বৃষ্টির বিশেষ দেখা নেই। তার উপরে দিনের বেশিরভাগ সময়েই বিদ্যুতের অল্প ভোল্টেজের জন্য চলছে না পাম্প। ফলে, বোরো চাষে পর্যাপ্ত জল মিলছে না। আর সে জন্য ধান গাছে ঝলসা রোগ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে চাষিদের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছে কৃষি দফতর। চাষিদের দাবি, ধান গাছে ইতিমধ্যেই হলুদ আভা দেখা দিয়েছে।
কাটোয়া কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মরসুমে ১৮-২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কেতুগ্রাম ১ ও মঙ্গলকোট ব্লকের অনেক জমিতে জলের অভাবে ধান শুকিয়ে যাচ্ছে বলে চাষিরা দাবি করেছেন। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টণ সংস্থা সূত্রে খবর, ওই দু’টি ব্লক আর্সেনিক প্রবণ হওয়ায় নতুন করে সাবমার্সিবল পাম্পের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। যেখানে পাম্প রয়েছে, অল্প ভোল্টেজের কারণে সেখানেও জল তুলে চাষের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ চাষিদের।
কেতুগ্রাম ১ ব্লকের নানা জায়গায় পাচুন্দি সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই কেতুগ্রাম ১ ব্লকের রাজুর, মাসুন্দি, কান্দরা-সহ বিভিন্ন এলাকা কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা সেন্টু মাঝি, সন্টু শেখরা জানান, জলের অভাবে ধান হলুদ হয়ে যাচ্ছে। মাসুন্দির গরণ দাস, অনুপ মাঝিদের আশঙ্কা, এমনটা চলতে থাকলে ফসল বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যে ওই এলাকার চাষিরা ভোল্টেজ বাড়ানোর দাবিতে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কান্দরা স্টেশন সুপারের কাছে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। |
চাষিরা জানান, ফলনের মুখে ন্যূনতম জলের অভাবে ধানের পুষ্টি হচ্ছে না। অনেক জমিতে ধান কালো হতেও শুরু করেছে। তবে মঙ্গলকোটের চাষি আনন্দ দাস, সনাতন সাহাদের বক্তব্য, “যে এলাকায় গভীর নলকূপ রয়েছে সেখানে জলের অভাবে নেই। ধান গাছও ঠিক রয়েছে। সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে যেখানে চাষ হচ্ছে সেখানে ধান গাছ ঝলসে যাচ্ছে।” যদিও ঝলসা রোগে কোনও ধান গাছ আক্রান্ত হয়েছে, এখনই এ কথা মানতে চাইছে না মহকুমা কৃষি দফতর। কাটোয়া কৃষি দফতরের আধিকারিক (প্রশাসন) রবিউল হক স্বীকার করেন, “এ রকম চলতে থাকলে ঝলসা রোগ দেখা দিতে পারে।”
এই রোগের হাত থেকে ধান গাছ বাঁচাতে কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে কৃষি দফতরের তরফে। বলা হয়েছে, ধান গাছের গোড়ার জল কমিয়ে ফেলুন। প্রতি বিঘায় ৬ কিলোগ্রাম হারে ‘মিউরেট থব পটাশ’ মাটিতে মেশানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর যে সব এলাকায় ধান গাছে ঝলসা রোগ হয়েছে তার প্রতিকারের জন্য কারপ্রোপামিড (প্রতি লিটার জলে এক গ্রাম) বা ট্রাইমাইক্লোজেল (প্রতি লিটার জলে আধ গ্রাম) অথবা দু’মিলিলিটার করে হেক্সাকোনাজল প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করার কথা বলছে কৃষি দফতর। |