মোদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধেই নীতীশ
প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর নাম জানাতে বাড়ালেন চাপ
স্নায়ুর যুদ্ধ তুঙ্গে উঠল এনডিএ-র দুই শরিকের মধ্যে।
জেডিইউ-র জাতীয় পরিষদের বৈঠকের শেষে আজ নাম না-করে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন নীতীশ কুমার। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর সক্রিয়তার তীব্র বিরোধিতা করে নীতীশ সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে আপস করে’ তাঁর দল ক্ষমতায় থাকবে না। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী স্থির করার জন্য বিজেপিকে এ বছরের শেষ পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দিলেন তিনি। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর এই পরোক্ষ আক্রমণেরও কিন্তু জবাবে দিয়েছে বিজেপি। শীর্ষস্থানীয় কোনও নেতা সরাসরি মুখ না খুললেও দলীয় মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, এনডিএ-রই এক মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে মোদীকে আক্রমণ করেছেন, তা দুর্ভাগ্যজনক।
আজ শেষ হল জেডিইউ-র দু’দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। এই বৈঠক থেকে যাতে মোদী-বিরোধী কড়া কথা বলা না হয়, সে জন্য আগেই নীতীশের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিল বিজেপি। নীতীশ এ দিন মোদীকে সরাসরি আক্রমণ করেননি ঠিকই, কিন্তু যা বলেছেন তাতে বিজেপি-র সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ নতুন মাত্রায় পৌঁছলো। জেডিইউ এ দিন যে রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়েছে, তাতেও স্পষ্ট বলা হয়েছে, আগামী লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী এমন কেউ হবেন, যিনি ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমাজের সমস্ত অংশকে সঙ্গে নিয়ে বিকাশের পথে এগোতে পারবেন। নীতীশের বক্তৃতার পরে এই প্রস্তাবকে বিজেপির প্রতি কড়া বার্তা বলেই মনে করছেন অনেকে।
জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে অসমিয়া টুপি মাথায় নীতীশ কুমার। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
এখন প্রশ্ন হল, মোদী নিয়ে নীতীশ যে বিপুল চাপ তৈরি করতে চেয়েছেন বিজেপির উপরে, সেটা কী ভাবে মোকাবিলা রাজনাথ সিংহের দল? বিজেপি কিন্তু একটা কথা স্পষ্ট করে দিয়েছে। সেটা হল, নীতীশ যতই আক্রমণ করুন না কেন, দল মোদীর পাশেই রয়েছে। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মোদীর যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে, তাকে অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা না হলেও দলের নৈতিক কর্তৃত্ব পেয়ে গিয়েছেন মোদী। আজকের ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে গেল, বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও মোদী-রাজনাথ-অরুণ জেটলির সমীকরণই প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে নীতীশকে পাল্টা চাপ দিতে শুরু করল বিজেপি। এই ঘটনায় লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা খুশি নন। সূত্রের খবর, তাঁরা চেয়েছিলেন নীতীশের মাধ্যমে মোদীকে চাপে রেখে ২০১৪ সালের ভোটে নিজেদের কর্তৃত্ব বাড়াতে। কিন্তু নীতীশকে জবাবে দিতে বিজেপি-র অতিসক্রিয়তা প্রমাণ করে দিয়েছে, সঙ্ঘ পরিবারের হাত মোদীর মাথার উপরই রয়েছে।
মোদীকে এ ভাবে কঠোর ভাষায় কেন বিঁধলেন নীতীশ?
