|
|
|
|
পাশে বিহার, তামিলনাড়ু |
এক্তিয়ারে হাত নয়, সংস্কার প্রস্তাবে বাংলার না |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্যের অধিকারে কোনও ভাবেই হস্তক্ষেপ করা চলবে না। রাজধানীতে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠকে আজ এই মর্মে মুখর হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
বিজ্ঞান ভবনে কমিশনের এই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু মমতা আসতে পারেননি, পাঠিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে। বৈঠকে কমিশনের বেশ কয়েকটি প্রস্তাবের জোরালো বিরোধিতা করেছেন মণীশবাবু। এবং এর মাধ্যমে কেন্দ্রের উদ্দেশে মমতার যে বার্তা তিনি পৌঁছে দিয়েছেন তা হল, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারের বিষয়। রাজ্যের এই সংক্রান্ত প্রশাসনিক অধিকারে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নে তৈরি হওয়া জটের পরিপ্রেক্ষিতে মমতা সরকারের এই জেহাদ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রের প্রস্তাবগুলির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থানকে সমর্থন করেছে বিহার তামিলনাড়ুর মতো অ-কংগ্রেসি রাজ্যগুলিও। প্রশাসনিক সংস্কারের প্রশ্নে তৃণমূল, জেডিইউ বা এডিএমকে-র মতো আঞ্চলিক দলশাসিত রাজ্যগুলির এই সমীকরণ জাতীয় রাজনীতির সাপেক্ষেও তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে এটা এমন সময়ে ঘটছে, যখন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদেই নেমেছেন নীতীশ কুমার। তৃতীয় ফ্রন্টের ভাবনাকে স্বাস্থ্যকর প্রস্তাব আখ্যা দিয়ে নতুন সমীকরণের সম্ভাবনাকে উস্কে দিচ্ছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। মোদীর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকলেও হাতের তাস বার করছেন না জয়ললিতাও।
প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের একটি প্রস্তাব ছিল সিবিআইয়ের কাজের পরিধি বাড়ানো সংক্রান্ত। বলা হয়েছিল, কোনও রাজ্যে অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই হস্তক্ষেপ করতে পারবে সিবিআই। বিষয়টির ঘোর বিরোধিতা করে মণীশবাবু তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের তালিকাভুক্ত বিষয়। কমিশনের প্রস্তাবটি রাজ্যের সার্বভৌমত্বে একটি বড় আঘাতেরই সামিল। এটি মানলে, সংবিধান এবং আইনব্যবস্থা রাজ্যকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, তার প্রতিও অন্যায় করা হবে।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য কবুল করেছে, প্রস্তাবটি ছ’বছর আগের। এখন রাজ্যে জঙ্গি হামলা হলে এনআইএ তদন্তের ভার নিতে পারবে। সিবিআইয়ের কাজের পরিধি বাড়ানো নিয়ে পুরনো প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য লড়াইয়ের প্রয়োজন নেই।
কমিশনের আরও দু’টি প্রস্তাবের আজ বিরোধিতা করেন মণীশবাবু। এক, রাজ্যের মত না নিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা। দুই, পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং অভিযোগের মীমাংসার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা। মণীশবাবু তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, “রাজ্যের মত ছাড়াই সেনা মোতায়েন করা হলে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক ধাক্কা খাবে। দেশের সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে তার কুপ্রভাব পড়তে বাধ্য।” তিনি আরও বলেন, “রাজ্যে ইতিমধ্যেই মানবাধিকার কমিশন, পুলিশ কমপ্লেন অথরিটি বা স্টেট সিকিউরিটি কমিশনের মতো সংস্থা রয়েছে, যারা নিজেদের কাজ যথার্থ ভাবে করছে। বাড়তি সংস্থার প্রয়োজন নেই।” প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে এ দিনের বৈঠকে মাত্র ৭ জন মুখ্যমন্ত্রী হাজির ছিলেন। আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন ৮ জন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বারবার আঘাত করার চেষ্টা নিয়ে বাংলা, ত্রিপুরা, বিহার, গুজরাত-সহ বিভিন্ন রাজ্যের সমালোচনা, এমনকী অসম-হরিয়ানার মতো কংগ্রেসি রাজ্যের উদ্বেগের মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে জানান, রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করেই প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে যা কিছু করা হবে। |
|
|
|
|
|