শতবর্ষের গৌরব অর্জনের সাত বছর আগে সাউথ ক্লাব সোমবার বাংলা নববর্ষে এমন একটা গৌরব অর্জন করল যার নজির সম্ভবত বিশ্বে কোনও টেনিস ক্লাবের নেই। ‘প্রাচ্যের উইম্বলডন’-এ আজ একই সঙ্গে ‘উইম্বলডন’, ‘রোলাঁ গারো’, মেলবোর্ন পার্ক! পাশাপাশি। এত দিন সাউথ ক্লাবে ছিল উইম্বলডন মানের ছ’টা ঘাসের কোর্ট। ফরাসি ওপেন মানের ছ’টা ক্লে কোর্ট। সোমবার থেকে তার সঙ্গে সংযোজন পাঁচটা ‘রিবাউন্ড এস’ সিন্থেটিক হার্ডকোর্ট। অস্ট্রেলীয় ওপেন মানের। ফিতে কেটে যার দ্বারোদ্ঘাটন করে সাউথ ক্লাবের বয়োজ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক টেনিস তারকা-সদস্য নরেশ কুমার-ও বললেন, “আমার তো মনে পড়ছে না বিশ্বের কোথাও এমন দেখেছি বলে!”
ভারতের দুই প্রাক্তন ডেভিসকাপার তথা নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন নরেশ কুমার এবং জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। প্রাক্তন জাতীয় কোচ আখতার আলি। দেশের ফেড কাপ টিমের কোচ এনরিকো পিপার্নো। সাউথ ক্লাবের চার উজ্জ্বল ভূমিপুত্রের র্যাকেট থেকেই প্রথম হলুদ বল আছড়ে পড়ল সদ্য নির্মিত হার্ডকোর্ট এরিনার এক নম্বর কোর্টে। বিরল সেই ফটোসেশন শেষে সাউথ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ঘোষণা, এ দিনই সকালে হার্ডকোর্ট সংলগ্ন জায়গায় ভূমিপুজো করা হয়ে গিয়েছে পরিকল্পিত সুইমিং পুলের। “এ বছর অগস্টের মধ্যেই সাউথ ক্লাবে সুইমিং পুল-ও হয়ে যাবে।” |
সব মিলিয়ে যার নিটফল, সাউথ ক্লাবের অনেক বছর পর আবার আন্তর্জাতিক টেনিস টুর্নামেন্ট, বিশেষ করে ভারতের ডেভিস কাপ টাই পাওয়ার বড় সুযোগ তৈরি হওয়া। এ দিনই জয়দীপ জানিয়ে দিলেন, ভারতের পরের ডেভিস কাপ সামনের বছর ফেব্রুয়ারিতে। যেটা সাউথ ক্লাবে হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। জানা গেল, এই মর্মে সদ্য গঠিত ভারতীয় টেনিস প্লেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (আইটিপিএ)-র প্রেসিডেন্ট জয়দীপ দিল্লিতে সর্বভারতীয় টেনিস সংস্থা (এআইটিএ)-র প্রধান অনিল খন্নার থেকে সবুজ সংঙ্কেতও পেয়েছেন। এ ছাড়াও দেশ জুড়ে ফি-বছর যে সব আইটিএফ চ্যালেঞ্জার বা ফিউচার্সের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়, তার কয়েকটার বরাত এ বার সাউথ ক্লাব পেতে পারে। যা সাম্প্রতিককালে প্রায় দূর অস্ত ছিল। কারণ, দেশের বর্তমান ডেভিসকাপাররা-সহ প্রথমসারির সব টেনিস প্লেয়ার ঘরের মাঠেও যে কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হার্ডকোর্টে খেলতে পছন্দ করেন।
আইটিপিএ পরিকল্পিত সার্কিটের (যা এ বছর অক্টোবরে শুরু হতে পারে বলে জানালেন সংস্থার কার্যকরী কমিটির অন্যতম সদস্য পিপার্নো) টুর্নামেন্টও এ শহরে হলে স্বভাবতই সাউথ ক্লাব এখন তার প্রধান দাবিদার। তবে আইটিপিএ নিয়ে নরেশ-জয়দীপ মতপার্থক্য এ দিনই দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল। নরেশকুমারযাঁকে এআইটিএ ‘বিদ্রোহীদের মুখ’ আইপিটিএ-র প্রধান চরিত্র সোমদেব-মহেশদের সঙ্গে আলোচনার জন্য মনোনীত করেছে, তিনি বললেন, “এ দেশে প্লেয়ারদের কোনও সংস্থা শেষমেশ বাঁচেনি। ক্রিকেটে বাঁচেনি। টেনিসেও বাঁচবে না। কারণ প্লেয়াররা সব সময় খেলে বেড়ায়। তাদের অ্যাসোসিয়েশন চালানোর মতো সময় থাকে না। মহেশ এ বছরের শেষে অবসর নিলেও ওর নিজের ব্যবসা আছে। তবে প্লেয়ার’স অ্যাসোসিয়েশন বা এআইটিএ যারাই আমার পরামর্শ চাক, আমি সাহায্য করতে তৈরি। একই সঙ্গে আমাকে সত্যি কথাটা বলা থেকেও আটকে রাখা যাবে না। যেমন বলছি, এআইটিএ আমাকে যে কমিটিতে রেখেছে সোমদেবদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে সেই কমিটিরও কিছু হবে না।”
যা শুনে আইটিপিএ প্রেসিডেন্ট জয়দীপ শুধু বললেন, “এমন দিনে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য না। শুধু বলব গুড লাক টু নরেশ। হাজার হোক নরেশকুমার আমার আন্তর্জাতিক টেনিস জীবনের প্রথম ক্যাপ্টেন।” |