প্রেসিডেন্সি-কাণ্ড
অভিযুক্ত দুই নেতা অধরা
কেন এখনও, উঠছে প্রশ্ন

কার্টুন-কাণ্ডে থানায় অভিযোগ জমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় তৃণমূলের এক কাউন্সিলর এবং দলের ছাত্র সংগঠনের এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ লিপিবদ্ধ হলেও লালবাজার এখনও তাঁদের গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে না-পারায় প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তৃণমূলের স্থানীয় কাউন্সিলর পার্থ বসু এবং দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি’র নেতা তমোঘ্ন ঘোষের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্সির ছাত্র দেবর্ষি চক্রবর্তীর দায়ের করা ওই অভিযোগটিকে ভাঙচুরের মূল অভিযোগের সঙ্গে জুড়ে রবিবার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
বুধবার ঘটনার পরে ভাঙচুরের মূল অভিযোগটি জোড়াসাঁকো থানায় দায়ের করেছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্ত। শুক্রবার রাতে দেবর্ষি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাঁকে মারধরের ঘটনায় যুক্তদের মধ্যে ছিলেন তমোঘ্নবাবু ও পার্থবাবু। পুলিশ জানিয়েছে দেবর্ষির অভিযোগটিকে আগের এফআইআরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হলেও তদন্তকারীরা অভিযুক্ত ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা দূরে থাক, এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠতে পারেননি। কিন্তু প্রেসিডেন্সিতে ভাঙচুরের ঘটনায় দল বা রং না-দেখে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর এবং টিএমসিপি নেতাকে পুলিশ কেন এখনও ধরল না?
এ দিন লালবাজারের এক কর্তার ব্যাখ্যা: “কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়লেই যে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে, এমন কথা আইনে বলা নেই। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের যৌক্তিকতা কিছুটা প্রমাণিত হলেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।” যদিও অম্বিকেশবাবুর ক্ষেত্রে পুলিশ এই যুক্তির ধার ধারেনি বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তেরা তৃণমূলের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলেই কি ‘ছাড়’ পাচ্ছেন?
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বক্তব্য, “এ ব্যাপারে যা বলার, পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলবেন।” এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের সেই মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “প্রশাসনের তরফে কাউকে আড়াল করার প্রশ্ন ওঠে না। মুখ্যমন্ত্রীর পরিষ্কার নির্দেশ, যাঁরা প্রেসিডেন্সিতে হামলায় জড়িত, রং না-দেখে তাঁদের গ্রেফতার করতে হবে। এখনও সে কথাই বলছি। কোথাও গাফিলতি থেকে থাকলে তদন্তে সেটাও দেখা হবে।”
ঘটনা হল, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বার বার বলে আসছেন, প্রেসিডেন্সিতে ভাঙচুরে তাঁদের দলের কেউ যুক্ত নন। যদিও পুলিশের দাবি: ধৃত পাঁচ জনকে জেরা করে উল্টো তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে। লালবাজারের এক কর্তা বলছেন, “ধৃতেরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা তমোঘ্ন ঘোষের ডাকেই তাঁরা সে দিন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন।” পুলিশের দাবি: ধৃতদের বয়ান ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী ভাঙচুরের সময়ে টিএমসিপি-র সাধারণ সম্পাদক তথাগত সাহা প্রেসিডেন্সি চত্বরে উপস্থিত ছিলেন। দেবর্ষির অভিযোগে অবশ্য তথাগতবাবুর নাম নেই।
তবে তমোঘ্নবাবু বা পার্থবাবু তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন কি না, তা নিয়ে এখনও পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। কেউ ভিডিও বা মোবাইলে ঘটনার ছবি তুলে থাকলে তদন্তের স্বার্থে তা চেয়ে আবেদনও করেছে পুলিশ। “ঘটনার দিন কারা প্রেসিডেন্সির ভিতরে ছিলেন, আর কারা বাইরে ছিলেন, তা নিয়ে ধন্দ এখনও কাটেনি। এই বিষয়টাই তদন্তে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে।” মন্তব্য লালবাজারের এক অফিসারের। উল্লেখ্য, কাউন্সিলর পার্থবাবু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আগেই অস্বীকার করেছেন। তমোঘ্নবাবু এ দিন জানিয়েছেন, তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। আর তথাগতবাবু সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে গিয়েছেন।
ইতিমধ্যে শনিবার প্রেসিডেন্সির দারোয়ান পাপ্পু সিংহকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে জোড়াসাঁকো থানায় তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন তদন্তকারীরা। কী বলেছেন পাপ্পু?
পুলিশের দাবি: পাপ্পু বয়ানে জানিয়েছেন যে, ঘটনার দিন দু’দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এসেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। প্রথম বার টিএমসিপি’র সদস্য-সমর্থকেরা মূল গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। খানিক পরে তাঁরা চলে গিয়েও ফিরে আসেন। পুলিশকে পাপ্পু জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফায় উত্তেজিত তৃণমূল সমর্থকেরা মিনিট দশেক গেট ধরে টানাটানি করেন। তাতে গেটের তালা ভেঙে যায়। পাপ্পুর দাবি: এর পরেই বিক্ষোভকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালান। যদিও হাঙ্গামাকারীদের কাউকে তিনি চেনেন না। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ ক’জন বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীও রয়েছেন। তাঁদের কারা কারা ঘটনার দিন ডিউটিতে ছিলেন, পুলিশ সেই তালিকা বানিয়েছে। ওঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে লালবাজারের খবর।
ইতিমধ্যে আগামী বুধবার বৈঠকে বসছে প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদ। ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে প্রেসিডেন্সির উপাচার্য এবং অন্য অধ্যাপকদেরও। প্রাক্তনী সংসদের সহ-সভাপতি জয়ন্ত মিত্র জানান, প্রাথমিক ভাবে তাঁরা চান, কলেজ স্ট্রিটকে জমায়েত ও মিছিল-মুক্ত করতে। এই বিষয়টি নিয়ে বুধবার প্রাক্তনী সংসদের বৈঠকে আলোচনা হবে। সেখানে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হলে বিষয়টি প্রস্তাব আকারে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে বলে জয়ন্তবাবু জানিয়েছেন।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.