আপৎকালীন চিকিৎসায় তথ্য জোগাতে উদ্যোগী তিন বাঙালি
ন্ধুর সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে যাদবপুর থেকে রিষড়া যাচ্ছিলেন শিবাজী চৌধুরী। বি টি রোডে চিড়িয়ামোড়ের কাছে আচমকা উল্টো দিক থেকে আসা লরির ধাক্কায় ছিটকে পড়েন তিনি। বন্ধু বরাতজোরে প্রাণে বাঁচলেও গুরুতর আহত হন শিবাজী। ওই অবস্থায় তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে, তা ঠিক করতেই অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। পুলিশের সহায়তায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলেও প্রাণে বাঁচেননি শিবাজী।
গড়িয়াহাটে চৈত্র সেলের বাজার করতে এসে অটোর ধাক্কায় মারাত্মক জখম হয়েছিলেন সোনারপুরের বাসিন্দা স্বপ্না রায়কর্মকার। সঙ্গে ছিলেন মেয়ে কাকলি। আশপাশের হাসপাতাল সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না কাকলির। ওই অবস্থায় ঠিক কোথায় ভর্তি করলে মায়ের সব চেয়ে ভাল চিকিৎসা হবে, বুঝতেই পারছিলেন না তিনি। এ ভাবে চিন্তাভাবনা করতে করতেই পার হয়ে যায় ‘গোল্ডেন আওয়ার।’ চিকিৎসকদের মতে, দুর্ঘটনার ঠিক পরের সব চেয়ে প্রয়োজনীয় একটি ঘণ্টা, যে সময়ের মধ্যে আহতের যথাযথ চিকিৎসা পাওয়াটা তাঁর জীবনের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
ওই মূল্যবান সময় বাঁচিয়ে আম-কলকাতাবাসীকে দ্রুত চিকিৎসার দোরগোড়ায় হাজির করতে তিন প্রবাসী বাঙালি মিলে তৈরি করেছেন একটি সংস্থা। যার পোশাকি নাম ‘মিশন আরোগ্য’।
সেই তিন বাঙালি। (বাঁ দিক থেকে) রীতা ভট্টাচার্য, রাজীব সেনগুপ্ত ও তন্ময় মহাপাত্র।
এই তিন জন হলেন: আমেরিকার ওমাহা নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োইনফরমেটিক্স-এর গবেষক রাজীব সেনগুপ্ত, ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজিস্ট তন্ময় মহাপাত্র এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী রীতা ভট্টাচার্য। আমেরিকার রকেফেলার ফাউন্ডেশনের অর্থসাহায্যে ওই সংস্থা তৈরি করছে ‘কলকাতা মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি সিস্টেম’ (কেএমইএস)। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে যে কোনও অবস্থায় যে কোনও ব্যক্তি টেলিফোনে, এসএমএসে বা ইন্টারনেটে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যগত সাহায্য পেতে পারবেন। ইতিমধ্যেই কলকাতা শহরের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালকে নিয়ে হয়েছে তথ্য-ভাণ্ডার তৈরির কাজ।
রকেফেলার ফাউন্ডেশনের শতবর্ষে আটটি সংস্থাকে উন্নয়নমূলক কাজকর্মে অর্থসাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সারা পৃথিবীতে মোট দু’হাজার সংস্থা ওই সাহায্য পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আটটি সংস্থাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রকেফেলার ফাউন্ডেশন। ওই শেষ আটের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে এই ‘মিশন আরোগ্য’।
রাজীব-রীতারা জানাচ্ছেন, তাঁরা মূলত তিনটি তথ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এক) যে জায়গা থেকে কোনও ব্যক্তি ফোন করবেন বা সাহায্য চাইবেন, তার কাছাকাছি কী কী হাসপাতাল রয়েছে এবং সেখানে কী কী সুবিধা আছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া। দুই) কাছাকাছি ব্লাড ব্যাঙ্ক কোথায় আছে এবং সেখানে আদৌ রক্তের সরবরাহ আছে কি না, তা জানানো। সব শেষে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাম্বুল্যান্স কোথা থেকে পাওয়া যেতে পারে, সে সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সাহায্য করা। অর্থাৎ, এক জন গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দিতে যাবতীয় তথ্যের জোগান দেওয়াটাই তাদের লক্ষ্য।
সংস্থার মেডিক্যাল রিসার্চ ডিরেক্টর তন্ময় মহাপাত্র বলেন, “কলকাতায় কাজ করতে এসে দেখলাম হাসপাতালে সময়মতো রোগীকে আনতে পারাটাই সব চেয়ে কঠিন কাজ। বিদেশে গিয়ে দেখেছি, উন্নত দেশগুলি এ ব্যাপারে অনেকটাই এগিয়ে। তাই আমাদের মনে হয়েছিল, এ রকম একটা ব্যবস্থা কলকাতাতেই বা করা যাবে না কেন?”
শুধু বিদেশে নয়, দেশের অন্য কয়েকটি রাজ্যেও ইতিমধ্যে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে বলে জানালেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সোমেন মিত্র। তিনি বলেন, “অনেক রাজ্যে এই ব্যবস্থা রয়েছে। কলকাতা পুলিশেরও এ সংক্রান্ত হেল্পলাইন আছে। তার সঙ্গে যদি এই ব্যবস্থাকে জুড়ে দেওয়া যায়, তা হলে কলকাতাবাসীর উপকারই হবে।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “আমাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ওই সংস্থার আলোচনা হচ্ছে। আমরা রাজ্য সরকারের তরফেও সাধারণ মানুষকে তথ্য দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই একটি তথ্য-ভাণ্ডার গড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছি। তার সঙ্গে ‘মিশন আরোগ্য’কে জুড়ে দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.