সফল পুনর্বাসন
উদ্ধারকেন্দ্র থেকে মানসে এসে বহাল তবিয়তে
রা পড়া বাঘ ফের জঙ্গলে তার রাজত্ব কায়েম করেছে। বেশ কিছু দিন উদ্ধার কেন্দ্রে থাকার পর এক অপরিচিত পরিবেশে, অন্য জঙ্গলে তাকে ছেড়ে দেওয়ার তিন বছর পর সেই বাঘের সন্ধান পেলেন বিশেষজ্ঞরা। দেখা গেল সে জঙ্গলে নিজের অধিকার কায়েম করেছে। স্বাভাবিক জীবনেই ফিরে গিয়েছে সে।
১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে ক্রমহ্রাসমান বাঘ বাঁচাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী ব্যাঘ্র প্রকল্পের ঘোষণা করেন। গত এক দশকে অসমে এই প্রকল্প অনেকটাই সফল। রাজ্য বন দফতর, ডব্লুটিআই, ডব্লুডব্লুএফ, আরণ্যকের যৌথ উদ্যোগে কাজিরাঙা, মানস ও ওরাং জাতীয় উদ্যানে বাঘ বাঁচানো ও বাঘ বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়। তার সুফল ফলেছে। সাম্প্রতিক ক্যামেরা শুমারি অনুযায়ী, কাজিরাঙায় কমবেশি ১১৮টি, মানসে অন্তত ১৪টি ও ওরাং-এ অন্তত ২৩টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। কেবল অনুমান নয়, বন বিভাগের হাতে রয়েছে প্রতিটি বাঘের ছবি। বাঘের ঘনত্বের হিসাবেও ওরাং, কাজিরাঙা ভারতে পয়লা সারিতে রয়েছে। তবে বিভিন্ন গ্রামে ধরা পড়া বাঘ নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
কাজিরাঙা পশু উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রধান রথীন বর্মন বলেন, “বাঘ ধরা হলে পরের দিন তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও কারণে বেশিদিন উদ্ধার কেন্দ্রে রেখে দেওয়ার পরে তার অবধারিত ঠিকানা হয়ে ওঠে কোনও চিড়িয়াখানা।”
২০১০ সালে শিবসাগরের গেলেকিতে ধরা পড়া একটি বাঘের ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল সুরেশ চাঁদ ও মানস ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তা অনিন্দ্য স্বরগোয়ারি। তাকে উদ্ধারকেন্দ্র থেকে মানসের জঙ্গলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশের মধ্যে সেটিই বোধহয় ছিল প্রথম এই ধরণের পদক্ষেপ।
কী ভাবে বাঘটি শিবসাগরে এল জানা যায়নি। তার আক্রমণে দুই ব্যক্তি মারাও যান। চিকিৎসক ভাষ্কর চৌধুরির মতে, বাঘটি কিন্তু মোটেই মানুষখেকো ছিল না। পথ হারিয়ে, মানুষের মধ্যে পড়ে ভয়েই সে দু’জনকে হত্যা করেছিল। বাঘটিকে ঘুম পাড়িয়ে কাজিরাঙা নিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু বাঘটি নিয়ে কী করা হবে তা নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। স্বরগোয়ারি বলেন, “মাসখানেক উদ্ধারকেন্দ্রে থাকা বাঘটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দিলে সে ফের মানুষকে আক্রমণ করতে পারত, নিজের এলাকা প্রতিষ্ঠা করার লড়াইয়ে মারা পড়তে পারত। তবু আমরা ঝুঁকি নিলাম। কারণ ধরা পড়া বাঘের স্থায়ী ঠিকানা চিড়িয়াখানা হতে পারে না।” ২০১০ সালের আজকের দিনে পুরুষ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটিকে মানসের অরণ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। গলায় লাগানো হয় রেডিও কলার। ঠিক তিন বছর পরে ফের ক্যামেরায় ধরা দিয়েছে সে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মানসের অধিকর্তা জানান, চিন্তার যথেষ্ট কারণ ছিল। বাঘের প্রধান খাদ্য হরিণ। ২০১১ সালে মানসের বাঁশবাড়ি রেঞ্জে লতাঝাড়, মাথানগুড়ি, উসিলা, মাখিবাহা, গরুচরায় সম্বরের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়ে। শুকনো মরশুমে হরিণ ও গ্রামের গবাদি পশুরা কাছাকাছি চলে আসায় বনের প্রাণীদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ হয়। প্রথমে রোগের কারণ জানা যাচ্ছিল না। মারা যাচ্ছিল সম্বর। তখন মানসের মাথা থেকে ‘ইউনেসকো’-র ‘বিপন্ন’ তকমা ওঠার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। এরই মধ্যে অজানা রোগের খবর ছড়ানোয় হরিণ ও বাঘের বাঁচা-মরা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়ে যায়। পরে রোগের প্রকোপ কমে। মানসও বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্রের সম্মান ফেরত পায়। কিন্তু ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি পর থেকে সেই বাঘটির আর সন্ধান মিলছিল না।
শেষ অবধি ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এ ফের দেখা গেল তাকে। ভাষ্করবাবু বলেন, “নতুন পাওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাঘটির গলার রেডিও কলার খুলে গিয়েছে। সে সুস্থ। নিজের এলাকাও বানিয়ে নিয়েছে। ফলে ব্যাঘ্র প্রকল্প চালু হওয়ায় ৪০ বছরের মাথায়, আমরা এই পরীক্ষামূলক পদ্ধতিতে সফল হওয়ার কথা ঘোষণা করতেই পারি।” রথীনবাবুর জানান, মানসের উদাহরণে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরা উত্তরাখণ্ডেও দু’টি ধরা পড়া বাঘকে ফের অরণ্যে ছেড়েছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.