গত পাঁচ দশকেও সীমানা পাঁচিল তৈরি করার কাজ শেষ না হওয়ায় উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে অসামাজিক কাজকর্ম বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। অভিযোগ, সীমানা পাঁচিল না থাকায় সন্ধ্যা নামতেই দুষ্কৃতীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে সাট্টা, জুয়া ও নেশার আসর বসাচ্ছে। বাড়ছে ছিনতাই ও চুরির ঘটনাও।
পাশাপাশি, সীমানা পাঁচিল না থাকায় বাসিন্দাদের একাংশ দিনভর বাইকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরের ভিতর দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করছেন বলে অভিযোগ। এতে চিকিৎসাধীন রোগীরা সমস্যায় পড়েছেন। সম্প্রতি, নিরাপত্তার অভাববোধ করে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ ইটাহারের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে সীমানা পাঁচিল তৈরির কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মালিদ হোসেন এ দিন বলেন, “সীমানা পাঁচিল তৈরির কাজ শেষ না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি একাধিক বার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছে জানানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকেও লিখিত ভাবে তা জানানো হয়েছে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাসবিহারী দত্ত জেলার নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি বলেন, “উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
প্রায় পাঁচ দশক আগে প্রায় ৩০ বিঘা সরকারি জমির উপরে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গড়ে ওঠে। ৩০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স-সহ ২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী আছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরেই চিকিৎসক ও নার্সদের ৩০টি সরকারি আবাসন রয়েছে। ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৩ লক্ষ বাসিন্দা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। ২০০৫ সালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির সীমানা পাঁচিল তৈরির কাজ শুরু করা হয়। ২০০ মিটার পাঁচিল হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে কেনও কাজ বন্ধ হয়ে গেল সেই ব্যাপারে ব্লক ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা কিছু জানাতে পারেননি।
চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর একাংশের অভিযোগ, সীমানা পাঁচিল না থাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরের ফাঁকা মাঠে দুষ্কৃতীরা সাট্টা, জুয়া ও মদের আসর বসাচ্ছে। মাঝেমধ্যেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে মদ-কাশির সিরাফের খালি বোতল, তাস, মোমবাতি ও নেশা জাতীয় আঠার খালি প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কিছু দিন আগে দুষ্কৃতীরা বাইকে চেপে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে ঢুকে এক জন রোগীর আত্মীয়ার গলার হার ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। কয়েক মাস আগে এক চিকিৎসক ছুটিতে থাকাকালীন তাঁর আবাসনের দরজা ভেঙে দুষ্কৃতীরা সর্বস্ব চুরি করে। গভীর রাতে দুষ্কৃতীদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যেই নার্সদের আবাসন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি বিভাগের দরজায় শব্দ করে ভয় দেখিয়ে পালায়।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কয়েক জন চিকিৎসক বলেন, অসামাজিক কাজকর্মের প্রতিবাদ করলেই দুষ্কৃতীরা এলাকাছাড়া করার হুমকি দেয়। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন। একাধিকবার সীমানা পাঁচিল তৈরির কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েও লাভ হচ্ছে। অনেকেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। ইটাহার থানার ওসি গৌতম রায় জানান, অসামাজিক কার্যকলাপ রুখতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। |