সম্প্রতি আলুতে লগ্নি করার জন্য সুমঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি)। ওই ব্যবসার ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন তুলে ১৫ দিনের মধ্যে সুমঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজকে জবাব দিতে বলেছে সেবি। নির্দেশে এও বলা হয়েছে, তত দিন পর্যন্ত বাজার থেকে ওই ব্যবসার জন্য সুমঙ্গল কোনওরকম টাকা তুলতে পারবে না।
সুমঙ্গল কী ভাবে টাকা তুলত বাজার থেকে?
আলুর ব্যবসায় লগ্নি করার উদ্দেশে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলার জন্য এক ধরনের বন্ড বাজারে ছেড়েছিল সুমঙ্গল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত যে, বন্ডের মাধ্যমে ওই ব্যবসায় লগ্নি করলে কম পক্ষে ২০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ মুনাফা করতে পারবেন লগ্নিকারী। ন্যূনতম লগ্নির পরিমাণ ৫০০০ টাকা। লগ্নির মেয়াদ ১৫ মাস। ১৫ মাস পরে মুনাফা সহ লগ্নির টাকা ফেরত পাবেন বিনিয়োগকারী।
কেন হস্তক্ষেপ করল সেবি? প্রথমত, বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা তুলতে হলে সেবির কাছে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আগাম আবেদন করতে হয়। সুমঙ্গল সেই ধরনের কোনও আবেদন করেনি। দ্বিতীয়ত, যে প্রকল্পের মাধ্যমে সুমঙ্গল বাজার থেকে টাকা তুলছে, তা সেবির মতে, ‘কালেকটিভ ইনভেস্ট স্কিম’-এর আওতায় পড়ে। ওই প্রকল্পে টাকা তুলতে হলেও সেবির কাছে আগে আবেদন করতে হয়। সেবি ওই আবেদন অনুমোদন করে সার্টিফিকেট মঞ্জুর করলে তবেই কোনও সংস্থা টাকা তুলতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেই সার্টিফিকেটও ছিল না সুমঙ্গলের।
সুমঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজের অবশ্য দাবি, তাদের প্রকল্প কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমের আওতায় পড়ে না।
সুমঙ্গল আইনি পথে, না কি বেআইনি পথে টাকা তুলেছে, তার বিচার করবে সেবি। বিবাদ গড়াতে পারে আদালতেও। তবে আলু ব্যবসায়ী মহলে প্রশ্ন উঠছে সুমঙ্গলের দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়েই। সুমঙ্গলের বিজ্ঞাপনে বলা হত, লগ্নিকারীদের টাকায় কম দামে আলু কিনে সুমঙ্গল তাদের নিজস্ব হিমঘরে রেখে দেবে। পরে দাম বাড়লে সেই আলু বিক্রি করলে মুনাফা হবে ২০ থেকে ১০০ শতাংশ। হিমঘর মালিকরা এতেই আপত্তি করছেন। তাঁরা বলেন, হিমঘরের ব্যবসায় কেবল লাভই হবে, লোকসান হবে না, এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া অসম্ভব। অধিক ফলনের জন্য বাজারে চাহিদা কমে গেলে যে সব চাষি বা ব্যবসায়ীরা হিমঘরে আলু রাখেন, তা খালাস করতেও আসেন না। ২০০৮, ২০১০ এবং ২০১১ সালেই এই রকম অবস্থা তৈরি হয়েছিল।
তাঁদের প্রশ্ন, এই রকম পরিস্থিতিতে কী করে স্থায়ী ভাবে ২০ থেকে ১০০ শতাংশ মুনাফা করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সুমঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ? ওয়েস্ট বেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রামপদ পাল বলেন, “কেবল আলু কেন, কোনও ব্যবসাতেই কেবল মুনাফা হবে, লোকসান হবে না, এ কথা বলা যায় না।”
আলুতে অর্থলগ্নি করা অবশ্য জেলাগুলিতে বিনিয়োগের একটি পরিচিত উপায়। ছোট, বড় চাষিরা ছাড়াও ব্যবসায়ীরাও অনেক সময় আলুতে বিনিয়োগ করেন। তবে বিজ্ঞাপন দিয়ে আলুতে ১০০ শতাংশ লাভের প্রলোভন দেখালে চাষিরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন বলেই আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তারা মনে করেন।
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির হুগলি জেলার সভাপতি স্বপন সামন্ত বলেন, “ওই সংস্থার নিযুক্ত এজেন্টরা হুগলি এবং বর্ধমানের নানা এলাকায় গিয়েছিলেন। বিভ্রান্ত চাষিরা আমাদের কাছে এ ব্যাপারে এলে তাঁদের আমরা সর্তক করে দিয়েছি। কারণ বিনিয়োগ করলে লাভ যেমন হতে পারে, তেমন ক্ষতিও।”
বস্তুত আলুর ক্ষেত্রে বন্ড বর্তমানে প্রায় উঠেই গিয়েছে। এক সময় রাজ্যে হিমঘরের সংখ্যা কম ছিল। সেই সময় চাষিদের আলু হিমঘরে রাখা নিশ্চিত করতে আলুর বন্ড দেওয়া হত। সেই সময় চাষিদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজ্যের ব্লকগুলির আধিকারিকেরা। এখন হিমঘর মালিকেরা আলু মজুত রাখলে নিজস্ব ব্যবস্থায় আলুর বন্ড দিয়ে থাকেন। সেই বন্ডের মাধ্যমেই আলু যাঁরা হিমঘরে রেখেছেন তাঁরা ফেরত পান। অথবা হিমঘরে রাখা আলু কাউকে বিক্রি করে দেন। সে ক্ষেত্রে বন্ড হস্তান্তর করলেই কাজ মিটে যায়। যিনি বন্ড কিনলেন, তাঁর কিন্তু ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। বাজারে আলুর দাম পড়লে ক্ষতি হবেই। |