খেলা পাগল অস্ট্রেলিয়াকে এতদিন কুরে খেত দু’টো যন্ত্রণা। প্রথমটা এই আত্মবিশ্লেষণ যে, তারা হয়তো কোনও দিনই ফুটবল বিশ্বকাপ জিততে পারবে না। দ্বিতীয়টা ছিল আরও কষ্টদায়ক। গল্ফে মাস্টার্সের আসরে আট বার রানার্স হলেও কখনও খেতাবের মালিকানা পাননি কোনও অস্ট্রেলীয়। এমনকী কিংবদন্তি গ্রেগ নরম্যানও নয়। অবশেষে ছিয়াত্তর বছরের সেই খরা কাটল জর্জিয়ায়, রবিবাসরীয় বৃষ্টিস্নাত বিকেলে। নাটকীয় প্লে-অফে আর্জেন্তিনীয় অ্যাঞ্জেল কাবরেরাকে হারিয়ে অ্যাডাম স্কট আগাস্টা মাস্টার্স জেতার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মাতল অস্ট্রেলিয়া!
আগাস্টায় জিততে না পারার ক্ষত যে কত গভীর ছিল সেটা প্লে অফ জিতে ইতিহাস গড়ার মুহূর্তে স্কটের দু’হাত মুঠো করে আকাশে ছুড়ে “কাম অন অজিজ” চিৎকারটাই বলে দেয়। গত বারের জয়ী বুব্বা ওয়াটসনের হাত থেকে চ্যাম্পিয়নের বহু কাঙ্খিত সবুজ জ্যাকেটটা নেওয়ার সময়ও বলেন, “খেলাধুলোর দেশ হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার আলাদা গর্ব রয়েছে। কিন্তু এই একটা সম্মান এতদিন আমাদের বেল্টে ছিল না।” |
নরম্যানকে গুরু মানা বত্রিশ বছরের তারকার গুরুদক্ষিণা দিতে ভুল হয়নি। স্কট বলেছেন, “অস্ট্রেলিয়াকে গল্ফ খেলতে শিখিয়েছে গ্রেগ নরম্যান। ওই আমার প্রেরণা। প্রচুর সাহায্য পেয়েছি ওর কাছে। তাই আজ এই সম্মান যতটা আমার, ঠিক ততটাই গ্রেগেরও প্রাপ্য।” পুরস্কারমূল্যে ১১ লাখ পাউন্ড জয়ী আরও বলেছেন, “ওর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে হবে না। দু’জনে মিলে বিয়ার নিয়ে বসে এটা সেলিব্রেট করতে হবে।” নরম্যানও ভালবাসাটা ফিরিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, “অ্যাডামকে আমি চিনি। এই সাফল্য ওকে আরও তাতিয়ে দেবে। অ্যাডাম ইতিহাসের সব থেকে বেশি মেজর খেতাব জয়ী অস্ট্রেলীয় হয়ে শেষ করলেও আশ্চর্য হব না।”
২০১১-য় আর এক অস্ট্রেলীয় জেসন ডে-র সঙ্গে এখানে যুগ্ম রানার্স হয়েছিলেন স্কট। রবিবার কিন্তু মুহূর্তের জন্যও লক্ষ্যচ্যুত হলেন না। কারবেরা আর স্কট দু’জনেই শেষ রাউন্ডের শেষ হোল বার্ডি করে নয়-আন্ডার ২৭৯ স্কোরে শেষ করেন। প্লে অফেও প্রথম হোল-এ দু’জনেই পার স্কোরে। পরের হোল-এ কারবেরা বার্ডি ফস্কান একটুর জন্য। আর দশ ফুট থেকে বার্ডি করে ইতিহাস গড়ে ফেলেন স্কট। |
লাফিয়ে উঠে একা একাই হাই ফাইভ করলাম। ওয়াহ, দারুণ উত্তেজিত লাগছে। অ্যাডাম স্কটের জন্য খুব ভাল লাগছে।
টুইটারে শেন ওয়ার্ন |
|
ইদানীং সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ের বাসিন্দা স্কট নিজের সাফল্যে ভাগ্যের হাত দেখছেন। বলেছেন, “অবিশ্বাস্য জয়। প্রথম অস্ট্রেলীয় হিসাবে আগাস্টায় জেতা আমার ভাগ্যে ছিল বলেই হল। না হলে আজ অন্য কোনও অস্ট্রেলীয় গল্ফার খেতাব জিততে পারত।” কথাটা মনে ধরবে জেসন ডে-র। যিনি একটা সময় পর্যন্ত স্কট আর কারবেরার সঙ্গে টক্কর দিলেও শেষের দিকে পিছিয়ে পড়ে তৃতীয় স্থানে শেষ করলেন।
অন্য দিকে, সম্ভবত গল্ফ কোর্সে জীবনের সব থেকে বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার পর টাইগার উডস চার শটে পিছিয়ে শেষ করলেন চতুর্থ হয়ে। উডস যদি আগাস্টার মহাবিতর্ক হন, তবে মহাবিস্ময় ইতিহাস গড়া চিনা কিশোরে গুয়ান তিয়ানলাং। চোদ্দো বছরে সব থেকে কম বয়সি গল্ফার হিসাবে আগাস্টায় কাট নিশ্চত করার পর সেরা অপেশাদারের রুপোর ট্রফিও নিয়ে গেল সে। |