|
|
|
|
একই মিছিলে, তবে দূরত্ব ঘুচল না বনবিহারী-তন্ময়ের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • লালগড় |
পঞ্চায়েত ভোটের আগে লালগড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লাগাম পরিয়ে ‘একতা’র বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হল মঙ্গলবার। এ দিন স্থানীয় বেলাটিকরিতে ‘মহামিছিল’ করল যুব-তৃণমূল। পুরোভাগে দেখা গেল প্রায় তিন সপ্তাহ অন্তরালে থাকা বিনপুর ১ ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি তন্ময় রায়কে। মিছিলের পিছন দিকে ছিলেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়ও। তবে একসঙ্গে হাঁটলেও তাঁদের মধ্যের দূরত্ব যে এখনও মেটেনি তা বনবিহারীবাবুর কথাতেই স্পষ্ট। প্রবীণ এই নেতার কথায়, “কদিন আগে স্থানীয় নেড়া গ্রামে ‘ফেরার’ সিপিএম নেতা খলিলউদ্দিনের শরিকি-জমি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের প্রতিবাদে এ দিন আমিই মহামিছিলের আয়োজন করেছিলাম। তন্ময় এসে মিছিল হাইজ্যাক করে নেয়।” তন্ময় অবশ্য “সংগঠনের নেতৃত্বের নির্দেশে মিছিল করছি”র বাইরে কিছু বলতে চাননি। |
|
তৃণমূলের মিছিলে তন্ময় রায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
সম্প্রতি গরিবদের বাড়ি তৈরির প্রকল্প ‘অধিকার’-এ দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল লালগড়ে। বনবিহারীবাবুর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ এনে যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতির পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন তন্ময়। তারপরই অবস্থা সামাল দিতে নামেন তৃণমূল নেতৃত্ব। গত শুক্রবার লালগড়ে তৃণমূলের কর্মিসভায় এসে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেন, বনবিহারীবাবুর নেতৃত্বেই বিনপুর ১ (লালগড়) ব্লকে পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা করা হবে। শুভেন্দু এ-ও জানিয়েছিলেন, তন্ময়কে সংগঠনের কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তারপরই এ দিনের মিছিল। জানা গিয়েছে, শুভেন্দু অনুমতি সাপেক্ষেই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়। জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, “যুব তৃণমূলের উদ্যোগেই এ দিন বেলাটিকরিতে মহামিছিল হয়েছে। তন্ময় তো সংগঠনেই আছেন। তাই তিনিও মিছিলে ছিলেন।” আর তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষের বক্তব্য, “কার নেতৃত্বে মিছিল হয়েছে সেটা বড় কথা নয়। হামার্দদের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল হয়েছে সেটাই বড় কথা।”
ঠা ঠা রোদে বেলা বারোটা নাগাদ শুরু হয় মিছিল। নেড়া গ্রামে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত সিপিএম নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। মিছিলে ছিলেন তৃণমূলের বেলাটিকরি অঞ্চল সভাপতি বিদ্যুৎ দণ্ডপাট ও অঞ্চল যুব সভাপতি বিকাশ মণ্ডল। দু’জনেরই বক্তব্য, “সংগঠের ব্লক যুব সভাপতি তন্ময় রায় মহামিছিল করার জন্য আমাদের ব্যবস্থা নিতে বলেন। সেই মতো মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। বনবিহারীবাবু-সহ ব্লকের অন্য নেতারাও এসেছিলেন।” তৃণমূলের দলীয় সূত্রের খবর, তন্ময়কে বাইরে রেখে পঞ্চায়েত ভোট করার ঝুঁকি নিতে রাজি নয় দলের একাংশ। তাঁদের মতে, তন্ময়কে দলের বাইরে রাখলে সংগঠনেরই ক্ষতি। অধিকার প্রকল্পের একজন প্রাপকও চেক ফেরত দেন নি। বিষয়টিকে যে ভাবে দলের একাংশ লঘু করে দেখেছেন, তাতে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অধিকার প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রীতিমতো লিফলেট ছাপিয়ে এলাকায় বিলি করছে সিপিএম। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হলে তন্ময় রায়কে মাঠে নামানোর পক্ষে মত দেন দলের একটি অংশ। দলীয় সূত্রের খবর, এরপর নেড়া গ্রামে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মিছিল করার জন্য যুব তৃণমূলের শীর্ষস্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তন্ময়কে মাঠে নামানোর পিছনে তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশলও রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বনবিহারীবাবুর অনুগামীদের মতে, পঞ্চায়েত ভোটে লালগড়ে খারাপ ফল হলে দায় তন্ময়কেই নিতে হবে। কারণ তিনিই স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে দলকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছেন। |
|
|
|
|
|