বাঙালির পাতে মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় বাজার দর ছিল চড়া। গত কয়েক দিন ধরেই বাজারে মাছের যোগান কম। বাজারে অমিল বিভিন্ন জাতের মাছও। সোমবার নতুন বছর শুরুর দিন বাজারে মাছের চাহিদা থাকলেও তা সামাল দেওয়া যায়নি। ফলে এদিন বাজারে মাছের দর ছিল ঊর্ধ্বগামী।
বহরমপুরের নতুন বাজার মাছের আড়তে অন্য সময়ে লরি বোঝাই করে মাছ আসে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে ওই মাছ আসায় ভাটা পড়েছে। ফলে কমে গিয়েছে লরির সংখ্যাও। কারণ হিসেবে এক আড়ত মালিক বলেন, “গত বছর অনাবৃষ্টির কারণে খাল-বিলে জল নেই। এই গরমে তাও শুকিয়ে গিয়েছে। জল না থাকায় পুকুর-বিলে মাছ চাষ কমে গিয়েছে। ফলে লোকাল মাছের যোগান নেই।”
এদিন বহরমপুরের বাজারে অন্ধ্রের গোটা রুই ১৩৫-৪০ টাকা কিলো দরে এবং ওই মাছ কাটা ১৫০-১৬০ টাকা কিলো দরে বিকিয়েছে। লোকাল গোটা রুই বিক্রি হয়েছে ২০০-২৫০ টাকা কিলো দরে। ৩০০-৩৫০ টাকা কিলো দরে ওই মাছ কাটা বিক্রি হয়েছে। ট্যাংরা ৪০০ টাকা কিলো দরে, পাবদা ৪৫০-৫০০ টাকা এবং ৩০০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হয়েছে পিউলি মাছ।
গলদা ৫০০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হয়েছে। কুচো চিংড়ির দর ছিল কিলো প্রতি ৩০০ টাকা। মাছ ব্যবসায়ী অনুপ পাল বলেন, “পুকুর, খাল ও বিলে ছোট মাছ দেখা যায়। কিন্তু ওই মাছ ধরে ফেলায় এবং বৃষ্টি না হওয়ায় মাছ চাষ হয়নি। ফলে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এতে চাহিদার সঙ্গে যোগানের ফারাক রয়েছে। বেড়েছে মাছের দর।”
শুধু মাছের দর নয়, এদিন সব্জি বাজারেও ছিল আকাশ ছোঁয়া দর। নতুনবাজার কাঁচা মাল ব্যবসায়ী কিশোরকুমার ভকত বলেন, “আলু-পেঁয়াজেরও দর বেড়েছে। অন্য সময়ে ৬ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি হলেও এদিন দর ছিল কিলো প্রতি ৮ টাকা। পেঁয়াজের পাইকারি দর সাড়ে আটশো থেকে নশো টাকা হলেও ১২ টাকা কিলো দরে তা বিক্রি হয়েছে।” তাঁর কথায়, “হিমঘরের আলু এখনও বাজারে আসেনি। চাষির ঘরের মজুত থাকা আলু এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আলুর বাজার দর একটা চাঙা হলেই হিমঘরের আলু বাজারে আসবে। ওই আলু বাজারে আসতে অক্ষয় তৃতীয়া বা ১৫ দিন সময় লাগবে।”
এদিন বাজারে ইলিশের দরও ছিল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সাইজ অনুযায়ী ৫৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা কিলো দরে ইলিশ বিকিয়েছে। সেই তুলনায় মাংসের বাজার দর ছিল কম।
যদিও গত কয়েক দিনে খাসির মাংসের দর বেড়েছে। খাসির মাংস ৪৬০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হয়েছে। গোটা মুরগি ১২০ টাকা এবং কাটা মুরগি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দেশি মুরগির দর ছিল আরও বেশি।
এদিন হালখাতা উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ছিল পুজো। সেই উপলক্ষে ফলের বাজার দরও ছিল চড়া। আপেল ১৫০ টাকা কিলো দরে, আঙুর ৮০ টাকা, তরমুজ ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কলা ২৪ টাকা ডজন ও কমলালেবু প্রতিটি ৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ী নীলিমেষ বিশ্বাস বলেন, “ফলের বাজার দর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। বাজার দর যা তাতে মধ্যবিত্ত পরিবারে আঁচ লেগেছে। প্রশাসনও সব জেনে চুপ করে বসে আছে।” |