ভারত থেকে ইরান, আতঙ্ক ছড়াল ভূমিকম্প
ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ভারতে চার বার। সময়, তীব্রতা এবং এলাকা ছিল ভিন্ন। আতঙ্ক ছড়ালেও, মঙ্গলবারের ভূমিকম্পে ভারতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অসমে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গিয়েছে ইরান থেকে। সেখানে কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমগুলি। যদিও ইরানের সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা বেশি নয়, ৪০। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর জানা গিয়েছে।
ভারতে চার বারের মধ্যে সব থেকে বেশি আতঙ্ক ছড়ায় বিকেলের একটি ভূমিকম্প। এর উৎস ছিল ইরান-পাকিস্তান সীমান্তে। রিখটার স্কেলে ৭.৯ তীব্রতার ওই ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দেয় রাজধানী নয়াদিল্লিকেও। কেঁপে ওঠে রাজস্থান, রাজস্থান সংলগ্ন গুজরাত, হরিয়ানা, পঞ্জাবও। একই ভাবে আতঙ্ক ছড়ায় পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, লাহৌর, করাচি, কোয়েটা এবং হায়দরাবাদেও। বালুচিস্তানে ভেঙেছে প্রায় হাজারখানেক বহুতল। পাকিস্তানে রাত পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেলেও সংখ্যাটা বাড়তে পারে। রাতভর চলছে উদ্ধারকাজ। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলিতে হেলিকপ্টারে করে পাঠানো হচ্ছে ওষুধ ও খাবার। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সব থেকে বেশি ইরানে। বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন। দক্ষিণ ইরানের বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কত, তার হিসেব রাত পর্যন্ত করা যায়নি।
ভারতে চারটি ভূমিকম্পে সম্পত্তির কোনও ক্ষতির হিসেব রাত পর্যন্ত না পাওয়া গেলেও, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মঙ্গলবার দিনটাই শুরু হয়েছিল ভূকম্পন দিয়েই। সকাল ৬.৫৩ নাগাদ কেঁপে ওঠে অসম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মণিপুর এবং অরুণাচলপ্রদেশ। সরকারি সূত্রের খবর, সকালে বরপেটার কলগাছিয়া এলাকায় শোলমারি গ্রামের তিনটি শিশু বেকি নদীর পাড়ে বসে মাছ ধরা দেখছিল। ভূমিকম্পে নদীর আলগা পাড় ভেঙে তিন জন পড়ে যায়। এদের মধ্যে জাহিরুন্নেসা (৮) নামে এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়। অন্য দুই শিশু জখম হয়েছে। দিল্লির কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতর সূত্রে বলা হয়, সকালের ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল অসমে। রিখটার স্কেলে তার তীব্রতা ছিল ৪.৬। দুপুর ২টো ১০ মিনিটে উজানি অসমে আর এক দফা ভূমিকম্প হয়। এবারে কম্পনমাত্রা ছিল ৫ রিখটার স্কেল। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বারের
উৎসস্থলটি অরুণাচল-চিন সীমান্তের কোনও এক জায়গায়। দু’টি ভূমিকম্পের মধ্যে সকাল ৮টা ৩৬ মিনিট নাগাদ হাল্কা ভূমিকম্প হয় ওড়িশার পুরী ও সংলগ্ন এলাকায়। কেন্দ্রীয় আবহ বিজ্ঞান দফতর জানাচ্ছে, ওই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভুবনেশ্বরের কাছে। তবে সেখানে কোনও হতাহতের খবর নেই।
আমেরিকার ভূতত্ত্ব বিভাগ (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, এ দিন ভারতীয় সময় ৪টে ১৪ মিনিটে দক্ষিণ ইরানের খাস শহরের কাছে মাটির ১৫.২ কিলোমিটার গভীরে ৭.৯ তীব্রতার ভূমিকম্পটির জন্ম। ভূমিকম্পে খাস শহর ও তার আশপাশের ব্যাপক সম্পত্তি ও জীবনহানির খবর এলেও, ইরানের এক সরকারি আধিকারিকের মন্তব্য ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল পাহাড়ে ঘেরা মরুভূমিতে হওয়ায় মৃতের সংখ্যা ‘খুব বেশি’ নয়। তবে সেখানকার বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের কাছেই রয়েছে একটি রুশ নির্মিত পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ভূমিকম্পে তার কোনও ক্ষতি হয়নি বলেই সরকারি সূত্র জানাচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরপর দু’টি ভূমিকম্প হল ইরানে। গত ৯ এপ্রিল ৬.৩ পরিমাপের কম্পনে মৃত্যু হয় ৩৭ জনের। আহত প্রায় ৮৫০ জন। নয়াদিল্লিতে বসেও দশ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে টের পাওয়া যায় ভূমিকম্পটি। কিছু কিছু অঞ্চলে অফিস-বাড়ি ছেড়ে আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসেন মানুষ। দিল্লির মতো না হলেও আতঙ্ক ছড়ায় পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতেও। নয়াদিল্লির এক ইনসিওর্যান্স সংস্থায় কর্মরত ভিধু সেখরি জানান, অফিসে বসে কাজ করতে করতে অনুভব করেন, হঠাৎ কাঁপতে শুরু করেছে চারপাশটা। “সঙ্গে সঙ্গে আমরা সকলে কাজ ছেড়ে নীচে নেমে আসি,” বলেন ভিধু। কনটপ্লেসে অফিসে বসে কাজ করছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রিয়া দেব। তিনি বলেন, “হঠাৎ দেখি চেয়ারটা কাঁপছে। আতঙ্কিত হয়ে অফিস ছেড়ে বেরিয়ে আসি রাস্তায়।” ভারতের কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, নয়াদিল্লিতে কম্পন অনুভূত হয় ইরানে সৃষ্টি হওয়া তীব্র ভূমিকম্পের জেরেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.