বেশ কয়েক বছর ধরে বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সম্পর্কে জন-সচেতনতার কাজ করে চলেছে স্নেহা (সোসাইটি ফর নেচার এডুকেশন হেলথ অ্যাওয়ারনেস)। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের অরণ্য সংলগ্ন প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে চলেছে। ইতিমধ্যে জলদাপাড়া, থাউচাঁদপাড়া, মালঙ্গী বিট, সাঁতালি বনবস্তি, গরুমারা সংলগ্ন সরস্বতীপুর, রামতি বনবস্তির বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করে। কখনও নাটক, কখনও সেমিনার বা বিতর্কসভা, আবার কখনও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামগুলির বাসিন্দাদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, সুস্থ থাকার জন্য সাধারণ কর্মবিধি, মানুষের জীবনে পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে প্রচারে উদ্যোগী হয়েছে। জলপাইগুড়ি শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা করলা নদীর দূষণ-সমস্যা ও তার প্রতিকারের উপায় নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র ‘জলসুন্দরীর কথা’। স্থানীয় বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের মধ্য দিয়ে প্রচারের ব্যবস্থাও করেছে। বন দফতরের কুনকি হাতি কী ভাবে প্রশিক্ষণ পেয়ে বন সুরক্ষার কাজ করে, তা তুলে ধরেছে ‘মাহুত বন্ধু রে’ তথ্যচিত্রটিতে।
একজন প্রসূতি সুস্থ থাকার জন্য কী কী সরকারি সাহায্য পেতে পারে, তা নিয়ে বানানো ‘সুস্থ জীবনের জন্য’ তথ্যচিত্রটিতে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট-এর ব্যবস্থায় অরণ্য সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা কতখানি আর্থ-সামাজিক সুরক্ষা পেতে পারে, তার বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে ‘টাই অব ফ্রেন্ডশিপ’ তথা ‘মৈত্রীর বন্ধন’-এ। দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্কে রেড পন্ডা, স্নো-লেপার্ডের মতো প্রাণীদের প্রজননের মাধ্যমে সংরক্ষণের বিষয়, চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রাণীর রকমারি খাদ্যাভ্যাস, খাদ্য সরবরাহের প্রণালী, চিকিত্সা-পদ্ধতিএ সব কিছুই তুলে ধরা হয়েছে ‘মিশন সারভাইভ্যাল’ বা ‘নতুন পৃথিবী’ তথ্যচিত্রটিতে। অরণ্যসম্পদ ও অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণে অপরিহার্য কাজ করে চলেছে স্নেহা। সংগঠনটি প্রচারমূলক স্মরণিকা প্রকাশেরও উদ্যোগ নিয়েছে।
|
দুর্লভ আত্মজীবনী
সুদীপ দত্ত |
‘জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে’ উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অমর রায় প্রধানের আত্মজীবনী। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ কেন্দ্রে ১৯৬২ থেকে তিন বারের বিধায়ক এবং কোচবিহার কেন্দ্র থেকে আট বার সাংসদ পদে নির্বাচিত হন অমরবাবু। তাঁর আত্মজীবনীতে স্বাভাবিক ভাবেই তাই রাজনীতির কথা স্থান পেয়েছে। রাজনীতির পাশাপাশি রাজবংশী সমাজের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, তত্কালীন শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়েও পাঠক সমৃদ্ধ হবেন এ গ্রন্থ পাঠ করে। গ্রন্থটির সম্পাদনা ও সংযোজনের দায়িত্ব নিয়েছেন ড. আনন্দগোপাল ঘোষ এবং কার্তিকচন্দ্র সূত্রধর। গ্রন্থের ১১ পৃষ্ঠায় তাঁরা লিখছেন, “তিনি ১৯৭৪ অবধি জীবনকথা লিখেছেন। ১৯৭৫ থেকে আজ অবধি পর্বটি আমাদের সংযোজন করতে হয়েছে।” ১৩৩ পৃষ্ঠায় “জন্ম থেকে মোটামুটি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তাঁর জীবনবৃত্তান্ত, সমসাময়িক ইতিহাস ও রাজনীতির কথা তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন।” এর পরই তিনি ভীষণ ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন।” যাই হোক, সম্পাদক হিসাবে তাঁর অসমাপ্ত দিনগুলির কথা বিশেষ করে ১৯৭২ সালের পর তাঁর রাজনৈতিক-সামাজিক কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। কিছু মুদ্রণ-ত্রুটি চোখে পড়ে। এ ছাড়া, এ গ্রন্থ পড়তে শুরু করলে কখন শেষ পৃষ্ঠায় চোখ পৌঁছে যায়, পাঠক নিজেও তা টের পাবেন না।” আদ্যন্ত ঝরঝরে ভাষায় লেখা এই আত্মজীবনীতে স্থান হয়েছে প্রচুর চিঠি ও ইতিহাসের বহু টুকরো ঘটনার। সে কারণেই রীতিমতো ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখারও দাবি রাখে এই দুর্লভ আত্মজীবনী। |