা। তার জন্যই সমস্যা জটিল হয়েছে।” বিশদে খোঁজ নিতে গিয়ে সমীক্ষকেরা জেনেছেন, ছিটমহলবাসীর ভোটার পরিচয়পত্র, জন্মের শংসাপত্র, রেশন কার্ডের মতো নথি নেই। ফলে দেশের মূল ভূখণ্ডে থাকা স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করানো অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। যে সমস্ত পরিবারের আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভাল, তাঁরা ছেলেমেয়েদের পরিচয় ভাঁড়িয়ে তথ্য গোপন করে স্কুলে ভর্তি করছেন। কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই সামান্য। বাকি শিশু-কিশোরদের বড় অংশই স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না।
সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ছিটমহলের প্রতি পরিবারের মাসিক গড় আয় মাত্র হাজার দুই টাকা। জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ বেশি। উর্বর জমিতে উৎপাদন বেশি হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে কিছু না থাকায় তা হাটে নিয়ে যাওয়া যথেষ্ট কষ্টসাধ্য কাজ। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটিও এই সমীক্ষার সঙ্গে একমত।
কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ ঘেরা ভারতের ১১১টি ও ভারত ভূখণ্ড ঘেরা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। মূল ভূখণ্ডের স্কুলে ভর্তির সমস্যার জন্য কমিটির উদ্যোগে ছিটমহলগুলিতে ১২টি প্রাথমিক স্কুল চালু করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হাতে গোনা।
ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “আমাদের স্কুলের সরকারি অনুমোদন নেই। তাই ওই স্কুলের শংসাপত্র ভবিষ্যতে কোনও কাজে লাগবে না ভেবে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে তেমন আগ্রহ বোধ করেন না বাবা-মায়েরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষকেরা সমস্যাটি খুঁজে বের করায় ভাল লাগছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.