বন্ড-থ্রিলারে বাগানে অবনমন মুক্তির আনন্দ

মোহনবাগান ৩ (ওডাফা পেনাল্টি, টোলগে, ডেনসন)
এয়ার ইন্ডিয়া ২ (হেনরি, ব্রাঙ্কো)
যেন ফুটবল থ্রিলার! যা জেমস বন্ডকে মনে করায়!
আই পি এলের শেষ বলে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হওয়াকেও হয়তো পিছনে ফেলতে পারে, কল্যাণী স্টেডিয়ামে শনিবারের মহানাটকীয় অবনমন-বাঁচানোর ম্যাচের শেষ ছয় মিনিট।
টোলগে ওজবে ম্যাচের পর আকাশের দিকে চুমু ছুড়ে দিয়ে বলছেন, “এ রকম আর একটা ম্যাচ যদি খেলতে হয়, তা হলে নিশ্চিত আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।” ওডাফা ওকোলির মন্তব্য, “ফুটবলার জীবনে কখনও এ রকম হার্ট ব্রেকিং ম্যাচ খেলিনি। ঈশ্বর মনে হয় এ রকম উত্তেজনা তৈরি করে আমাদের মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন।”
ছিয়ানব্বই মিনিটের উত্তেজক এপিসোড। যার বাঁকে বাঁকে শুধুই নাটকের অনন্য রসদ। আই লিগের ইতিহাসে ‘ঐতিহাসিক’ ঘটনা ঘটানোর পর মুক্তির আনন্দে যেন অবগাহন করছিলেন সবুজ-মেরুনের ফুটবলার-কর্তা-সদস্য-সমর্থকেরা। দেখে মনে হচ্ছিল চৈত্রের তীব্র দাবদাহের মধ্যেও তাঁদের জমে-থাকা দীর্ঘ উদ্বেগ উড়িয়ে যেন বইতে শুরু করেছে বৈশাখের উতল হাওয়া। বাংলা নববর্ষ শুরুর দু’দিন আগেই। কেউ মাঠে গড়াগড়ি খাচ্ছেন! কেউ মাথায় জল ঢেলে শ্যাম্পেন স্নান করছেন। গ্যালারিতে সবুজ-মেরুন রং-মশাল জ্বলছে। উড়ছে সবুজ আবির। টিম বাস ঘিরে ফুটবলারদের নামে জয়ধ্বনি। দর্শকদের দিকে ছুটে গিয়ে টোলগে-রহিম নবিদের অভিবাদন জানানো। আরে, এ দৃশ্য তো এত দিন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই দেখতে অভ্যস্ত ছিল চোখ। তা বলে অবনমন বাঁচানোর পর! তাও শতবর্ষ পেরোনো এক ক্লাবে। মোহন-কোচ করিম বেঞ্চারিফার যুক্তি, “দশ ম্যাচের পর পয়েন্ট শূন্য। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে টানা দশটা ম্যাচ অপরাজিত থেকে অবনমন বাঁচানো। সালগাওকরে খেতাব জেতার বছরেও এ রকম চাপে পড়িনি।”

