বুনো হাতির হানা রুখতে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বনবস্তি এলাকায় বিকল্প চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দফতর। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে ধান, ভুট্টার মত ফসলের লোভেই বুনো হাতির হানার ঘটনা ঘটে বলে বিশেষজ্ঞরা বন দফতরকে জানিয়েছেন। সে কারণেই বিকল্প চাষের সিদ্ধান্ত বলে দফতর জানিয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বিভিন্ন বনবস্তিতে হাতির হামলায় ফসল নষ্টের ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলায় কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে বলে জানিয়েছেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে বন কর্তারা যৌথ পরিদর্শন চালাবেন বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।
গত শনিবার বক্সার পানবাড়ি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে একটি নজর মিনারের উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন বনমন্ত্রী। সেখানেই তাকে বুনো হাতির হামলায় ফসল নষ্টের অভিযোগ জানিয়েছেন লাগোয়া কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। মন্ত্রী এই দিন বলেন, “হাতির হানায় রাজাভাতখাওয়া, পানবাড়ি, নিমতি, রায়মাটাং, কুমারগ্রাম এলাকার ফসল নষ্টের ঘটনা প্রায়শই শোনা যায়। মূলত ধান ও ভুট্টার লোভেই জঙ্গল থেকে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে হাতির দল। সে জন্য বনবস্তির চার ধারে পরিখা কাটার পাশাপাশি কৃষকদের বিকল্প চাষের জন্য উৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা রবীন্দ্র পালসাইনিকে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের বিভিন্ন বনবস্তিতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন বনমন্ত্রী। বিকল্প চাষে গ্রামবাসীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের পরে বক্সায় হাতির সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোকালয়ে হাতির হানার ঘটনাও। ২০১০ সালে হাতি গননায় ২১৫টি হাতি চিহ্নিত করা হলেও বর্তমানে সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২৫০টি হয়েছে বলে দফতর জানিয়েছে। লোকালয়ে হাতির হানায় ফসল নষ্টের পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।
তবে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, সরষে, বাদাম, আনারসের মত ফসল হাতির পছন্দ নয়, তাই এগুলির চাষ করলে ফসলের লোভে গ্রামে হাতির হামলা কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্যবিজ্ঞান বিভাগের অশোক সাহা বলেন, “শীত কালে সরষে, বাদাম ও আনারস, বর্ষায় আলু বা কচুর মতো ফসল পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করা যেতে পারে। বিকল্প চাষের পাশাপাশি জঙ্গলে হাতির খাবারের জন্য পর্যাপ্ত চালতা, বেতের মতো গাছও লাগানো প্রয়োজন।” পানবাড়ি বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য ঝনু সরকার বলেন, “প্রতিবছর ধান ভুট্টা লাগালেও হাতির অত্যাচারের ঘরে তোলা সম্ভব হয় না। বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। হাতির হানা রুখতে ও বিকল্প চাষের জন্য বনমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।” |