নৃশংস ভাবে দু’টি খুনের ঘটনা ঘটল দুই জেলায়। নিতুড়িয়া থানার আমডাঙা গ্রামে মঙ্গলবার রাতে নোড়া দিয়ে মাকে থেঁতলে খুন করার অভিযোগ উঠেছে ছেলের বিরুদ্ধে। আর বুধবার মেজিয়ার ইঁদাড়া গ্রামে দু’বছরের এক শিশুকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করার অভিযোগ উঠল পড়শি গ্রামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। দু’জনকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। নিহতেরা হলেন জয়মন্তী গোপ (৪৫) ও বিজয় বাউরি (২)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়মন্তীদেবী স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে আমডাঙা গ্রামে ইসিএলের আবাসনে থাকতেন। তাঁর স্বামী দামোদর গোপ ইসিএলের কর্মী। ছেলে সঞ্জয়ের সম্প্রতি তাঁরা বিয়ে দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সঞ্জয়ের স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না। রাতে মায়ের সঙ্গে তাঁর তুমুল ঝগড়া হয়। সেই সময় দামোদরবাবু অন্য ঘরে ছিলেন। পুলিশের দাবি, দামোদরবাবু তাঁদের কাছে জানিয়েছেন, স্ত্রীর চিৎকার শুনে তিনি ওই ঘরে গিয়ে দেখেন তাঁর ছেলে নোড়া দিয়ে মারধর করছেন। কোনওরকমে তিনি ছেলের হাত থেকে স্ত্রীকে ছাড়ান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে যান ইসিএলের সাঁকতোড়িয়ার হাসপাতালে। বুধবার ভোরে সেখানেই মারা যান জয়মন্তীদেবী। পড়শিরা সঞ্জয়কে আটকে রাখে। পরে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।
পুলিশ ও পরিবারের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জয় মাদকাসক্ত ছিলেন। নেশার খরচ নিয়ে মাঝে মধ্যেই মায়ের সঙ্গে তাঁর অশান্তি হত। পুলিশ জানিয়েছে, দামোদরবাবু এ দিন দুপুরে ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তবে খুনের কারণ স্পষ্ট করে তিনি পুলিশকে জানাননি। রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, “টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই মাকে খুন করেছেন সঞ্জয়। তাঁকে গ্রেফতার করে খুনের কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। খুনের কাজে ব্যবহার করা নোড়াটি আটক করা হয়েছে।”
মেজিয়াতেও খুনের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে বিজয় নামের ওই শিশুটি বাড়ির উঠোনে খেলা করছিল। হঠাৎ শ্রীকান্ত কেওড়া নামের স্থানীয় তেওয়ারিডাঙা গ্রামের এক যুবক এসে তাকে কোলে তুলে দৌড় লাগায়। এলাকায় শ্রীকান্ত মানসিক ভারসাম্যহীন বলে পরিচিত। তাই শ্রীকান্ত বিজয়কে কোলে তুলতে দেখে শিশুটির মা বারণ করেন। কিন্তু ওই যুবক শিশুটিকে নিয়ে বাড়ির বাইরে পালায়। শিশুটির মা আতঙ্কে শ্রীকান্তের পিছু ধাওয়া করেন। পড়শিরা জানিয়েছেন, গ্রামেরই একটি পুকুরপাড়ে বিজয়কে আছড়ে ফেলে তার মাথা ইট দিয়ে আঘাত করতে থাকে শ্রীকান্ত। ঘটনাস্থলেই বিজয়ের মৃত্যু হয়। গ্রামবাসীরা শ্রীকান্তকে আটকে রেখে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে বিজয়ের বাবা গোবিন্দ বাউরি শ্রীকান্তের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে লোকের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো নানা রকম দৌরাত্ম্য করত শ্রীকান্ত। কিন্তু সে যে খুন করতে পারে, বাসিন্দারা আগে ভাবতে পারেননি। শ্রীকান্তের ভাই সুজিত কেওড়া বলেন, “ছোট থেকেই দাদা মানসিক রোগে ভুগছে। বিভিন্ন জায়গায় তার চিকিৎসা করিয়েও সুস্থ করা যায়নি।” |