গোলের পরে ডেনসন। শনিবার কল্যাণীতে। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য
৯০ মিনিট পর্যন্ত মোহনবাগান এগিয়ে ২-১। ওডাফার নিশ্চিত গোল বাতিল করেছেন রেফারি প্রতাপ সিংহ। কটূক্তি আর উত্তেজনার বারুদে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে গ্যালারি। মোহনবাগানের ইচে আর এয়ার ইন্ডিয়ার গোলকিপার বুবাই সিংহ লাল কার্ড দেখে বাইরে চলে গিয়েছেন অনেক আগেই। দু’দলই খেলছে দশ জনে। চতুর্থ রেফারি ইলেকট্রনিক বোর্ডে ইনজুরি টাইম দেখালেন-- ছয় মিনিট। এবং দু’মিনিটের মধ্যেই ম্যাচ ২-২। ব্রাঙ্কোর গোল শোধ। পুরো স্টেডিয়াম হতভম্ব। দীর্ঘশ্বাসে ভারী। ডান দিক থেকে কিছুটা দৌড়ে গিয়ে বল তুললেন রহিম নবি। বিমানকর্মীদের বক্সে সেটা উড়ে আসার মুখে উড়ন্ত পাখি হলেন এক মালয়ালিডেনসন দেবদাস। তাঁর হেডের ঝাপটায় মোহনবাগানের অবনমন মুক্তি!
নেভিল কার্ডাস স্কোরবোর্ডকে ‘গাধা’ বলেছিলেন! এ দিনের স্কোরলাইন দেখার সুযোগ পেলে হয়তো একইরকম মন্তব্য করতেন। গোলমেশিন ওডাফা বলছিলেন, “ডাবল হ্যাটট্রিক নয়, আমিই তো মনে হয় দশ গোল করতে পারতাম!” হাতের নোটবই জানাচ্ছে, অধিনায়কের মতো হ্যাটট্রিক করতেই পারতেন রহিম নবি এবং টোলগে ওজবে। ঠিকঠাক গোল হলে খেলার ফল হত বাস্কেটবল স্কোরের মতো ১২-৩। অতিমানব হয়ে উঠলেন দু’দলের দুই গোলকিপারমোহনবাগানের শিল্টন পাল আর এয়ার ইন্ডিয়ার বুবাই সিংহ। নিশ্চিত গোল বাঁচালেন যে কত! একটা গোল বাঁচাতে গিয়ে পোস্টে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন শিল্টন। মাথায় বড় চোট অবশ্য লাগেনি।
নৌশাদ মুসার এয়ার ইন্ডিয়া বাঁচার অক্সিজেন পেতে চাইছিল। সে জন্যই পাল্টা আক্রমণের ইচ্ছে নিয়ে দল সাজিয়েছিল তারা। সামনে হেনরিকে রেখে ৪-৫-১ ফর্মেশনে। পাল্টা করিমের স্ট্র্যাটেজি ছিল চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক। ৪-৩-৩। ওডাফা-টোলগের সঙ্গে অ্যাটাকিং থার্ডে মাঝেমধ্যেই ছিটকে বেরোচ্ছিলেন রহিম নবি। পাণ্ডুয়ার ফুটবলারটি দম-দেওয়া পুতুলের মতো নিজের কাজ করছিলেন। বিমানকর্মীদের হাল তখন আকাশে সিগ্যন্যাল না-পাওয়া পাইলটের মতো। ওডাফা ধরতে গেলে টোলগে, টোলগে ধরতে গেলে নবি, কাকে ছেড়ে কাকে ধরবেন গগনদীপ-প্রেমকুমাররা? এই গোলকধাঁধায় পড়েই স্তব্ধ হয়ে গেল নৌসাদের দলের সুর। ঠেলায় পড়ে টোলগে আর ওডাফা এখন উত্তম-সুচিত্রা জুটির মতোই কার্যকর। টোলগে পেনাল্টি এনে দিলে ওডাফা মারছেন। পাল্টা টোলগেকে গোলের বল বাড়িয়ে দিচ্ছেন ওডাফা। লক্ষ্য একটাইমোহনবাগানকে সুপারহিট করে তোলা।
শূন্য থেকে বাগান এখন ২২। লিগ টেবিলে শেষ বিন্দু থেকে চার ধাপ এগিয়ে ১১ নম্বরে পালতোলা নৌকো। করিম ব্রিগেডের দীর্ঘ ‘অবনমন এপিসোড’ এবং তা থেকে মুক্তি ভারতীয় ফুটবলে সত্যিই এক অমর প্রাপ্তি!

মোহনবাগান: শিল্টন, নির্মল, ইচে, আইবর, বিশ্বজিৎ, ডেনসন, স্নেহাশিস (মণীশ ভার্গব), মণীশ মৈথানি (সাবিথ), টোলগে (কুইনটন), ওডাফা।

রবিবার আই লিগে

ইস্টবেঙ্গল : স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া (যুবভারতী, ৩-৩০)




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.