সাদা শার্ট আর আকাশি রঙের প্যান্ট। লালগোলা থানা এলাকার হোসনাবাদ হাইস্কুলের ছাত্রদের এটাই স্কুলের পোশাক। কিন্তু প্যান্টের সেলাই ছিঁড়ে যাওয়ায় গত ১০ এপ্রিল আকাশির বদলে কালো প্যান্ট পরে স্কুলে গিয়েছিল তকিবুর ইসলাম।
|
তকিবুর ইসলাম। |
ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রের এ হেন ‘অপরাধে’ স্কুল শুরুর আগে প্রার্থনার সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক ‘বেয়াড়া’ ছাত্রটিকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। তবে শুধু পোশাক না পরাই নয়। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাকিবুর তার চেয়েও আরও বড় একটি ‘অন্যায়’ করে ফেলেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির ছেলেটির সঙ্গে ওই স্কুলেরই সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর ‘বড় বেশি কথা বার্তা’ বলে, প্রধানশিক্ষকের দাবি। আর সেই ‘অপরাধে’ ওই দিন টিফিনের পর ক্লাস শুরু হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক ওই ছাত্রের ক্লাসে গিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। তকিবুরের কয়েকজন সহপাঠির দাবি, কঞ্চির চাবুকের আঘাতে ক্লাসের মধ্যে কাহিল হয়ে মেঝেয় পড়ে গিয়ে তকিবুর প্রধানশিক্ষকের পা ধরে ক্ষমা চেয়েও রেহাই পায়নি।
তারপর তিনি ওই ছাত্রের কান ধরে দোতলার ক্লাসরুম থেকে একতলায় নামিয়ে নিয়ে এসে শিক্ষকদের স্টাফরুমে বসিয়ে রেখে তার বাড়িতে খবর পাঠান। স্কুল থেকে তকিবুরের বাড়ি হাঁটাপথে মিনিট পাঁচেকের পথ। খবর পেয়ে তার মা নাসিরা বিবি দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ স্কুলে গিয়ে দেখেন তকিবুর নেই। স্টাফরুমে পড়ে রয়েছে ছেলের স্কুলব্যাগ। ছেলের বদলে বই-এর ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফেরেন তার মা। পর দিন থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে ছেলে নিখোঁজের ডায়েরি করেন। তারপর পুরো একটি সপ্তাহ কেটে গেলেও তেরো বছরের ওই বালকের কোনও হদিশ মেলেনি।
কখন কীভাবে সে ‘নিরুদ্দেশ’ হল তার সঠিক ব্যখ্যাও নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। তকিবুরের মা নাসিরা বিবি বলেন, “স্কুল শুরু হওয়া থেকে ছুটি হওয়া পর্যন্ত গেট তালাবন্দি থাকে। টিফিনের সময়ও গেটে তালা দেওয়া থাকে। ওই দিন আমাকে ডেকে নিয়ে যায় তখনও স্কুলের গেটে তালা দেওয়া ছিল। তালা খোলার পর আমি স্কুলে ঢুকতে পাই। স্কুলের জানালাতেও গ্রিল দেওয়া রয়েছে। তবে কীভাবে ছেলে পালাল?”
ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মহম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ তুললে আমার কী করার আছে! তবে একটি ছাত্রীর সঙ্গে তকিবুরের মেলামেশা নিয়ে অন্য ছাত্রছাত্রীরা আমার কাছে অভিযোগ করে। তাই তাকে দোতালার ক্লাসরুম থেকে নিয়ে এসে স্টাফরুমে বসিয়ে রেখে তার বাড়িতে খবর দেওয়া হয়।” স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলা কি অন্যায়? সাহাবুদ্দিন তার কোনও সদুত্তোর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, “ওর মা যখন স্কুলে পৌঁছয়, তখন পঞ্চম শ্রেণির ছুটি হয়ে গিয়েছে। সেই সময়ে হয়তো মাকে আসতে দেখে ভয় পেয়ে তকিবুর পালিয়ে গিয়েছে।”
তকিবুরের বাবা আব্দুস সালাম জানান, তিনি পোস্টার ছাপিয়ে দিন পাঁচেক ধরে মুর্শিদাবাদে ও জেলার বাইরের বিভিন্ন স্টেশনে, মোড়ে, বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলের নিরুদ্দেশের ব্যাপারে প্রধানশিক্ষক নানা রকম কথা বলছেন। কখনও বলছেন ছেলে দোতলা থকে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়েছে, কখনও বলছেন জানালা দিয়ে পালিয়েছে, কখনও বলছেন ছেলে তার মাকে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়েছে। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।” আর পুলিশ? সাত দিনেও খোঁজ মেলেনি তকিবুরের। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের অবশ্য যুক্তি, “লুকিয়ে থাকলে তাকে খুঁজব কী করে?” আড়াল থেকে ‘আবিষ্কার’ই যে পুলিশের কাজ, সে কথা কি ভুলে গিয়েছেন পুলিশ সুপার? |