কলকাতার সঙ্গে নিজের শহরের অনেকটা মিল খুঁজে পাচ্ছেন তিনি।
ইতালির প্রথম সারির নাট্যপরিচালক, অভিনেত্রী ক্রিস্তিনা দোনাদিও নেপল্স-এর বাসিন্দা। কলকাতায় প্রথম তো বটেই, ভারতেও এই প্রথম এলেন তিনি। শহরের এক উৎসবে তাঁর ‘আই ক্লাইতেমেনস্ত্রা’ অভিনীত হবে শনিবার।
পাহাড়-সমুদ্র ঘেরা নেপলসের সঙ্গে প্যাচপেচে কলকাতার মিল? হাসলেন ক্রিস্তিনা। বললেন, “মিলটা সংস্কৃতির। দু’টো শহরই নিজের মধ্যে স্ববিরোধিতা নিয়ে বাস করে। একই সঙ্গে বড়লোক আর গরিব মানুষ সেখানে থাকে।
|
ক্রিস্তিনা দোনাদিও |
নানা ভাষা, নানা সংস্কৃতির মানুষ।” ক্রিস্তিনা শুনেছেন, কলকাতাকে ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। বললেন, ইতালির সাংস্কৃতিক রাজধানী নেপলস। ইতালির স্বখ্যাত গায়ক-অভিনেতা-নির্দেশক-পরিচালকদের অনেকেই নেপলস থেকে উঠে এসেছেন। ভিত্তোরিও ডি সিকা থেকে এদুয়ার্দো ডি ফিলিপ্পো, সব্বাই নেপলস-এর।
ক্রিস্তিনার নাটকে গ্রিক পুরাণের তিন চরিত্র আগামেমনন, ক্লাইতেমেনস্ত্রা ও কাসান্দ্রাও আশির দশকের নেপলস-এ মাফিয়া-যুদ্ধের আবহে গড়ে উঠেছে। “মনে হয়, গল্পটা বুঝতে কলকাতার দর্শকের অসুবিধা হবে না।” কলকাতা ও ভারত, দুইয়ের প্রতিই অসীম আগ্রহ ক্রিস্তিনার। পিটার ব্রুকের ‘মহাভারত’ দেখেছেন। বলিউডের বাইরে ভারতীয় সিনেমার অন্যতম পীঠস্থান কলকাতা, এটাও জানেন। বন্ধু চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষের সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখিয়ে আছেন। নিজে রবার্তো রসেলিনি-র ছবির বিশেষ ভক্ত। কলকাতার সঙ্গে রসেলিনির রোম্যান্টিক সম্পর্কের কথাও মনে করিয়ে দিলেন ক্রিস্তিনা নিজেই।
এই মুহূর্তে ক্রিস্তিনার বিশেষ আগ্রহ বিনোদিনীকে ঘিরে। বিনোদিনী দাসী, যাঁর স্মরণে নিবেদিত নাট্যোৎসবে অংশ নিচ্ছেন ক্রিস্তিনা। খুঁটিয়ে শুনতে চাইলেন বিনোদিনীর গল্প। বললেন, “বিনোদিনীর জীবন নিয়ে ছবি করলে কেমন হয়?”
ছবির কথাতেই উঠল ফেলিনির প্রসঙ্গ। ফেলিনির ‘সিটি অফ উওম্যান’ ছবিতে মার্সেল্লো মাস্ত্রোইয়ান্নির স্বপ্নের নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ক্রিস্তিনা। তখন বছর কুড়ি বয়স ওঁর। ফেলিনি ওঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই একটা পোর্ট্রেট এঁকে ফেলেছিলেন। কথাও শেষ হল, ফেলিনিও ছবিটা ক্রিস্তিনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “এই তোমার চরিত্র।” ক্রিস্তিনা দেখলেন, ছবিতে ওঁর কেমন ‘লুক’ হবে, সেটা আঁকা হয়ে গিয়েছে। শু্যটিংয়ের অভিজ্ঞতা অবশ্য তত সুখের হয়নি ক্রিস্তিনার জন্য। “কোনও স্ক্রিপ্ট থাকত না। সেজেগুজে বসে থাকতাম। উনি ‘ও দিকে দেখ’, ‘ওই পাখিটার দিকে তাকাও’ বলে যেতেন!” মাস দুয়েক চলার পর ক্রিস্তিনা বললেন, “আমি আর পারছি না।” ফলে যতটুকু শু্যট হয়েছিল, সেটুকুই ব্যবহার করা হল। “ফেলিনির কাজ মাঝপথে ছাড়লাম শুনে সবাই পাগল বলেছিল! কিন্তু আমার তখন ও সব বোঝার বয়স হয়নি!’’
১৮ বছর বয়স থেকে নেপলস-এর বিভিন্ন থিয়েটার কোম্পানিতে অভিনয় করছেন ক্রিস্তিনা। ইতালিতে নাটকের দর্শকের অভাব নেই। নাটকের কোম্পানিগুলো সরকারি অনুদানও পায়। ক্রিস্তিনা বলছিলেন, “আমরা চাইছি, নিয়মটা বদলাক। বড় কোম্পানি, নামী তারকা সম্বলিত নাটক নিজেরাই পয়সা তুলতে পারে। তাদের সরকারি অনুদান কেন? ছোট দলগুলোকে বেশি সুযোগ দেওয়া উচিত।” আশি সালের ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছিল নেপলস। ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শেষ হয়নি আজও। গত দু’দশকে লড়াইটা আরও কঠিন করে দিয়েছেন বার্লুসকোনি, এমনই অভিযোগ ক্রিস্তিনার। বললেন, ‘‘ওই লোকটা টাকা দিয়ে সবাইকে কিনে রেখেছে। ইতালির পুরো মিডিয়া ওর নিয়ন্ত্রণে। সংস্কৃতি আর রুচিবোধের সর্বনাশ করে ছেড়েছে।”
সামনেই ভোট ইতালিতে। ক্রিস্তিনার গলাতেও পরিবর্তনের স্লোগান। |