সম্পাদকীয় ১...
চপলচরণ
ণিভূষণ চোখ মেলিল এবং দেখিল, ঘরে নবোদিত দশমীর চন্দ্রালোক আসিয়া প্রবেশ করিয়াছে, এবং তাহার চৌকির ঠিক সম্মুখে একটি কঙ্কাল দাঁড়াইয়া। সেই কঙ্কালের আট আঙুলে আংটি, করতলে রতনচক্র, প্রকোষ্ঠে বালা, বাহুতে বাজুবন্ধ, গলায় কণ্ঠি, মাথায় সিঁথি, তাহার আপাদমস্তকে অস্থিতে অস্থিতে এক-একটি আভরণ সোনায় হীরায় ঝক্ঝক্ করিতেছে।’ ১৩০৫ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাসে রবীন্দ্রনাথ ‘মণিহারা’ গল্পটি লিখিয়াছিলে। সেই হিসাবে, গল্পের নায়িকা মণিমালিকার বয়স আজ ১৩৯ বৎসর হইত। এই প্রায়-সার্ধশতবর্ষে ভারতীয় নারী পনেরো আনা বদলাইয়াছেন। এক আনা বাকি। তাঁহার স্বর্ণালঙ্কার-প্রীতি সমানে চলিতেছে। ভারতীয়-মানসে সোনা শুধুমাত্র একটি মূল্যবান ধাতু নহে, সম্পদের একটি রূপমাত্র নহে, সোনার সহিত ভারতীয়দের সম্পর্কটি আবেগমথিত। ভারতবাসীর নিকট সোনার মর্যাদা কী, তাহা জনসংস্কৃতিতে বহু-প্রতিফলিত। পৃথিবীর আর কয়টি ভাষায় সোনার কঙ্কন এবং সেই কঙ্কন পরিহিতা প্রিয়ার হাতকে এক করিয়া দেখা হয়? এই আবেগ শুধু নারীর, এমন বলিলে অবশ্য অর্ধসত্যভাষণ হইবে। ভারতীয়মাত্রেই স্বর্ণপ্রিয়। এই প্রীতিই বঙ্গাব্দ দ্বাদশ শতকের এক গৃহাঙ্গনাকে ১৪২০-র তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরতা নারীর সমান করে। এই স্বর্ণপ্রীতিতে একবিংশ শতকের ইন্ডিয়ার সহিত সনাতন ভারতের যোগসূত্র রচিত হয়। এবং, এই স্বর্ণপ্রীতিই, সোনার বাজারের ওঠা-পড়ার প্রেক্ষিতে, ভারতকে অন্যান্য দেশ হইতে পৃথক করিয়াছে।
গোটা দুনিয়াতেই সোনার বাজারে ধস নামিয়াছে। তাহার অব্যবহিত কারণটি, এই ধসের বহু আগেই, পরশুরাম যথার্থ আঁচ করিতে পারিয়াছিলেন। গোটা দুনিয়ায় যখন বৎসরে বিশ হাজার মণ সোনা উৎপন্ন হইত, তখন তাঁহার গল্পের পরেশবাবু একাই এক লক্ষ মণ সোনা উৎপাদন করিয়া ফেলিয়াছিলেন। বাজারে অকস্মাৎ জোগান বাড়ায় সোনার দাম সেরপ্রতি কয়েক টাকায় নামিয়া আসিয়াছিল। বর্তমানে কোনও পরশপাথর সোনার জোগান বাড়াইয়া দেয় নাই বটে, কিন্তু ঋণের দায়ে জর্জরিত সাইপ্রাস তাহার সোনার ভাণ্ডারটি বাজারে বেচিবে, এমন সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় অকস্মাৎ জোগান বাড়িবার আশঙ্কা হইয়াছে। ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, আয়ার্ল্যান্ড, গ্রিস সব ঋণগ্রস্ত দেশের হাতেই সোনা আছে, এবং তাহারাও অতঃপর সোনা বেচিবার সিদ্ধান্ত করিতে পারে। অতএব, বাজার খানিক আতঙ্কিত প্রতিক্রিয়া জানাইয়াছে। তবে, ইহাই একমাত্র কারণ নহে। সাম্প্রতিক অতীতে যে ভাবে সোনার দাম বাড়িয়াছিল, তাহা সুস্থায়ী হইতে পারে না। বাজার এই মূল্যস্তর সংশোধন করিয়া লইত, আজ না হউক কাল। তাহাতে অস্বাভাবিকতা নাই। সম্পদের বাজারে দামের বাড়া-কমা থাকেই। ক্রেতারাও সেই ভাবে নিজেদের অবস্থান স্থির করেন। গোটা দুনিয়ায় তাহাই ঘটিবে। ভারত সম্ভবত ব্যতিক্রম।
গোটা দুনিয়া যে পথে হাঁটিবে, ভারত কেন সেই পথের পথিক না-ও হইতে পারে, সেই প্রশ্নের উত্তর আছে ভারতীয়দের স্বর্ণপ্রীতিতে। এই সংবাদে অর্থমন্ত্রী পালনিয়াপ্পন চিদম্বরমের ললাটে দুশ্চিন্তার ভাঁজ বাড়িবে। সোনার বাজারে ধস নামায় যদি মাত্র এক জন ভারতীয় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া থাকেন, তবে তিনি ভারতীয় অর্থমন্ত্রী। ভারতে সোনা আমদানি করিতে হয়। তাহাতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের চলতি খাতে ঘাটতিই এই মুহূর্তে অর্থমন্ত্রীর বৃহত্তম চিন্তার কারণ। সোনার ন্যায় ‘অপ্রয়োজনীয়’ পণ্যের আমদানিতে মহার্ঘ ডলার ব্যয় করিতে হওয়া অর্থমন্ত্রীর মর্মবেদনার কারণ বইকী। তিনি সোনার উপর আমদানি শুল্ক বাড়াইয়াছেন, ভারতীয় নারীদের উদ্দেশে এক বৎসর সোনা না কিনিবার আর্জিও পেশ করিয়াছেন। করবৃদ্ধি বা আর্জি, কোনওটিই খুব কার্যকর হয় নাই। সোনার দামে ধস নামিলেও যে ভারতীয়দের স্বর্ণপ্রীতি কমিবে, তেমন প্রত্যয় হয় না। গোটা দুনিয়ায় যখন সোনা বেচিবার ধুম পড়িয়াছে, ভারতীয় বাজার অপেক্ষাকৃত শান্ত। কাজেই, অর্থমন্ত্রীকে সচেতন থাকিতে হইবে। সোনা আমদানির পরিমাণ কমাইতে যাহা করণীয়, কিছুই বাকি রাখিলে চলিবে না। মণিমালিকা ভারতে অমর সোনার চাহিদা কমাইবার দায়িত্ব তাই রাষ্ট্রের উপরই বর্তায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.