জেটলি-নীতীশ কথা
মোদী-প্রশ্নে জেরবার জেডিইউ
দুই ‘ম’। মোদী এবং মুসলিম। আর এই দুইয়ের চাপে এখন রীতিমতো উভয়সঙ্কটে নীতীশ কুমারের দল।
পরিস্থিতি এমনই যে, দিল্লিতে দলের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকেও মোদী প্রশ্নে কোনও আশু সঙ্কটমোচনের পথ দেখছেন না নীতীশের দলের নেতারা। অথচ এই পথ পেতেই তাঁরা পটনার পরিবর্তে দিল্লিতে দু’দিনের বৈঠকে বসেছেন। আজ ছিল জেডিইউ-এর কর্মসমিতির বৈঠক। আগামী কাল বসবে জাতীয় পরিষদ। কিন্তু ইঙ্গিত স্পষ্ট, এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না জেডিইউ নেতারা।
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীকে তুলে ধরার জন্য বিজেপির উদ্যোগের বিরোধিতা এখনও অব্যাহত রেখেছে জেডিইউ শিবির। এবং এর কারণও স্পষ্ট। মোদীর বিরোধিতা না করলে গত আট বছর ধরে বিহারে যে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নীতীশ গড়ে তুলেছেন, তাতে ধস নামার আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে ফায়দা তুলবেন নীতীশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লালুপ্রসাদ যাদব। উল্টো ছবিও রয়েছে। তা হল, মোদী বিরোধিতা অব্যাহত রাখতে গেলে বিজেপির মতো পুরনো এবং বড় শরিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের ভোট হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে লোকসভা ভোটের এক বছর আগে মোদী-কাঁটায় জেরবার নীতীশ কুমার।
বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির হস্তক্ষেপে এখনই মোদী প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা পিছু হটার ইঙ্গিত দিয়েছে জেডিইউ। শনিবার রাতেও জেটলির সঙ্গে বৈঠক করেন নীতীশ। সূত্রের খবর, দু’দলের সাম্প্রতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে কথা হয় বৈঠকে। এর আগে এ দিন কর্মসমিতির বৈঠকে মোদী বা জোট ছাড়ার প্রশ্নে এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও তারা যে মোদীকে কোনও ভাবেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেখতে চান না, সেই বার্তা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছে নীতীশের দল।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় বার গুজরাত জয়ের পর জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমশ নিজেকে প্রাসঙ্গিক করে তুলছেন মোদী। আর এ ব্যাপারে প্রশাসক হিসাবে সাফল্যই তাঁর তুরুপের তাস। এ দিন মোদী বিরোধিতার প্রশ্নে সেই প্রশাসক মোদীকেই কাঠগড়ায় তুলেছে জেডিইউ। গোধরা কাণ্ডের সময় মোদীর প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে কাঠগড়ায় তুলে জেডিইউ তাদের মোদী বিরোধিতার কারণ স্পষ্ট করে দিয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক কে সি ত্যাগীর প্রশ্ন, “গুজরাত দাঙ্গার সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদী। যোগ্য প্রশাসক হলে কেন দাঙ্গা মোকাবিলায় তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ?”
মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বিজেপি। জেডিইউয়ের আশঙ্কা, নীতীশের আপত্তির কথা মাথায় রেখে বিজেপি সরাসরি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা না করেই নির্বাচনে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির যুক্তি হবে, দল সরকার গড়ার মতো আসন পেলে শরিকদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু জেডিইউ মনে করছে, বিজেপি যতই গোটা বিষয়টিকে গণতান্ত্রিক মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা করুক, মোদী ছাড়া অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী করা তাদের পক্ষেও কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের কাছে দায়বদ্ধতার প্রশ্নে আখেরে মুখ পুড়বে জেডিইউয়েরই।
বিজেপি যদি ভোটের আগে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে না-ও ধরে, তাতেও জেডিইউ খুব স্বস্তিতে থাকবে না। কেন না বিজেপির কোনও ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী না থাকায় প্রচ্ছন্ন ভাবে দলের মুখ হবেন মোদীই। সে ক্ষেত্রে বিহারে সংখ্যালঘু সমর্থন পাওয়ার প্রশ্নে ফায়দা তুলবেন লালুপ্রসাদ।
জেডিইউ-এর এক নেতার কথায়, “তখন মোদী জুজু দেখিয়ে বিহারের সংখ্যালঘুদের সমর্থন চাইবেন লালু। এনডিএতে থেকেও জেডিইউ একক চেষ্টায় গত আট বছর ধরে যে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে পেরেছে, তা এক ধাক্কায় মুছে যাবে। এর প্রভাব পড়বে ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও।”
ফলে আসন্ন লোকসভা ভোটে মোদী বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হোন বা না হোন, তাদের সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়লে আখেরে জেডিইউ-ই বিপাকে পড়বে বলে মনে করছেন নীতীশরা। তাই দলের একটি বড় অংশ ধীরে ধীরে বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে চাইছেন।
সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই আজ কর্মসমিতির বৈঠকে কার্যত বিজেপিকেই আক্রমণ করেছেন জেডিইউয়ের বিভিন্ন রাজ্যের সভাপতিরা। বিজেপির ‘বড় দাদা’ সুলভ আচরণের কড়া সমালোচনা করে কে সি ত্যাগী বলেন, “মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান-সহ অন্যান্য রাজ্যে বিজেপি আমাদের সঙ্গে জোট করতে রাজি নয়। বিহারে আমরা শক্তিশালী বলে তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। কিন্তু এ ভাবে জোট ধর্ম পালন করা যায় না।” যা শুনে অনেকেই মনে করছেন, এ হল জেডিইউ-বিজেপি ভাঙনের প্রথম ধাপ।
কিন্তু সত্যিই কি বিজেপির সঙ্গ ছাড়লে লাভ হবে নীতীশের?
তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করবেন?
অনেকেই মনে করছেন, তেমনটা ভাবার কোনও কারণ এখনই নেই। এ কথা ঠিক, কংগ্রেস নীতীশকে পাশে পেতে কেন্দ্রীয় সাহায্যের প্রশ্নে সুর নরম করার ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু লোহিয়াপন্থী তথা সমাজবাদী হিসেবে রাজনীতিতে পরিচিত নীতীশের পক্ষে কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়াটা যথেষ্ট সমস্যার। কংগ্রেস বিরোধী দল হিসাবে জন্ম নেওয়া জেডিইউ ভবিষ্যতে সনিয়া-রাহুলের সমর্থন নিলে দলের নীতি নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে। দলের ভিত্তি নড়ে যাবে। সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগে বেশ ফাঁপরেই নীতীশ।
আগামিকাল দলের পরিষদীয় বৈঠকে সমাপ্তি ভাষণ দেবেন নীতীশ। তাঁর দল কী করবে, সে ইঙ্গিত তখনই দিতে পারেন নীতীশ।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.