ঝাঁ চকচকে টিম হোটেলের কাচের দরজা ঠেলে ঢুকতে না ঢুকতেই চোখে পড়বে লাল-রুপোলি বিশাল পোস্টার। ‘ওয়েলকাম টু দ্য লায়ন্স ডেন’! সিংহের ডেরায় আপনি স্বাগত!
আইপিএলের মোহালিতে শব্দ তিনটের মানে বুঝতে তিন সেকেন্ডও লাগার কথা নয়। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ‘হোম’ বলে কথা! আর আইপিএলের মোহালিতে শব্দ তিনটে পড়ে যদি কেউ মুচকি হেসে ফেলেন, তাঁকেও দোষ দেওয়া যাবে না। তিনটে ম্যাচের মধ্যে পরপর দুটো ম্যাচ কুৎসিত ভাবে হেরে ওঠা এগারো জনকে আর যা-ই হোক, সিংহ বলা চলে না। বরং টিমের তারকা নামগুলোর দিকে এক ঝলক তাকালে সিংহের আগে আপনাআপনি একটা বিশেষণ বসে যায়।
বুড়ো!
উদাহরণ খুঁজতে বেশি দূর যেতে হবে না। কিংস ইলেভেন ক্যাপ্টেনই তো আছেন হাতের কাছে। সেই কবে ডেকান চার্জার্সের হয়ে আইপিএল ট্রফি তুলেছিলেন। আজকের বিবিএম জেনারেশনের কাছে তা প্রস্তরযুগের ঘটনা। ‘হিরো’ নয়, ৪১ বছরের অ্যাডাম গিলক্রিস্টের সঙ্গে এখন অনেক বেশি করে জড়িয়ে গিয়েছে ‘হেরো’ শব্দটা। |
নমুনা আরও আছে। পঞ্জাব ব্যাটিংকে যিনি পেপসি আইপিএলে প্রায় একার কাঁধে টানছেন, সেই ডেভিড হাসির ৩৬ নম্বর জন্মদিন এল বলে। অলরাউন্ডার আজহার মেহমুদ? তিনিও চল্লিশ ছুঁইছুঁই। টিমে তরুণ রক্ত বলতে মনন ভোহরা, মননদীপ সিংহ, গুরকিরত সিংহ নামের সঙ্গে বায়োডেটা জুড়ে দিলেও কেউ চিনবে কি না সন্দেহ। সে জন্যই পঞ্জাব নিয়ে চণ্ডীগড় কেমন ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা। এ দিন বিকেলে বিমানবন্দর থেকে যখন একে একে বেরোচ্ছেন গিলক্রিস্ট-হাসি-প্রবীণ কুমাররা, কেউ ফিরেও তাকালেন না। দেখে কে বলবে ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরছে। অটোগ্রাফের খাতা, মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলা কোথায় কী!
বরং অনেক বেশি আগ্রহ মঙ্গলবারের ম্যাচের অতিথিদের নিয়ে। গিলি-হাসিরা আছেন নিজের মতো, আর পঞ্জাব হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সুনীল নারিনের এক ঝলকের জন্য! এর পর নিশ্চয়ই পঞ্জাবে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ‘অ্যাডভান্টেজ কেকেআর’, বলার দরকার পড়বে না।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে উড়িয়ে দিয়ে জয়ের রাস্তায় ফেরার চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। ‘বুড়ো সিংহ’-র এই ডেরায় এসে নাইটরা ফুরফুরে মেজাজে ঘুরবেন, আশ্চর্যের কিছু নেই। কলকাতা থেকে মোহালি আসতে আসতেই অর্ধেক দিন কেটে গিয়েছে, তাই সোমবার আর মাঠের ধারেকাছে যায়নি টিম গম্ভীর। গেলে দেখতেন প্রীতি জিন্টার ঘরের মাঠে রানের ‘প্রীতি-ভোজে’র ব্যবস্থা না থাকলেও দেড়শোর কাছাকাছি ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মোহালির পিচ-দর্শন নয়, কেকেআরের ‘মেনু’-তে সন্ধেয় টিম হোটেলের সুইমিং পুলে হালকা ‘রিকভারি সেশন’ রইল। তার পর ছুটি। হোটেলের এদিক-ও দিক যে যার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে সোনালি-বেগুনি জার্সি। সহকারী কোচ বিজয় দাহিয়ার সঙ্গে ডিনার টেবিলে বসে গম্ভীরের বৈঠক। উইনিং কম্বিনেশন সম্ভবত পাল্টাচ্ছে না। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম হয়তো বাইরেই থাকছেন। লক্ষ্মীরতন শুক্লকে আবার দেখা গেল টিভিতে চেন্নাই-পুণে ম্যাচে ডুবে। রংচঙে প্লাস্টার নিয়ে হোটেল চত্বরেই ঘুরছেন সুনীল নারিন। সান্ধ্যভ্রমণ চলছে।
দেখলে আত্মতুষ্টি মনে হতে পারে। কিন্তু তা নয়। বরং নাইটদের শরীরী ভাষায় ঠিকরে বেরোচ্ছে নীরব আত্মবিশ্বাস। নতুন প্রতিজ্ঞার খোঁজ। রবিবার অত বড় জয়ের পরেও তাই কেকেআর শিবিরে পার্টি নেই, আসেনি টিম মালিক শাহরুখ খানের তরফ থেকে আসেনি কোনও বিশেষ বার্তা। ভাবখানা এমন: একটা ম্যাচ না হয় বড় ব্যবধানে জিতেছি। তাই বলে এখনই উচ্ছ্বাসের সময় আসেনি। আইপিএলের রাস্তায় এখনও অনেক ‘হার্ডল’ বাকি। গম্ভীরের মগজাস্ত্রে-র লক্ষ্যও খুব সহজ।
রবিবারের পর আপাতত চারে দুই। হার-জিত সমান-সমান। পঞ্চনদের দেশে চাঁদমারি পাঁচে তিন। |