বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন। উৎসব লেগেই থাকে বঙ্গজীবনে। আর উৎসবে আম বাঙালীর পাতে মিষ্টি থাকবেই। রসে বসে থাকা বাঙালীর বিশেষ দিনে মিষ্টি মানেই মনে আসে নিঁখুতি, পান্তুয়া, সরভাজা ও সরপুরিয়া।
বাঙলা নববর্ষের প্রথম দিনে সরভাজা ও সরপুরিয়া চাহিদা তুঙ্গে কৃষ্ণনাগরিকদের মধ্যে। এ দিন মিষ্টি মুখ করা ও করানোর হিড়িক পড়ে প্রতিটি বাড়িতে। পাশাপাশি বছরের পয়লা দিনে দোকানে দোকানে চলে হালখাতার উৎসব। সবমিলিয়ে নববর্ষের প্রথম দিনে মিষ্টি ব্যবসায়ীদের মুখে চওড়া হাসি। সারাবছর তাঁরা এই দিনটার জন্যই হাপিত্যেশ করে অপেক্ষা করেন।
নদিয়া জেলা মিষ্টি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গৌতম দাস বলেন, “দিন দিন ছানার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তার উপর উৎসবের দিনগুলিতে ছানার যোগান কম থাকে। স্বাভাবিকভাবেই মিষ্টির দামও চড়ে। কিন্তু পকেটের মায়া ত্যাগ করে মানুষ মিষ্টির দোকানে সার দেন কেনাকাটা করতে।” ভাতজাংলা-পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা নিখিল মল্লিক মিষ্টির এই চাহিদা সম্পর্কে বলেন, “প্রতিটি উৎসবেরই একটা বিশেষত্ব আছে। পয়লা বৈশাখের বিশেষ দিক হল মিষ্টি মুখ করা। মিষ্টি ছাড়া এই দিনটার অস্তিস্ব কল্পনাই করা যায় না। দাম বাড়লেও মিষ্টি কিনতে কার্পণ্য করেন না কেউই।” তাই পয়লা বৈশাখে অতিরিক্ত মিষ্টির চাহিদা সামাল দিতে আগে থেকেই কোমর বেধে নেমে পড়েন ব্যবসায়ীরা। আগাম মজুত করেন ছানা।
গড়পড়তা দিনের তুলনায় একটু অন্য রকম মিষ্টিও বানান অনেক ব্যবসায়ী। তার জন্য অবশ্য আগাম ‘অর্ডার’ দিতে হয় ক্রেতাকে। সেক্ষেত্রে পেস্তা, বাদাম সহযোগে তৈরি করা হয় সরপুরিয়া বা সরভাজা। কিন্তু সুদিনের মাঝেও কোথাও যেন অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, হালখাতায় এখন দোকানের মিষ্টির জায়গা দখল নিচ্ছে কারখানায় তৈরি লাড্ডু।
মিষ্টি ব্যবসায়ী সংগঠনের কৃষ্ণনগর শাখার সম্পাদক নিত্যরঞ্জন গোপ বলেন, “জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে মিষ্টির চাহিদা কিন্তু বাড়ছে না। মিষ্টির পরিবর্তে মুখরোচক বিভিন্ন খাবার এবং লাড্ডুর চাহিদা।” তবে যাই হোক কৃষ্ণনগরের সরভাজা ও সরপুরিয়ার বিকল্প এখনও অবধি কিছু নেই। নববর্ষের মতো যে কোনও উৎসবে শহরের নামী দোকানগুলিতে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন জানান দেয় সরপুরিয়া-সরভাজার চাহিদা কমতির কোনও লক্ষণই নেই। |