বিহারে সংখ্যালঘু ভোটের পরিমাণ কম নয়। গত আট বছর ধরে এই ভোটব্যাঙ্ক ধরে রেখেছেন নীতীশ। এখন উগ্র হিন্দুত্বের প্রতীক মোদীর প্রতি নরম মনোভাব দেখালে ওই ভোটব্যাঙ্কে ধস নামার আশঙ্কা। নীতীশের পক্ষে তাই সেটা করা সম্ভব নয়। বস্তুত, এ দিন তিনি নিজের ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব তুলে ধরতে গিয়ে এমনও বলেছেন, “দেশের নেতৃত্ব এমন ব্যক্তির হাতে থাকা উচিত, যিনি টুপিও পরবেন, আবার তিলকও লাগাবেন।” এই ভাবে সংখ্যালঘুর ফেজ টুপি এবং হিন্দুত্বের তিলককে এক পংক্তিতে নিয়ে এসেছেন তিনি। বিহারে উচ্চবর্ণের ভোট বাদ দিলে সংখ্যালঘু, কুর্মি এবং অনগ্রসর শ্রেণি মিলিয়ে যে ভোট রয়েছে, তার পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি। এই ভোটব্যাঙ্ক এখন নীতীশের পক্ষে। তিনি তা নষ্ট করতে চান না। তাই মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে বিজেপিকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়াও তাঁর পক্ষে কঠিন বলেই মনে করছেন অনেকে।
নীতীশ কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার উদাহরণ হিসেবে এনডিএ-র প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকেই বেছে নিয়েছেন। বক্তৃতায় বারবার অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথা তুলে বলেছেন, “যিনি দেশের নেতৃত্ব দেবেন, তাঁকে হিন্দু অথবা মুসলমান, সমাজের সমস্ত অংশকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। অটলজির নেতৃত্বে তাই হয়েছে।... উনি বলতেন রাজধর্ম মেনে চলতে। আমিও সেটাই সমর্থন করি।” পরে সাংবাদিক বৈঠকে জেডিইউ শীর্ষ নেতা কে সি ত্যাগী বলেন, “আমরা কারও নাম করিনি। কিন্তু ইশারায় নিজেদের মনোভাব জানিয়েছি। কেউ বোকা নয়। যা বোঝার সবাই বুঝবে।”
এমন নয় যে, মোদীকে আক্রমণ করে নীতীশ অবিলম্বে এনডিএ ছেড়ে কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকবেন। ২০১৪ সালের আগে তেমন সম্ভাবনা নেই। তাই মোদীকে আক্রমণ করার পাশাপাশি নীতীশ বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহের সঙ্গেও আলোচনার রাস্তা খোলা রেখেছেন। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে তিনি বোঝাতে চাইছেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী পদ থেকে সরিয়ে নিলে তাঁর পক্ষেও এনডিএ-কে সমর্থন করা সহজ হবে। ত্যাগী জানিয়েছেন, “আমাদের সঙ্গে বিজেপি-র বহু পুরনো সম্পর্ক। এটা লুকোনোর বিষয় নয়। আমরা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। এমন কিছু করতে চাই না যাতে আমাদের জোটে আঘাত আসে।” এই মুহূর্তে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, তার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে করা সম্ভব বলেও জানিয়েছেন তিনি। নীতীশের এনডিএ ছেড়ে যাওয়াটাও আবার বিজেপি-র কাছে কাম্য নয়। তিনি দীর্ঘদিনের শরিক তো বটেই, বহু দুঃসময়েরও সঙ্গী। তবে বিজেপি-রই কেউ কেউ মনে করছেন, আজ মোদীর বিরুদ্ধে এতটা চড়া সুরে বার্তা না দিলেই পারতেন নীতীশ। বস্তুত, নীতীশের এ দিনের চড়া সুর তাঁর পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেল বলেই মনে করছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কার্যত বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে গেলেন। জেডিইউ-র বিরোধিতা সত্ত্বেও আজ যে ভাবে মোদীর পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি, তা ভবিষ্যতেও বহাল থাকলে নীতীশের পক্ষে তা হলে এনডিএ-তে থাকা সম্ভব হবে কি না সন্দেহ।
আবার যদি মোদীর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা না-করেও তাঁকে সামনে রেখেই বিজেপি ভোটে যায়, তা হলেও নীতীশ অস্বস্তিতে পড়বেন। সে ক্ষেত্রে তিনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে চূড়ান্ত স্নায়ুযুদ্ধটা যে শুরু করে দিয়েছেন, তা নিয়ে দিল্লির রাজনীতিকদের মনেই সন্দেহ নেই।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.