কাঠগড়ায় দুই ডাক্তার
দগ্ধের বয়ান পেতে হিমশিম পুলিশ
দুপুর দেড়টায় অগ্নিদগ্ধ এক বধূর জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা করেছিল পুলিশ। কিন্তু চিকিৎসকও ও নার্সদের উদাসীনতায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব হলনা বলে অভিযোগ পুলিশেরই। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জাকেও জানানো হয়েছে ঘটনাটি। হাসপাতালের সুপার অসিতবরণ সামন্তও ঘটনাটি খতিয়ে দেখে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
রবিবার সকালে অগ্নিদগ্ধ হন ভাতারের ধরমপুরের গৃহবধূ আজমিরা বেগম। তাঁর বাবা শেখ আব্দুল আজিমের অভিযোগ, দেনাপাওনা নিয়ে বচসার জেরে আমার মেয়েকে ওর স্বামী, শাশুড়ি, দাদাশ্বশুর ও দিদিশাশুড়ি মিলে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। ভাতার থানায় ওই চার জনের নামে মেয়েকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগও করেছেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে বেশ কয়েক জায়গায় তল্লাশির পরে আজমিরার স্বামী শেখ মোশারফ হোসেন ওরফে চাঁদকে গ্রেফতারও করছে পুলিশ। তবে বাকিরা পলাতক।
রবিবারই খবর পেয়ে ওই বধূর জবানবন্দি নিতে হাসপাতালে যান হাসপাতালের পুলিশ পোস্টে কর্তব্যরত এএসআই কল্লোল কবিরাজ। সুপারের দফতরে জবানবন্দি রেকর্ড করার অনুমতিও চান তিনি। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা চিঠিতে কল্লোলবাবু অভিযোগ করেছেন, তিনি প্রথমে ওই জবানবন্দি নেওয়ার অনুমতি চাওয়া নথিটি হাসপাতালের যে বিভাগে আজমিরা ভর্তি রয়েছেন, সেই সিবিএস ফিমেল ওয়ার্ডের নার্সদের হাতে দিতে যান। কিন্তু তাঁরা এই নথি নিতে চাননি। পরে পিড়াপিড়ি করায় কর্তব্যরত নার্স সেই নথি ছুঁড়ে ফেলে দেন বলেও তাঁর অভিযোগ। এরপরে কল্লোলবাবু ওই বিভাগে কর্তব্যরত এক চিকিৎসকের কাছে যান।
আজমিরা বেগম। —নিজস্ব চিত্র।
সনৎ দাস নামে ওই চিকিৎসকও জবানবন্দির অনুমতি চাওয়ার নথিটি নিতে অস্বীকার করেন। পরে কল্লোলবাবু জোর করায় হাসপাতালের অন্য এক চিকিৎসক সুব্রত ঘটকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন তিনি। তারপরে সনৎবাবু জানান, “এটা সুপারের অনুমতি ছাড়া করা যাবে না।” কল্লোলবাবু জানান, বারবার অনুরোধ এবং কলবুক পাঠিয়েও যে চিকিৎসকের অধীনে আজমিরা ভর্তি হয়েছেন তিনি আসেননি। তখন হাসপাতাল থেকে চলে আসেন তিনি। পরে ভাতার থানার তদন্তকারী অফিসার সাধন পাত্র ও জেলা পুলিশের সিআই সমরেশ দে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে ওই বধূর বাপের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের উপস্থিতিতে সুশিল মুর্মু নামে এক চিকিৎসক আজমিরার জবানবন্দি নেন।
বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, “ওই বধূর শরীরের শতকরা ৬০ ভাগ অগ্নিদগ্ধ। যে কোনও সময়েই মারা যেতে পারেন তিনি। তাই আমরা সেদিন দুপুরের মধ্যেই তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করতে চেয়েছিলেম। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকেদের গাফিলতিতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার আগে তা রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে যদি মহিলা মারা যেতেন তাহলে ওই মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিটি আদালতে পেশ করা সম্ভব হতো না।” তাঁর আরও অভিযোগ, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে হাসপাতালে। জবানবন্দি নিতে গেলে বারবারই এক শ্রেণির চিকিৎসক বা নার্সদের উদাসীনতায় তা সময়ে নেওয়া যাচ্ছে না।
হাসপাতালের সুপার অসিতবরণ সামন্ত বলেন, “পুলিশের ওই এএসআই রবিবারই আমাকে জবানবন্দি রেকর্ড করাতে না পারার কথা টেলিফোনে জানিয়েছিলেন। এটা আমাদের তরফে এক সাঙ্ঘাতিক বিচ্যুতি। নিয়ম হলো, এই পরিস্থিতিতে সুপারের অনুমতির দরকার নেই। জরুরী বিভাগের যে কোনও চিকিৎসকই এই জবানবন্দি সংগ্রহে পুলিশকে সাহায্য করতে পারেন। আমরা ঘটনার তদন্ত করব। দোষিদেরও চিহ্নিত করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.